পতাকা বিক্রি করতে ‘ভালো লাগে’

0
44

ওমর শাহেদ
মুখে তার প্রায় সাদা হয়ে যাওয়া চাপ দাড়ি, মাথার চুলগুলোও তাই। পরণে চেক লুঙ্গি, গায়ে সাদা ফুল হাতা শার্ট। মানুষটি তরুণ সঙ্গীর সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করছেন। হাঁটছেন তেজগাঁও শিল্প এলাকার তিব্বতে, ফ্লাইওভারের উল্টো দিকে, একটু আগে। তার ঠিক সামান্য সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম উদ্যোগটি। বয়সে ৪৮-৫২। তার সঙ্গীটি ৩০-৩৫’র মধ্যে হবে। দুজনেই সুখী মানুষের মতো চলছেন। আর এই মানুষটির মুখে আশ্চর্য এক প্রশান্তি। বাতাসে উড়ছে তার হাতের খাটো পতাকা; মাঝারি লাল, সবুজ। সামনে এলেন মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটির ঠিক উল্টো দিকে, বিখ্যাত হক বিস্কুট কম্পানির ভবনের উল্টো পাশে। আদম তমিজী হক নামের এক বিখ্যাত শিল্প পরিবারের উদ্যোক্তা তরুণ অন্যরকমের দেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছেন। এখানে কত প্রখ্যাত কিছু যে আছে-নাবিস্কো, তিব্বত, কোহিনূর, আবদুল মোনেম, কেয়া, রানার। সেসবের খবর তারা হয়তো জানা নেই ভালোভাবে। চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললেন। বসবেন না। খাবেন না এক কাপ চা-ও। নাম তার হাসমত খান। প্রতি ডিসেম্বরে বিক্রি করেন বাংলাদেশের পতাকা। কেন করেন-বললেন, ‘ভালো লাগে।’ অন্যসময় বিক্রি হয় তার হাতে দলীয় পতাকা; আবাহনী, মোহামেডান। ফুটবল বিশ্বকাপের সময় নেমে পড়েন ব্রাজিল, আজেন্টিনা নিয়ে। তবে ক্রিকেটের পতাকা বিক্রি করেন না। বাংলাদেশ যে খেলাটিতে এত এগিয়েছে সেটি বুঝলেও ‘তেমন চলে না’ বলে পথেঘাটে ছড়িয়ে দেন না। বললাম, বাংলাদেশের কোনো খেলা থাকলে ক্রিকেটের পতাকা বিক্রি করলে লাভ ভালো হবে, বিক্রিও অনেক হবে। মাথা নেড়ে সায় দিলেন, ‘ঠিক আছে বেচব।’ ‘দেশের পতাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই মাসে ভালো বিক্রি হয়’ জানালেন। বললেন, ‘একটু কষ্ট হেঁটে, হেঁটে বিক্রি করতে; তারপরও আমার ভালো লাগে।’ কেন অন্য কোনো পেশায় যান না-পতাকা বিক্রির মতো কম বিক্রির আইটেমে আছেন? ‘ভালো লাগে তাই, সংসারও চলে।’ ফের বললেন, ‘একটি সময় আছে-এই পতাকাটি বিক্রি করতেই হয়। সেই ডিসেম্বর মাস আইছে।’ এভাবে চললে ভবিষ্যত কী হবে-তার দাশনিক উত্তর, ‘বুড়া কালে আবার ভবিষ্যত কী?’ জীবন নিয়ে কোনো দু:খ আছে? ‘গরীব মানুষের আবার দু:খ আছে নি? গরীব মানুষ তো গরীব মানুষই। এর পরে আর কী দু:খ?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন বাংলাদেশের সহজ, স্বাভাবিক মানুষটি। বাড়ি তার গোপালগঞ্জ। বলতে গিয়ে কেমন যেন রাগ, রাগ মনে হলো। জানেন, শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক উপকার করেছেন, বাড়িঘর বানিয়ে দিয়েছেন? উত্তর দিলেন, ‘আমার বাড়ির সাইড দিয়া যারা ছিল, সবাইরে উপকার করছে। বাংলাদেশে যারা আছে, সবাইরে সে উপকার করছে।’ আপনার বৌ, পোলাপান কোথায় থাকে? ‘দেশে থাকে, থানা মকসেদপুর, হাপুরা গ্রাম।’ অনেক শিক্ষিত মানুষের চেয়েও ভালোভাবে বললেন হাসমত। এখন কেমন আয় হচ্ছে-‘ইনকাম এখন হবে নি? চলাই কষ্ট। তারপরও বেচতে হয়। দিনে আয় ৪-৫শ।’ আয় হবে কবে? ‘১৪ ডিসেম্বর থেকে।’ ১৬ ডিসেম্বর তুমুল বিক্রি। এরপর কমে যাবে ধীরে, ধীরে। তবে সাধারণ এই লোকটির মতে, ‘পুরো ডিসেম্বরই বিক্রি হবে।’ অনেক পতাকা যখন বেচবেন, দিনে দুই হাজার টাকা আয় হবে। সবচেয়ে বড় পতাকাটির দাম কত-চা দোকানদারের প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘দুইশত টাকা।’ জানতে চাইলাম, কত দিয়ে কিনেছেন। ‘৮০ টাকা।’ কোথা থেকে-সদরঘাট’-খুব ব্যবসা বুদ্ধির পরিচয় দিলেন। সংসার তার কষ্টে চলে। মোট পাঁচটি ছেলেমেয়ে আছে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলের মোটে ১৩-১৪ বছর। ছোট ছেলে দুটি ছোট, ছোট। তাদের নিয়ে স্বপ্ন-‘স্বাভাবিক। নিজেরা যেন চলাফেরা করতে পারে, নিজের কর্ম নিজে করে খেতে পারে।’

Previous articleবয়‌সের একটা পর্যা‌য়ে এসে স‌লো সে‌ক্সের প্র‌তি মানুষ আগ্রহ হা‌রি‌য়ে ফে‌লে
Next articleধর্মীয় আচরণ ও মেডিটেশন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here