কিশোর (ছদ্মনাম) খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কিছুতেই পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। সোনিয়া (ছদ্মনাম) দিন দিন একটু বেশী মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কথায় কথায় বাসায় আসতে চায়। বিয়ে করার জন্যে চাপ দেয়া শুরু করেছে। অথচ কিশোর ১০ বছরের বিবাহিত। জরিন নামের ৮ বছরের ফুটফুটে সুন্দর একটি মেয়েও আছে তার, জরিন ক্লাস থ্রীতে পড়ে। জরিনের মায়ের নাম তানিয়া (ছদ্মনাম), সে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসাবে কাজ করে।
কিশোর আর তানিয়ার বিয়ের আগে ৩ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। পরে দু’জনের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের ২ বছর পর কিশোর-তানিয়ার কোল জুড়ে এলো মেয়ে জরিন। কিশোর আর তানিয়ার সম্পর্ক ভালোই ছিলো। কিশোর কাজ করে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে কিশোরের অধীনে কাজ করে সোনিয়া।
বছর খানেক ধরে কিশোর সোনিয়ার দিকে একটু বেশী নজর দিতে থাকে। সোনিয়াও মনোযোগ দেয় কিশোরের দিকে। এভাবে ধীরে ধীরে দু’জন অনেক কাছাকাছি চলে আসে। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে দু’জনের মধ্যে। এই সম্পর্কটা কিশোর বেশ উপভোগই করছিল। নিজের স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করছে এটা সে একবারও ভাবছিলো না। কিন্তু দিনে দিনে সোনিয়ার চাওয়া অনেক বেড়ে যায়। অফিস শেষে প্রতিদিনই সে কিশোরের সাথে বাইরে যেতে চায়, কিশোরের বাড়ী দেখতে চায়। আর এখন তো রীতিমতো বিয়ে করতে চায় কিশোরকে।
এ অবস্থায় কিশোর খুবই বিপদে পড়েছে। আজকাল প্রায়ই তানিয়া কিশোরকে সন্দেহ করে। কিশোর নানা ভাবে তাকে এড়িয়ে চলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হলে কখনও কখনও তা হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছায়। কিশোর আতঙ্কে থাকে কখন তানিয়া সবকিছু জেনে যাবে।
জরিন কতটুকু বোঝে তা কিশোর ঠিকমতো বোঝে না, তবে এতটুকু বুঝতে পারে যে জরিনের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। সে খুব খিটখিটে হয়ে গেছে, কোন কথা শুনতে চায় না। খাওয়া নিয়েও ঝামেলা করে, পড়তে চায় না একদমই। স্কুলের টিচাররাও পড়া না শিখে আসার অভিযোগ করেছে জরিনের বিরুদ্ধে।
কিশোরের আরেকটা ভয় হলো মা-বাবা ব্যাপারটা জেনে গেলে তাদের সামনে দাঁড়াবে কি করে? ছোট ভাই-বোনকে কি করে মুখ দেখাবে। এসব নিয়ে নিজেকেই দোষ দিতে থাকে কিশোর।
কিশোরের মতো অনেকেই বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাইরে স্বামী-স্ত্রীর সাথে যদি অন্য কোন নারী কিংবা পুরুষের সাথে প্রেমের অথবা শারীরিক সম্পর্ক হয় তখন তাকে পরকীয়া সম্পর্ক বলা হয়। পরকীয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সংসারের বাইরে অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত হুমকির মধ্যে পড়ে। এ ধরনের সম্পর্ক সাধারণত লুকিয়ে বজায় রাখলেও এক পর্যায়ে তা জানাজানি হয়ে যায় এবং পরিবারে চরম অশান্তি নেমে আসে। স্বামী-স্ত্রী’র বিশ্বাস প্রচন্ড ভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। ভালবাসায় ঘাটতি হয়, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং সংসার হয়ে উঠে অসহ্য। এই অবস্থা সংসারকে ভঙ্গুর করে তোলে। এ ধরনের পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার নানা রকম কুফল আছে। এর ফলেঃ
এক- স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়ে।
দুই- সন্তানরা এই অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেদের অনিরাপদ বোধ করে।
তিন- যে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে সে সাধারণত সংসারের প্রতি অমনযোগী হয়ে যায়। ফলে, সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও অসুবিধায় পড়ে।
চার- সামাজিক ভাবে পরিবারটি লজ্জায় পড়ে যায় এবং অপমানিত বোধ করে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার এক পর্যায়ে স্থায়ী ভাবে আলাদা থাকা বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটতে পারে।
বিবাহ বিচ্ছেদ সন্তানদের অত্যন্ত কঠিন পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থায় নিয়ে যায়। তখন তারা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
তাই প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির উচিত নিজেদের মধ্যে ভালবাসার, বিশ্বাসের, নির্ভরশীলতার এমন একটি সম্পর্ক তৈরী করা যা তাদের বৈবাহিক সম্পর্ককে করবে শক্তিশালী। এই শক্তিশালী বন্ধন এমন হবে যা ভেঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটবে না।
ফরিদা আকতার
মনোবিজ্ঞানী
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।