বয়ঃসন্ধিকালে ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায়

0
65
বয়ঃসন্ধিকালে ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায়

ডা. ফয়সাল রাহাত
রেসিডেন্স ফেইস বি, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

ডিপ্রেশন শব্দটি ইদানীং খুব বেশি শোনা গেলেও এটি মানুষের চিরন্তনী এক রোগ। যে রোগে কারণ বা অকারণে মানুষের মন বিষণ্ণ থাকে কিংবা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে ইচ্ছে করে না।

বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের খাওয়া ও ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তিত হতে পারে। তাছাড়া দুর্বলতা, মনোযোগ কমে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা ও আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয়টি দেখা যেতে পারে তা হলো-আত্মহত্যার প্রবণতা। চিরন্তনী এ রোগের কারণ কিংবা অনুঘটক নিয়ে গবেষণা কম হয়নি! অসংখ্য গবেষণার পর ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে যে সকল বিষয়কে দায়ী করা হয়, তাদেরকে মোটাদাগে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়: সেগুলো হলো জৈবিক, মনস্তাত্তিক ও সামাজিক কারণ। সমাজের ইউনিট হচ্ছে পরিবার।

বয়ঃসন্ধিকালে ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে কতটা ডিপ্রেশন প্রতিরোধ করে ৩। পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্রে একটি Prospective Cohort Study পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে ৭ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮৯৫২ জন কিশোর ও ৯২৩৩ জন কিশোরীকে অন্তর্ভুক্ত করে শুরু হওয়া এ গবেষণা ২০১৭ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে। এ সময়ের মধ্যে স্টাডিতে অন্তর্ভুক্ত নারী- পুরুষদেরকে পাঁচবার ফলোআপ করে তাদের ডিপ্রেশন নির্ণয় করতে Center for Epidemiologic Studies- Depression (CES-D) নামক ছেলটি প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায় বয়ঃসন্ধিকালে যাদের ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক ছিল, তাদের চেয়ে ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক কম থাকা মানুষের ভবিষ্যতে ডিপ্রেশনে ভোগার হার বেশি এবং এ ক্ষেত্রে ২০ বছর বয়সি পুরুষদের বেলায় CES-D score 0.40 পয়েন্ট বেশি এবং নারীদের বেলায় ০.৬১ পয়েন্ট বেশি। মধ্যবয়সে, অর্থাৎ ৪০ বছরের আশেপাশেও একই ধরনের ফলাফল দেখা যায়। এক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে ইতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক কম থাকা নারীদের CES-D মোর 0.78 বেশি এবং পুরুষদের স্কোর ০.২১ বেশি। উল্লেখ্য, CES-D স্কোরিং অনুসারে ১৬ বা তার কম স্কোর হলে মৃদু ডিপ্রেশন বা ডিপ্রেশন নেই ধরা হয়, ১৭-২৩ হলে মাঝারি ডিপ্রেশন এবং ২৪ বা তার বেশি হলে তীব্র ডিপ্রেশন আছে বলে ধরা হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকালে ইতিবাচক পারিবারিক বন্ধন না থাকলে পরবর্তী জীবনে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশন হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই একজন মানুষের বয়ঃসন্ধিকাল চলাকালীন যদি পারিবারিক সম্পর্ক ইতিবাচক রাখা সম্ভব হয়, তবে পরবর্তী জীবনে তার ডিপ্রেশনে ভোগার ঝুঁকিও কম থাকবে।

Previous articleদাম্পত্য সম্পর্ক ঠিক না থাকলে জীবনে চরম মূল্য দিতে হয়
Next articleতীব্র মানসিক চাপ ধূমপানের তাগিদ তৈরি করে, যেভাবে ত্যাগ করবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here