মহামারীকালীন এই দুঃসময়ে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির শেষ নেই। সমস্ত পৃথিবীই যেন শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছে। এই সময়ে কিভাবে সব কিছু আবার ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা যায় সেই প্রয়াস করার সময় এবার এসেছে।
শোক, দুঃখ মানুষকে যেন সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমনভাবে মানসিক অবস্থার অবনতি হয় যে ব্যক্তি তার সেই ক্ষয়ক্ষতির ভাবনা থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারেনা। সারাক্ষণ মানসিক পীড়ার মাঝে থাকে। আর করোনা মহামারী আমাদের সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক সব দিক দিয়েই চরম ক্ষতি সাধন করেছে। অসংখ্য কাছের মানুষকে আমরা হারিয়েছি একে একে। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। এই অসহায়ত্ব ধীরে ধীরে আমাদের হতাশার কৃষ্ণ গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানো সত্যিই খুব প্রয়োজন। এটা যেমন আমাদের মানব সমাজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রয়োজন তেমনি মানুষ হিসেবে মানবতার মান রেখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোও প্রয়োজন। তাই একে অপরের মানসিক চাপ লাঘব করে শোক কাটিয়ে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার বিস্তারে এগিয়ে আসতে হবে।
কষ্ট, দুঃখ, মানসিক চাপ মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। ভালোবাসা, সহমর্মিতার যেমন অসীম শক্তি, তেমনি মানসিক চাপ, দুঃখ, শোক সব কিছুরই অপার শক্তি। পার্থক্য শুধু ফলাফলে। একটি আপনাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে, তেমনি অপরটি আপনাকে বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে বাধ্য করবে। তাই শোক, দুঃখ থেকে নিজে মুক্ত হবার প্রয়াস করতে হবে এবং অন্যদেরকেও মুক্ত করতে এগিয়ে যেতে হবে। আপনি হয়তো দুঃখ থেকে সরাসরি তাদের মুক্তি দিতে পারবেন না, কিন্তু তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে পারবেন। তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা, সহমর্মিতা, সহযোগ তাদের মাঝে পুনরায় মানসিক ভাবে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা যোগাবে, জীবনে নতুন অর্থ প্রদান করবে।
সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার প্রথম পদক্ষেপ হল মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। একজন মনযোগী শ্রোতা বক্তার মনে বিশেষ স্থান করে নিতে পারে। তাদের মনের কথা, কষ্টের কথা এবং সব ধরণের অভাব অভিযোগের কথা নিয়মতি খোঁজ খবর নেবার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে। তাছাড়া, অর্থনৈতিক ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো যেতে পারে। পুরনো সুখের স্মৃতি মনে করিয়ে তাদের উজ্জীবিত করা যেতে পারে। মূলত তাদের নেতিবাচক মানসিক অবস্থা দূর করে পুনরায় আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং স্বপ্ন দেখার ইচ্ছে জাগানোর মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে ইতিবাচক মানসিক অবস্থার সূচনা করার প্রয়াস করতে হবে।
মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এগুলো খুব ছোট ছোট কিছু প্রয়াস। পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন অনুসারে একজন মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যা যা করা প্রয়োজন সেগুলি করার যথাযথ প্রয়াস করতে হবে। অন্যের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করে সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। তাহলেই একসাথে আমরা কোভিড-১৯ এর এই করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার বিশ্ব বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবো।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে