মনোরোগের চিকিৎসায় প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধাতির পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মনোরোগের চিকিৎসায় এদেশে এনেছে “ট্রান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (টিএমএস)” নামক এক প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটির ব্যবহার এবং কার্যকারীতা জানতে মনেরখবর.কম প্রতিনিধি কথা বলেছেন কলেজটির মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. সাদিয়া তারান্নুম-এর সাথে।
ট্রান্সক্রেনিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন কি?
এটি একটি চুম্বকীয় পদ্ধতি যা দিয়ে মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে উজ্জীবিত করা হয়।
কোন ধরনের মানসিক রোগে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়?
বিষণ্ণতা, ক্রনিক সিজোফ্রেনিয়া, মাইগ্রেন, নিউরোপ্যাথিক পেইন, টিনিটাস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে টিএমএস প্রযুক্তি অধিক কার্যকর।
টিএমএস কি আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদিত?
হ্যাঁ, মাইগ্রেনের চিকিৎসায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), বিষণ্ণতার চিকিৎসায় দ্যা রয়েল অস্ট্রেলিয়া এন্ড নিউজিল্যান্ড কলেজ অব ফিজিশিয়ানস কর্তৃক স্বীকৃত। এছাড়াও ২০১৫ এর ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ এন্ড ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্ট (এনআইসিই) বিষণ্ণতার চিকিৎসায় টিএমএস-কে স্বীকৃতি দেয়।
এ চিকিৎসায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আছে কি?
তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা, হালকা খিঁচুনি অথবা কিছু সময়ের জন্য স্মৃতিভ্রম হতে পারে।
চিকিৎসকগণ কেন এই থেরাপির জন্য রোগীদের পরামর্শ দিবেন?
প্রথমত, যেসব ক্ষেত্রে ঔষুধ সেভাবে কাজ করে না বা করলেও অনেক ধীরে করে সেক্ষেত্রে টিএমএস অনেক দ্রুত কাজ করে। দ্বিতীয়ত, ঔষুধের যেসব দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে টিএমএসের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাছাড়া ওষুধের তুলনায় টিএমএস থেরাপি দ্রুত কাজ করে এবং দ্রুত রোগ সারাতে সহায়তা করে। এবং নতুন করে রোগটি ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
কতদিন ধরে এই থেরাপিটি দিতে হয়?
রোগের অবস্থা বুঝে এটি নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রথমে সপ্তাহে ১ থেকে ৪ দিন করে দুই সপ্তাহ থেরাপি দেয়া হয়, তারপর রোগীর অবস্থা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শমতো পরবর্তী সেশনগুলো নির্ধারণ করা হয়।
টিএমএস থেরাপির সময় ঔষুধ খাওয়া যাবে কি?
এটি ডাক্তারের পরামর্শের উপর নির্ভর করবে। অনেক সময় ঔষুধ এবং থেরাপি একসাথে চলে আবার কখনও শুধু থেরাপি।
কাদের জন্য এই চিকিৎসা প্রযোজ্য নয়?
সাধারণত ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া মৃগী রোগ, হার্ট বা ফুসফুসের রোগ, পেসমেকার বা অন্যকোনো ইমপ্ল্যান্ট আছে এমন কেউ, গুরুতর শারীরিক রোগ, দীর্ঘদিন যাবত মানসিক রোগের ঔষুধ খাচ্ছেন এমন কেউ, গর্ভবতী অথবা বুকের দুধ দিচ্ছেন এমন মায়েদের ক্ষেত্রে টিএমএস থেরাপি প্রযোজ্য হবে না।
কাদের ক্ষেত্রে টিএমএস সন্তোষজনক ফলাফল আনবে না?
কেউ রোগের ইতিহাস ঠিকমতো বলতে ব্যর্থ হলে, ডাক্তারের পরামর্শমতো কি কি ওষুধ খাচ্ছে তা বলতে ব্যর্থ হলে, গুরুতর শারীরিক রোগে ভুগলে এবং থেরাপি চলাকালীন সময়ের ডাক্তারের নির্দেশিকা পুরোপুরি না মেনে চললে এই থেরাপি সন্তোষজনক ফলাফল আনবে না।
থেরাপি নিতে রোগীকে কোথায় আসতে হবে?
এই থেরাপি আশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি শনি, রবি, সোম ও মঙ্গলবার মনোরোগবিদ্যা বহির্বিভাগে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেয়া হয়।
প্রতি সেশনে কতক্ষণ ধরে থেরাপি দিতে হয়?
সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট চলে প্রতি সেশন।
এই থেরাপি নিতে কেমন খরচ হবে?
প্রতি সেশন খরচ হবে ৫০০০ টাকা।
আর কি কি ক্ষেত্রে টিএমএস ভালো ফল আনতে পারে?
যারা দীর্ঘদিন ধরে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করছে টিএমএস তাদের নেশা আসক্তি অনেক কমিয়ে দেয়। তাছাড়া বাইরের দেশে অটিজমে টিএমএসের ব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে অটিজমে যে আচরণগত পরিবর্তন হয় টিএমএস তা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এবং এক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচের কাউকেও থেরাপি দেয়া যাবে।
প্রযুক্তিটির সাথে মনেখবর পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ মনেরখবর পাঠকদেরকেও।
লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।