ফেসবুক-টুইটারে শিশু সন্তানের ছবি শেয়ারের ভাল-মন্দ দিক

0
44

বিশ্বজুড়েই বাবা-মায়েরা আজকাল গর্বের সঙ্গে তাদের সন্তানদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। বিভিন্ন উপলক্ষ থেকে শুরু করে কোনো কারণ ছাড়াই, শুধু ভালো লাগা আর ভালোবাসা থেকে ছবিগুলো অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন তারা।
এখন হয়তো ব্যাপারটাকে অত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। কারণ এর আগে কোনো প্রজন্মেরই পুরো শৈশব এভাবে পাবলিক রেকর্ডের অংশ হয়ে থাকেনি। কিন্তু একেবারে প্রথম পর্যায়ে যে শিশুদের ছবি অনলাইনে প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল তারা এখন বেশ বড় হয়েছে। আর তারা এখন নিজেদের ছোটবেলার সেই ‘অতি উন্মোচন’ পছন্দ করছে না।
মনোবিদ ও সামাজিক মাধ্যম বিশেষজ্ঞ ড. আর্থার ক্যাসিডি মনে করেন, অভিভাবকরা বুঝতে পারছেন না, অনলাইনে তাদের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিও সন্তানদের জন্য এমন একটি পরিচয় তৈরি করছে যা হয়তো সন্তানদের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে।
নমিনেট নামের একটি ডোমেইন নেম কোম্পানির করা সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে একজন বাবা বা মা সন্তানের ৫ বছরের জন্মদিন পর্যন্ত গড়ে শিশুটির ১ হাজার ৪৯৮টি ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন।
এই শিশুদের মধ্যে যারা বড় হয়ে গেছে তারা অনেক ক্ষেত্রেই ডিজিটাল পরিসরে তাদের পুরো শৈশব সবার সামনে খুলে রাখাটা মেনে নিতে পারছে না। কেননা ছবিগুলো এমন সময় অনলাইনে এসেছে যখন হয়তো তাদের সে ব্যাপারে মত দেয়া বা না দেয়ার মতো বয়সও হয়নি।
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেলের অধিবাসী ১৬ বছর বয়সী লুসি জানান, ১২ বা ১৩ বছর বয়সে তিনি প্রথম বুঝতে পারেন, সেই সাত বছর বয়স থেকে থেকে তার বাবা ভালোবেসে লুসির এমন কিছু ছবি ফেসবুকে দিয়ে আসছেন যেগুলো তার জন্য বেশ বিব্রতকর। “ওই সময় আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো, তুমি কি এই ছবিগুলো সবাইকে দেখতে দিতে চাও, আমি নিশ্চয়ই মানা করতাম,” বলেন তিনি।
তবে শুধু যে না জানিয়ে বা শিশুর মত না নিয়ে তাদের কিছু সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয় তা না। ছোটবেলায় নিজের ছবি বাবা-মা অনলাইনে দিচ্ছে – ব্যাপারটা মজার হলেও বড় হয়ে সেগুলো অতটা ভালো না-ও লাগতে পারে।
২০ বছর বয়সী ডানা হারলি জানান, ১১ বছর বয়সে তার বাবা-মা তার ছবি ফেসবুকে দিলে তিনি খুবই খুশি হতেন। “তখন বিষয়টা খুব মজার ছিল…আমার ওই মনোযোগটা ভালো লাগত। কিন্তু এখন সেগুলো অস্বস্তিকর। কারণ এখন ছবিগুলো দেখলেই আমার মনে হয়, এগুলো যে কেউ যখন তখন দেখত।”
এ কারণে ডানা ছোটবেলার সব ছবি থেকে নিজের নামের ট্যাগ মুছে দিয়েছেন। যেন সাইটে ছবি থাকলেও তার প্রোফাইলে সেগুলো দেখা না যায়।
ড. ক্যাসিডি বলেন, “বাবা-মায়েরা মনে করেন, আমাদের সন্তানের অনলাইন পরিচয় নির্ধারণ করব আমরা। কিন্তু সন্তানরা বিশ্বাস করে, অনলাইনে তাদের পরিচয় তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ শুধু তাদের হাতেই থাকা উচিত।” এ কারণে অনেক ছেলেমেয়েই বাবামায়ের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এখন যুক্ত থাকতে চাচ্ছে না।

Previous articleপরিচিত কেউ আত্মহত্যা করেছে কি?
Next articleনাতি-নাতনীর যত্ন নিলে বাঁচবেন বেশি দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here