সমস্যাঃ আসসালামু আলাইকুম। আমি অন্তর (ছদ্মনাম)। আমার বয়স ২৩, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (বিবাহিত)। আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। আমি সব কিছু অপেক্ষাকৃত দ্রুত ভুলে যাচ্ছি। খুব পরিচিতদের নামও কয়েকদিন দেখা না হলেই ভুলে যাচ্ছি, পরিচিত কাউকে দেখলে হঠাৎ করে মনে পড়ে না, জানাশোনা কারো নাম নিয়েও কনফিউশনে ভুগি (যেমন হৃদয় নাকি রিয়াদ)। ভালো করে পরিচিত হওয়ার ১ সপ্তাহ পর যদি অন্য কোথাও দেখি কনফিউশনে পড়ে যাই (চেহারা কিছুটা মনে পড়ে কিন্তু কোথায় দেখেছি, জুনিয়র নাকি সিনিয়র মনে করতে পারি না)। একসঙ্গে চার পাঁচজনের সাথে পরিচিত হলে কারো নামই মনে থাকে না। বারবার পরিচিত হয়েও ১৫-২০ দিন পরে আবার ভুলে যাই। একটু দূর থেকে কাউকে দেখলে সে যত দ্রুত আমাকে চিনতে পারে আমি তত দ্রুত চিনতে পারিনা। আমার মনোযোগে সমস্যা হচ্ছে, এক বিষয়ে বেশিক্ষণ মনোযোগ থাকে না। সমস্যাটি এক দেড় বছর ধরে হচ্ছে। আগে স্বাভাবিক মনে হতো কিন্তু ইদানীং খুব প্রকট আকার ধারণ করেছে। পড়ালেখার ব্যাপারেও একই সমস্যা। মাথায় কোনো আঘাত লাগেনি, কোনো স্ট্রেইসও অনুভূত হয়না। কিন্তু তিন বছর আগে এডমিশনের আগে অতিরিক্ত বেশি পড়ার কারণে ১২ দিন অসুস্থ ছিলাম- ঐ ১২ দিন পড়তে বসলেই মাথা গরম হতো, পড়তে পারতাম না। খুব সমস্যায় ভুগছি সমাধান জানাবেন আর ডাক্তার দেখাতে হলে কোন ধরনের চিকিৎসা নেব? জানাবেন প্লিজ
অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানঃ মনে করতে পারনা বা কোন জায়গায় দেখেছ মনে করতে পারনা; এটা এক ধরনের মেমোরি ডিস্টারবেন্স। এ ধরনের মেমোরি ডিস্টারবেন্স সাধারণত যাদের বয়স বেশি তাদেরই হওয়ার কথা। এ বয়সে এ ধরনের সমস্যা সাধারণত হওয়ার কথা না। তবে কখনও কখনও মানুষ যদি টেনশনে থাকে বা তার মধ্যে কোনো কারণে অতিরিক্ত উদ্বেগ বা মানসিক চাপ থাকে তাহলে এরকম হতে পারে, আবার তুমি যে বললে মনোযোগ দিতে পারছ না; এই মনোযোগের অভাবেও এধরনের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত আমরা যে স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়া রোগের কথা বলি সেটা বয়স্কদের হয়ে থাকে। কোনো কারণে এডিক্টেড হলে অল্প বয়সে ডিমেনশিয়া হতে পারে। তোমার স্মৃতিভ্রমের কারণ হতে পারে মনোযোগের অভাব অথবা হয়তো তুমি কোনো কারণে মানসিক চাপে আছ বা অ্যাংজাইটিতে ভুগছ বা তোমার মধ্যে ডিপ্রেশনও থাকতে পারে যা তুমি বলনি। এর ফলে তোমার যে স্মৃতিভ্রম হচ্ছে সেটাকে আমরা বলি সিউডো ডিমেনশিয়া; সিউডো ডিমেনশিয়া হল মানুষের কিছু কিছু মনে থাকে, কিছু কিছু ভুলে যায়। আর ডিমেনশিয়া হলো একেবারে ভুলে যাওয়া। বিভিন্ন কারণে তোমার সমস্যা হতে পারে। পরিবারে কোনো বিষয়ে কোনো মানসিক চাপ আছে কিনা, তুমি বিয়ে করেছ তাই বিবাহিত জীবনে কিংবা যেহেতু তুমি এখনও ছাত্র তাই পড়াশুনাতে চাপ আছে কিনা সেগুলো জানার দরকার ছিল। তুমি জানতে চেয়েছ কোন ধরনের চিকিৎসা নেবে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় তোমার একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে। তিনি যদি মনে করেন তুমি টেনশনে ভুগছ বা তোমার ডিপ্রেশন আছে এবং এর পেছনে কোনো কারণ আছে, কোনো রিলেশনশিপ প্রবলেম আছে তখন সাইকোথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। আর এ মুহূর্তে কোনো নিউরোলজি দেখানোর প্রয়োজন নেই। কারণ অরগানিক কোনো সমস্যায় আমরা নিউরোলজি দেখাতে বলি। যেমন- মাথায় আঘাত লাগার জন্য হেমাটোমা হলে বা ব্রেনের অন্য কোনো সমস্যা হলে। সেক্ষেত্রে অনেক লক্ষণ দেখা যায়। তোমার সেরকম কোনো সমস্যা নেই আর তুমি মাথায়ও কোনো আঘাত পাওনি। তাই তুমি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাও এবং তিনি যে পরামর্শ দেবেন সেভাবে চিকিৎসা নাও। আশা করি উপকার পাবে।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে