নারী জাতি এখন জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। পড়াশুনা, খেলাধুলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজনীতি কোন কিছুতে তারা পিছিয়ে নেই। সামাজিক দিক থেকে তারা অনেক বেশি এগিয়ে গেছে, কিন্তু যদি তাদের শারীরিক এবং মানসিক দিকের কথা বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে নানাবিধ সমস্যার দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিষণ্ণতা, খাওয়া দাওয়ার সমস্যা, নিজের ক্ষতি করা। বিশেষ করে এবং অসমানুপাতিকভাবে তা তরুণ এবং যুবতী মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা গুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। তাহলে তাদের সাহায্য করার জন্য কি করা যায় যেহেতু তারা ঘরের বাহিরে কাজ করে?
বর্তমান সময় সবার জন্য একটি প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে রাখে সবাইকে হারিয়ে কীভাবে সব কিছু নিজের করে নেয়া যাবে এবং খেলায় এগিয়ে থাকা যাবে। যার কারণে মেয়েদের মধ্যে নিখুঁত হয়ে উঠার “সুপার গার্ল” হয়ে উঠার একটি ব্যাপার কাজ করে। যার কারণে মেয়েদের মধ্যে একটি মনোভাব কাজ করে যেন তারা পিছিয়ে না পড়ে, তারা উদ্বিগ্ন বোধ করে, সবসময় চিন্তায় থাকে কোন ভাবে যেন তারা খাপ ছাড়া না হয়ে যায়।
এই ধরণের সমস্যা থেকে উত্তরণের নানা উপায় রয়েছে। যেমন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, সমাজের সাথে খাপ খেয়ে চলার ক্ষমতা, নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, নমনীয়তা এবং সবকিছুতে শুরুতেই হতাশ হয়ে না পড়া। আমার মতে নারী জাতি নিজেদের যে কোন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবে যদি তারা তাদের ভয়কে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে পারে। এবং অবশ্যই তা তাদের মানসিক, বুদ্ধিমত্তা, আবেগীয় এবং নৈতিক দিক ঠিক রেখে।
এরিস্টটল বলেন, “সাহস হচ্ছে বেপরোয়া এবং ভয়ের মধ্যকার মাধ্যম”। একজন সাহসী মানুষ সেই জিনিসটাকেই ভয় যে জিনিসটাকে ভয় পাওয়া উচিৎ এবং ভয়কে আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করে। যে কোন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময় মানসিক সাহস নতুন নতুন ধারণা যোগাতে সাহায্য করে এবং যে কোন ধরণের ফলাফলের জন্য প্রস্তুত করে। নিজেকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা জানতে হবে। কোন কিছু খারাপ হলে নিজেকে দোষী করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে কষ্ট এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি চাইলে সব কিছু করতে পারব এমন মনোভাব রাখতে হবে। যে কাজগুলো করা হয়েছে এমন একটি তালিকার পাশাপাশি কি কি করতে হবে এমন তালিকা বানাতে হবে। আপনি যখন নিজেকে সেভাবে তৈরি করে নিতে পারবেন তখন আপনি যে কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন এবং ফলাফলের জন্য ভয় পাবেন না।
এই দিন দিন নিখুঁত এবং যথাযথ গড়ে উঠা পৃথিবীতে যেখানে কেউ আলাদা হলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করা হয় এবং এই ব্যাপারটিকে ভয় পাওয়া হয়, যেখানে শরীরের গঠন গড়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় প্রতি মুহূর্তে, যেখানে সামাজিক খ্যাতি এবং দক্ষতাকে অনেক বড় করে দেখা হয় সেখানে মানসিক সাহসের মূল্য অনেক বেশি। এই দিকগুলো ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করতে হবে। কোনভাবেই এসব নিয়ে বিষণ্ণ বোধ করা যাবে না।
বাবা মা এবং স্কুল মেয়েদের মধ্যে এই সাহসী মনোভাব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের উচিৎ সবসময় মেয়েদের মধ্যে একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে রাখা এবং কোনভাবেই তাদের কোন কিছু নিয়ে ছোট না করা। সবকিছুতে উৎসাহিত করা। কারণ একবার তাদের নিজের প্রতি বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে তা আর হয়ত পুনরায় গঠিত হবে না। এবং এটি হতে পারে বড় ধরণের কোন মানসিক সমস্যার সূত্রপাত।
একটি ব্যাপার আমাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে একা একা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার সম্ভব নয়। একসাথে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং এই ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে যেন কারোর সমস্যা থাকলে শুরুতেই তা ধরা পড়ে।
তথ্যসূত্র-
(https://www.theguardian.com/society/2017/sep/23/how-can-we-improve-the-mental-health-of-girls-and-women)
কাজী কামরুন নাহার, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম