চিকিৎসা নিয়ে ভয়

0
102

পর্ব ১: আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একটা কথা প্রায়ই বলেন, এবং কথাটা সর্বসাধারন এবং পেশাগত প্রত্যেকেরই জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তিনটা ক্ষেত্রকে পৃথক রাখার উপর খুব জোর দেন: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং মানসিক রোগের প্রতিরোধ। যেসব বিষয় মানসিক স্বাস্হ্য উন্নয়নের সেগুলো হরে দরে যদি রোগের চিকিৎসায় কেউ ব্যবহার করতে যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। স্যারের উদাহরনটাই উল্লেখ করছি : কারো পায়ের হাড় ভেংগে গেছে, এই অবস্থায় তাকে যদি সবাই ঠেলতে থাকে হাঁটো, দৌড়াও, খেলো-এগুলো হাড়ের জন্য ভালো ; তাহলে কি অবস্থা হবে ভাবুন। আবার যখন ছয় সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে তারপর এক্সরে করে হাড় ভাংগা ঠিক হয়ে গেছে তখন তাকে সারাদিন শুয়ে থাকতে বললে, ঐ পা না নাড়াতে দিলে তার মাংসপেশি শুকিয়ে পরে ঐ পায়ের অবস্থা বারোটা বাজবে।

এখন প্রশ্ন করতে পারেন কে ঠিক করবে যে পায়ের প্লাস্টার কেমনে দেয়া হবে, কতদিন বিশ্রাম নেবে, কি ব্যায়াম করবে- অবশ্যই অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অথবা এই বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষন আছে অথবা ইমার্জেন্সি ভাবে একজন এমবিবিএস এই পরামর্শগুলো দিবেন।

এখন এই ক্ষেত্রেও যেমন মান্ডার তেলের ব্যবসায়ীরা আছেন এখানেও সেরকম তিন অংশকে ‘ঘেঁটে ঘ’ বানানোর লোকের অভাব নাই। এবং মুশকিল হচ্ছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, চোখ ঠারানো মুগ্ধতা দিয়ে মানসিক রোগের উপসর্গকে স্বআভাবিক বানানো থেকে শুরু করে ওষুধের চিকিৎসা কে ঋনাত্মক বানানো সবই হয়ে চলেছে।
কে ওষুধ খেলো বা খেলো না তাতে আর কারো কিছু যায় আসেনা। কিন্তু কিছু জায়গা বড় ভয়ংকর ফল নিয়ে আসে- যেমন প্রসব পরবর্তী বিষন্নতা একজন মায়ের মনোজগত তার ছোট্ট শিশুর বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে, সেই জায়গা ব্যহত হয়, মায়ের নিজের ব্যক্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ভ্রান্ত বিশ্বাসজনিত অসুখ – এগুলোর প্রভাবে হত্যা, আত্মহত্যা ঘটে যায়।

আবার বিষণ্ণতার চিকিৎসা না করে, ওষুধ না খেয়ে সারাদিনব্যাপী মোটিভেশনাল কথাবার্তা পড়ে পড়ে আস্তে আস্তে সেটার মধ্যে ডুবে যাওয়া- মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট কেমিক্যালের যখন ঘাটতি তখন মোটিভেশনের কথার অর্থেও ঝামেলা হয়- শুয়ে থেকে পৃথিবী জয় করা যায় এই স্বপ্ন দেখে খাট থেকে পড়ে গিয়ে বাস্তবতায় এসে আরো বিষন্ন লাগার সম্ভাবনা আসে।

পর্ব ২: মোটামুটি হতবিহবল একটা চাহনীসহ জনৈকের প্রশ্ন: ওষুধ খেতেই হবে? এটা নিজে নিজে ঠিক হবেনা? ওষুধ খেলেতো পুরো পাগল বলবে আমাকে সবাই? কথা বলে ঠিক করা যাবে না?
ডাক্তার: আপনি চুলায় আগুন না ধরিয়ে চুলার উপর হাঁড়ি বসালেন, অনেক মশলাপাতি দিলেন, অনেক নাড়লেন, ঘুঁটলেন- রান্না হয়ে যাবে? এটাও তেমন -আপনার মস্তিষ্কে যতটুকু কেমিক্যাল এবং সেগুলো যেভাবে কাজ করার কথা সেই জায়গাটা আগে ঠিক হয়ে আসতে হবে। তখন এই নিজে নিজে চেষ্টা করা, কথা বলা এগুলো করতে পারবেন। এখন এগুলো ঐ আগুন ছাড়া রান্নার মতো। আর শুধু কথা বলার থেরাপী যতটা লাগবে তার চেয়ে কম আঁচ দেয়ার মতো। রান্না হবে হয়তো, কিন্তু এত দেরীতে যে লাঞ্চেরটা ডিনারে গড়াবে। সবার কথাতো সবার কথাই। যে অন্ধ হয়েও সাদা লাঠি নিয়ে হাঁটে, সবাই তাকে উপহাস করার কথা নাকি সাহসী হিসেবে প্রশংসা করার কথা? তার এই মনের জোর কে প্রশংসা না করে বরং উপহাস করে অনেকে, কিন্তু অনেকের কথায় নিশ্চয়ই দমে যাওয়ার কিছু তার নাই। আপনি ওষুধ খেয়ে ভালো থাকলে, কাজ করতে পারলে সেটা বেশি শক্তির পরিচয় নাকি সমস্যাটার চিকিৎসা পেয়েও এড়িয়ে গেলে?

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleদুশ্চিন্তা যেন দুশ্চিন্তার কারণ না হয়
Next articleযখন একজন প্রিয়জনের মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে
ডা. সৃজনী আহমেদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, মগবাজার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here