কোভিড-১৯-এর এই দীর্ঘ লকডাউন বা গৃহবন্দী জীবন ছোট, বড় সব বয়সী মানুষের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করছে। প্রাপ্ত বয়স্করা নিজেদের খেয়াল নিজেরাই রাখতে সক্ষম কিন্তু শিশুরা এ সময়ে খুবই অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। আজ কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব যা পিতামাতাকে তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করবে।
বিভিন্ন দিক বিবচনা করলে কোভিড-১৯-কে এক প্রকার বিশ্ব যুদ্ধই বলা যায়। স্বাস্থ্য কর্মী এবং জরুরী সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এই যুদ্ধে সম্মুখে থেকে আমাদের সুরক্ষা প্রদান করছেন। একইভাবে, লকডাউনের সময়ে যাদের পরিবারে ছোটরা বা শিশুরা রয়েছে তারাও তাদের পরিবারের সার্বিক তত্ত্বাবধান করার মাধ্যমে ঠিক একইরকম সেবা প্রদান করে চলেছেন। যেহেতু এখন শিশুরা এখন দিনের পর দিন ঘরেই থাকছে, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পড়াশোনা সহ যাবতীয় খেলাধুলা ঘরের মধ্যেই করতে হচ্ছে তাই তাদের শারীরিক ও মনসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পিতামাতাকে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হচ্ছে এবং দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তারা এখন একাধারে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, বন্ধু এবং গৃহকর্তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। উল্লেখ্য, এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কারও আগে কখনোই হয়নি। এক্ষেত্রে কোন প্রশিক্ষণের সুযোগও নেই। তাই এই সময়ে শিশুরা কি কি মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে সে সম্বন্ধে জানার এবং বোঝার, একই সাথে সমাধানের চেষ্টা আপনার নিজ উদ্যোগেই করতে হবে। নিচে তেমন কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলঃ
১) শিশুদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিনঃ শিশুর লেখাপড়া, খেলাধুলা সহ সমস্ত দায়িত্ব এখন পিতামাতাকেই পালন করতে হচ্ছে। তাই ধৈর্য, মনোযোগ, সহানুভূতি এবং আশাবাদী মানসিকতার সাথে শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। পিতামাতার আচরণ, কথা বার্তা, মানসিক অবস্থা সব কিছুই শিশুর মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। যেহেতু এখন সমস্ত সময়টাই শিশুরা আপনাকে লক্ষ করছে, নিজের মানসিকতা এবং আচার আচরণ নিয়েও সতর্ক থাকুন। শিশুদের মনের ভয়, হতাশা, দুশ্চিন্তা দূর করার প্রয়াস করুন। তাদেরকে ধৈর্য সহকারে বুঝিয়ে বলুন যে এই দুর্যোগ খুব দ্রুতই কেটে যাবে। তাদের মনে আশার সঞ্চার করুন। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই যে কোন কাজ, যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
২) দুশ্চিন্তা কমান এবং মনযোগী হনঃ যে কোন কাজে সফল হতে বা সুচারুরূপে করতে সেই কাজের প্রতি মনযোগী হওয়া অত্যাবশ্যক। এটা সত্যি যে কোভিড-১৯ থেকে নিজেদের ও পরিবারের বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত এবং এই চিন্তা থেকেই দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এসব হওয়া স্বাভাবিক। এরকম মানসিক স্থিতি নিয়ে কোন কাজে মনোনিবেশ করা খুবই কঠিন। তাই নিজেদের মানসিক স্থিতি আগে নিয়ন্ত্রণ করুন। সব সময় শিশুদের কথা মাথায় রাখুন কারণ এই দুর্যোগে আপনারাই তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তাদের খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলা, পড়াশোনা সব যেন আপনার তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে মনোযোগ দিন। যেহেতু এখন পুরো সময়টাই শিশুরা ঘরের মধ্যে কাটাচ্ছে, তাই তারা যেন মানসিক কোন প্রকার চাপের মধ্যে না থাকে তাই যতোটা সম্ভব তাদের সঙ্গ দিন। তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে আপনার এই মনোযোগ প্রদানই হবে তাদের প্রতি আপনার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব।
যে কোন কাজ গুরুত্ব দিয়ে এবং মনোযোগের সাথে করলে সে কাজে সফলতা নিশ্চিত। তাই শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে নিজের মানসিক চাপ না বাড়িয়ে তাদের প্রতি সব কাজে মনযোগী হয়ে গুরুত্বের সাথে সব কিছু করলে তারা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবে। কোভিড-১৯ আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে ঠেলে দিলেও পরিবর্তিত অবস্থায় সহনশীল ভূমিকা পালন করে আমাদের নিজেদের এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।