সম্প্রতি গবেষনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে প্রতি একশো জনে ১৭ জন কোন না কোন মানসিক রোগে ভুগছেন। এ সংখ্যা আমেরিকাতে প্রতি একশো জনে ১৮ জন। অর্থাৎ সহজে বলতে গেলে প্রতি পরিবারে একজন মানসিক রোগী আছে।
মানসিক রোগের চিকিৎসায় আমেরিকায় প্রতি লাখ জনসংখ্যায় সাইকিয়াট্রিস্ট রয়েছেন ১৫ জন বা আরো বেশি। আর বাংলাদেশে এ পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য রকম কম। ১ কোটি জনসংখ্যায় সাইকিয়াট্রিস্ট মাত্র ১২ থেকে ১৫ জন।
আরো ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশের মানসিক রোগীদের শতকরা ৯২ শতাংশই চিকিৎসা নেন না বা সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরনাপন্ন হননা। যারাওবা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন অপচিকিৎসার শিকার হয়ে, দৈহিক, মানসিক, আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে আসেন।
বাংলাদেশের মানসিক রোগীরা তাদের মানসিক রোগ নিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হন প্রথমত বিভিন্ন ভন্ড পীর, সাধু-সন্যাসী, কবিরাজ, পল্লী চিকিৎসক, ভবিষ্যৎগণক -বাবা এবং নন-সাইকিয়াট্রিস্ট চিকিৎসকদের কাছে।
অজ্ঞতায় অবহেলায় প্রতিনিয়ত নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মানসিক মনোরোগীরা। অনেক সময় প্রাণনাশ ও হচ্ছে অনেকের। ভন্ড কবিরাজ সাধুরা রোগী কে ভুত তাড়ানোর নামে শিকল দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে আহত করে। অনেক সময় পানিতে চুবিয়ে রাখা, গরম লোহা বা সুই দিয়ে শেঁক দেয়া নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এমন কি মানসিক রোগীরা মাঝেমধ্যে তান্ত্রিক ভন্ডদের হাতে ধর্ষিত হবার ঘটনাও কথাও শোনা যায়। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। এমনকি মানসিক বা মনোরোগ নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা হয়। তাদের ‘পাগল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অজ্ঞতা অসচেতনতা আর লজ্জায় আত্মীয় আর তাদের রোগীদের নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট দের কাছে আসেন না।
মানসিক রোগের ধরন? এনজাইটি ডিসঅর্ডারস, ডিপ্রেশন, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্ত, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, এবং সিজোফ্রেনিয়া এ কয়টি মানসিক রোগই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মানসিক রোগের এ ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া উচিত। নাহলে এক সময় বাংলাদেশের মানসিক রোগের ভয়াবহতার প্রভাব সর্বক্ষেত্রে পড়বে।
শেষ করি ঢাকার পরিসংখ্যান দিয়ে। ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে সবচেয়ে জনবহুল এবং অস্বাস্থ্যকর রাজধানী। বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। মানসিক রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখের উপরে। ইউরোপ আমেরিকায় প্রতি ১ লাখ সাধারণ অধিবাসীর জন্যে সাইকিয়াট্রিস্ট গড়ে ২০ থেকে ৫০ জন কাজ করেন। ঢাকার ১ কোটি ৮০ লাখ পপুলেশন, নয় খোদ ৩০ লাখ সাইকিয়াট্রিক পেশেন্টের চিকিৎসা সেবায় সাইকিয়াট্রিস্ট কতজন? জানলে অবাক হবেন, হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। অসেচতনতার সুযোগ নিয়ে বাকি সেবা দিচ্ছেন ভন্ড কবিরাজ, গণক বাবা, জোত্যিষী বাবা, ভন্ড পীর, পল্লী চিকিৎসক এবং নন সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তার..! প্রয়োজন সচেতনতার।