বাংলাদেশে ১৩ টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ মোট ৬৮ টি কারাগার রয়েছে। বাংলাদেশে ৬৮টি কারাগারে সবসময়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী থাকে। এখনো দেশের কারাগারগুলোতে দ্বিগুনের বেশি বন্দী রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণেই উঠে এসেছে যে বন্দীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
এ অবস্থায় প্রতিটি কারাগারে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের কোনো কারাগারে এখনো একজনও মানসিক চিকিৎসক নেই। কারাগারে চিকিৎসার ঘাটতিও উদ্বেগজনক। কারাগারে একজন রোগী অসুস্থ হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে খুব একটা আমলে নেয়া হয় না। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।
কিছু সরকারি গতানুগতিক ওষুধ আছে। আপনার দাঁতে ব্যথা হলে যে ওষুধ, মাথা ব্যথা হলেও একই ওষুধ। আর ট্রিটমেন্টটাও ঠিকমতো হয় না। যখন কেউ চূড়ান্ত অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, তখন দৌড়-ঝাপ শুরু হয়। আর আরেকটি কারণ হল- প্রকৃত অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে জায়গা পায় না। প্রভাবশালীরাই কারা হাসপাতালে বেড পায়। যাদের টাকা আছে, তারা বেড পায়।
সমাজের অপরাধীদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার স্বার্থে কারাগারে কঠোর অনুশাসন আর শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তবে বাইরে থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা, কারাগারের পরিবেশ, ডাক্তার এবং সময়মতো চিকিৎসার সংকট জেলখানায় মৃত্যুর প্রধান কারণ।
জেলখানাকে সংশোধনাগার হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও একজন জেলবন্দী সব সময় মেন্টাল টর্চারের মধ্যে থাকে। একঘেয়ে পরিবেশ, অনেকদিন বন্দী থাকায় জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলেন তিনি। দুশিন্তা, প্যানিক ডিজঅর্ডারসহ বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হলেও মানসিক ডাক্তার না থাকায় সাহায্য পাওয়ার কোন অবকাশ থাকে না।
বাংলাদেশে সম্প্রতি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর কারাগারে মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলখানায় মৃত্যুর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি করলেও অনেক ক্ষেত্রেই মৃতের পরিবার, মানবাধিকার সংস্থা এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে এসব মৃত্যু কতটা স্বাভাবিক তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কারাগারে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ বছরে জেলখানায় মারা গিয়েছেন কমপক্ষে ৩৩৮ জন বন্দী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদ জামিন না পেয়ে দশমাস কারাবন্দী থাকা অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুকে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দাবি করা হয়।
এ বছরই কিশোরগঞ্জের এক ব্যক্তি নেশা ছাড়াতে ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন সংশোধনের জন্য, দুমাস না যেতেই ফেরত পেয়েছেন ছেলের লাশ।
এছাড়া ২০১৯ সালে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে আগুনে পুড়ে মারা যায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়। তদন্তে এই মৃত্যুকে কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা বলে জানায় যদিও পলাশের পরিবারের কাছে শুরু থেকেই এ তদন্ত প্রতিবেদন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
কারাবন্দী কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয় – তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকে সেই সাথে জেলখানায় বন্দীরা কতটা চিকিৎসা সুবিধা পায় রয়েছে সে প্রশ্নটিও।
সুত্রঃ বিবিসি
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে