সমস্যাঃ স্যার সালাম নিবেন। আমার বড়ো ভাইকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। ওর বয়স ৩৮ বছর। ২০১৩ সাল থেকে তার সমস্যার শুরু। হঠাৎ সে একদিন কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। আমরা তার কোনো খোঁজ পাই নাই। প্রায় এক বছর পর সে ফিরে এসে বলে সে এতদিন ঢাকায় ছিল, আর একটা মিলে চাকরি করেছে। তেমন আর কিছু বলে নাই। কয়েকমাস ভালোই ছিল কিন্তু আবার সে কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে যায়। আবার বেশ কিছুদিন পর ফিরে আসে এবং জিজ্ঞাসা করলে বলে সে নাকি তার এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিল। পথে কিছু লোক তাকে ধরে নিয়ে যায় আর এতদিন তারা আমার ভাইকে আটকে রেখেছিল এবং সে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছে। তার বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে এমনটা ভেবে পরিবার থেকে তার বিয়ে দেয়া হয় এবং একটা ছেলেও হয়। কিন্তু আবার সে কোথায় যেন চলে যায়। প্রায় ৬/৭ মাস পরে ফিরে এসে জানায় সে এতদিন একটা হাসপাতালে ভর্তি ছিল, কারা যেন তার কিডনি চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। এখন সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। এভাবে কয়েকবার সে কাউকে কিছু না বলেই কোথায় চলে যায়; আবার অনেকদিন পর ফিরে আসে। গত এক বছর ধরে তার আচরণেও অনেক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। সে একা একা কথা বলে, ঘুমের মধ্যেও আবোল-তাবোল কী সব কথা বলে। বাড়ির মেয়েরা মাথায় কাপড় না দিলে গালিগালাজ করে। অনেক সময় মারতে চেষ্টা করে। কারো কথা শোনে না। এজন্য তার স্ত্রীও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তার আচরণ দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর অনেক মিথ্যা কথাও বলে। আমাদের পরিবারে কেউ তো পাগল ছিল না। তার এই সমস্যা কেন হলো? এই সমস্যাটা কি কোনো কঠিন রোগ? এর কি সমাধান আছে? স্যার প্লিজ পরামর্শ দিয়ে উপকার করবেন। -রাইহান, গাজিপুর।
ব্রি. জে. ডা. আজিজুল ইসলাম: আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। সাইকিয়াট্রিতে যেকোনো রোগ নির্ণয় একটি ছোটো ইতিহাস থেকে সম্ভব হয় না। আসলে এর জন্য প্রয়োজন একটি সম্পূর্ণ ইতিহাস, নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে তথ্য নেয়া এবং রোগীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ। এমনকি একজন রোগীর চেহারা এবং তার ব্যবহার দেখেও অনেক সময় একটি রোগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়। যা হোক আপনার দেয়া এই সীমিত তথ্য থেকে আমি এই রোগটা সম্বন্ধে মন্তব্য করার চেষ্টা করলাম। আপনার চিঠির প্রথম অংশ পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে, আপনার ভাই ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডার নামক রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েকটি লাইন পড়ে মনে হলো এটি সিজোফ্রেনিয়া। আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে আপনার উদ্বেগের জন্য। আসলে এই রোগটা পরিবারের কারো না থাকলেও হতে পারে। নিশ্চিতভাবে এটি একটি গুরুতর ব্যাধি এবং এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন। দয়া করে আপনার ভাইকে নিকটবর্তী কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা কোনো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। তার ডায়াগনোসিসের জন্য, চিকিৎসার জন্য এবং পরবর্তী ফলোআপের জন্য।
পরামর্শ দিয়েছেন
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আজিজুল ইসলাম
অধ্যক্ষ, ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৮ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে