কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিজ গৃহে অবস্থান করা ইত্যাদি সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়েছে। যা এক অর্থে আমাদের গৃহ বন্দী করে দিয়েছে। এই সময়টাতে একই সাথে অধিক সময় অতিবাহিত করার ফলে অনেক দম্পতির মাঝেই বোঝাপড়াগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দুশ্চিন্তা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ প্রভাব ফেলছে দাম্পত্য জীবনে।
করোনা আতঙ্ক সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি দিন লাখো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে এবং হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করছে। এমন দুরাবস্থার শিকার আমাদের এই প্রজন্ম আগে কখনো হয়নি। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক বয়সের মানুষের শরীর ও মনের উপর এর বিরূপ প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় সবার মাঝেই রয়েছে এক অব্যাক্ত মানসিক তাড়না। এই সময়ে একে অপরের মানসিক অবস্থা বুঝে চলা এবং সদ্ভাব বজায় রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য সম্পর্কের মতই স্বামী-স্ত্রী তাদের দাম্পত্য জীবনেও বিভিন্ন ধরণের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এগুলোর ফলে প্রতিনিয়ত ঝগড়া, মান অভিমান ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে যা চরম পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করলে যা সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
১) অধিকারের আগে কর্তব্যকে এবং প্রত্যাশার আগে করণীয়কে স্থান দিন:
সাধারণত নিজের অবস্থান তুলে ধরা, অন্যের কাজের সাথে নিজের কাজের তুলনা করা বা ভিন্ন মত প্রদর্শন করা নিয়েই সব থেকে বেশী তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাত হয়। নিজের আবেগকে চেপে রেখে অন্যের কথা মন দিয়ে শোনা এবং তার আবেগের গুরুত্ব দেওয়া সত্যিকার অর্থে কঠিন। তবে যেখানে দুটো মানুষেরই স্বার্থ জড়িত, যেখানে দু’জন মিলেই গড়তে হবে সুন্দর একটি সংসার, সেখানে একে অপরের আবেগের গুরত্ব দেওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। অবশ্যই দুজন মানুষ এক রকম মানসিকতার অধিকারী হবেনা।
তাই দুজনকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। একে অপরকে দোষারোপ না করে সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের মতের থেকে অপর জনের মতের প্রাধান্য দেওয়া, নিজে কি চাইছি তার থেকে ওপর জনের কি প্রয়োজন সেটি আগে দেখা এবং নিজের কর্তব্য গুলো বিনা সর্তে পালনা করা হবে নিজেদের দাম্পত্য জীবন সফল করার অন্যতম উপায়। করোনা আতঙ্কে যখন চারিদিকে চলছে মানসিক দুর্ভোগ সেখানে একে অপরের প্রতি বিরক্ত না হয়ে একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকার প্রচেষ্টা করাই হবে নিজের ও পরিবারের জন্য লাভদায়ক।
২) ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা লালন করুন:
সম্পর্ক সুন্দর এবং দীর্ঘস্থায়ী এ কারণে হয়না যে সেসব সম্পর্ক কলহ বিবাদ মুক্ত হয়। বরং সম্পর্ক মধুর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় দুজনার বোঝাপড়া এবং একে অপরের প্রতি দায় বদ্ধ থেকে ভুল স্বীকারের মানসিকতা লালন করার জন্য। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি যা নিজের ভুল স্বীকারের মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যায় সেগুলো মনে চেপে রাখার কারণে ধীরে ধীরে অনেক বড় মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই গৃহবন্দী অবস্থায় আমরা সবাইই মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে হতেই পারে আপনি হয়তো কোন কারণে খুব বেশী রেগে গিয়ে আপনার সঙ্গীর মনে কষ্ট দিলেন। সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত নিজের ভুল স্বীকার করে নিন। এতে দুজনার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে যাবে।
৩) একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে চেষ্টা করুন:
সম্পর্কে অকার্যকারিতার একটি বড় কারণ কলহ নয়, বরং একে অপরের ইচ্ছে-আগ্রহের গুরুত্ব না দেওয়া, একে অপরের প্রতি যত্নশীল আচরণ না করা। এজন্য সুন্দর একটি দাম্পত্য জীবনের স্বার্থে একে অপরের আবেগকে গুরুত্ব দিন। দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতার সময়ে একে অপরের পছন্দসই কাজ কর্ম করে দুজন দুজনার মনে ভাল রাখার চেষ্টা করুন। অন্যের ভাললাগা, মন্দ লাগায় তার সাথে সহভাগী হতে চেষ্টা করুন। ধৈর্য ও সহ্য শক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে প্রাত্যহিক অনেক সমস্যাই দূর হবে।
এই দুর্যোগের সময়ে যখন আমাদেরকে প্রায় সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হচ্ছে, আমরা একটু সহনশীল হলেই পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারি। দুশ্চিন্তা আর উদ্বিগ্নতার এই সময়টাকে আনন্দময় এবং পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার সুবর্ণ সুযোগে পরিণত করতে পারি শুধু যদি আমাদের মাঝে সহানুভূতি এবং সহনশীল মানসিকতার লালন করি তবে।
মানিসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন