নিজের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না

সমস্যা: আমি কিছুদিন ধরে কিছু সমস্যার মখোমুখি হচ্ছি। যেটা মানসিক সমস্যা কিনা সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না। আমি কিছুদিন ধরেই পড়াশুনায় মনোযোগ ধরে রাখতি পারছি না। পড়তে বসলেই মাথায় এটা ওটা ভাবনা চলে আসে। ফলে কার্যকরী পড়াশুনা হয় না, তার মানে এই নয় যে পড়াশুনা করতে পারি না। নিজের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এগিয়ে যাই। তাতে ফলাফল উল্টোটাই হয়। খুব বেশি দূর এগোতে পারি না। একটা চ্যাপ্টারের শুরুর দিকটা ভালোমত হলেও শেষের দিকটা ঠিকভাবে আয়ত্তে আসে না। আর সারাটা দিন চিন্তার মধ্যে কাটাই। ভবিষ্যতে এটা করব, ওটা করব তাই নিয়েই ভাবি। নিজের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। যুক্তির পরিবর্তে আবেগ দিয়ে বিচার করার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে আমার মধ্যে। আমার বয়স ১৯। মাঝে মাঝে ভাবি যে, এই বয়সে এমনটা হয়। এমন অবস্থায় আপনাদের সদুপোদেশ কামনা করছি। -এস. এম. সিফাত, বরিশাল।
পরামর্শ: ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য। তোমার বয়স ১৯ বছর। এখনতো তুমি টিনেজারদের মধ্যেই আছ। এই বয়সে কোনো একটি নির্দিষ্ট সমস্যা থেকে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। আবার এমনিতেই হতে পারে। এই বয়সে দেহের পরিবর্তনের সাথে এবং হরমোনাল পরিবর্তনগুলোর জন্যও মনটা একটু অন্যরকম থাকতে পারে, ভাবনা চিন্তা বেশি হতে পারে। দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন সুষ্ঠভুাবে করতে চাচ্ছ কোনোভাবেই সেটা করতে পারছ না। সেক্ষেত্রে একটু খেয়াল করে দেখতে হবে যে এমন কিছু তোমার জীবনে ঘটেছে কিনা যে ঘটনাকে তুমি কোনোভাবে মন থেকে মেনে নিতে পারছ না। অথবা ঘটনাটা তোমার মনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করছে। অথবা কোনো দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে ভুগতে পার যেটা তুমি কাউকে বলতে পারছ না, শেয়ার করতে পারছ না এবং সমাধানও করতে পারছ না। অনেক সময় সেই চিন্তাগুলো আমাদের স্বাভাবিক চিন্তার মধ্যে ঢুকে পড়ে এবেং স্বাভাবিক চিন্তার গতিধারায় পরিবর্তন ঘটায়। তখন লেখাপড়া থেকে শুরু করে কোনো কাজকর্মই যেন মনের মত হতে পারে না, হতে চায় না এবং হয়তোবা করা যায়ও না। আমরা নিজের থেকে চেষ্টা করে অনেক সময় বের হয়ে আসতে পারি; আবার অনেক সময় শুধু নিজের চেষ্টায় বের হতে পারি না। কারণ এই জিনিসটা যেহেতু অন্যকে বলতে পারছি না, নিজেও সমাধানটা বুঝে উঠতে পারছি না। আর তোমার বয়সটা যেহেতু কম তাই এখন কোনো সমস্যা হয়ত আছে, যার সমাধান করতে পারবে না। দ্বিধাদ্বন্দগুলো মনের মধ্যে রাখার কারণে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা যেমন- উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতায় ভুগতে পার যেটা তোমার চিঠি পড়ে আমার মনে হচ্ছে। তুিম যেহেতু এতদিন নিজে নিজে চেষ্টা করেছ খুব একটা সফলকাম হতে পারনি তাই আমার পরামর্শ থাকবে তুমি যদি একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে ব্যাপারটি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা কর তাহলে তোমার সমস্যাটির সমাধান হতেও পারে। প্রয়োজন হলে উনি তোমাকে ওষুধ দেবে বা সাইকোথেরাপি অথবা সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপি দেবে যেটা কিনা তোমার জন্য ফলপ্রসূ হবে।

Previous articleম্যালেরিওথেরাপি: মনোরোগ চিকিৎসায় পেয়েছিল নোবেল পুরস্কার
Next articleএডিএইচডি (ADHD) রোগে বাচ্চারা বিশৃঙ্খল ও অসামাজিক আচরণ করে
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here