টরেট সিনড্রোম বা মুদ্রাদোষের লক্ষণ

0
165
ওডিনোফোবিয়া: ব্যথাজনিত ভয়
টরেট সিনড্রোম বলতে কী বোঝায়?

টরেট সিনড্রোম (যা টিআইসিএস বা টিকস্‌ সিনড্রোম নামে পরিচিত) হল মানুষের শৈশব বা বাচ্চা বয়সে হওয়া একধরনের নিউরোসাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার বা সমস্যা। এই সমস্যা মূলত দু’ধরনের হয়- চলাচলগত এবং মৌখিক। টিকস্‌ এমন একটা কৃত্তিম আচরণ, যা মানুষের কথা বলা, হাঁটাচলা, আকার-প্রকারের ক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ, খুব তাড়াতাড়ি, বারবার, এলোমেলোভাবে দেখা যায়। এই সমস্যাটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন গিললেস ডে লা টওরেট। একজন মানুষের মধ্যে টরেটের লক্ষণ দেখা দিলে তার ক্ষেত্রে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি), অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) এবং মুড ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনা থাকে।

টিআইসিএস বা টিকসের ধরন

যে সব বাচ্চাদের মধ্যে টরেট সিনড্রোম বা লক্ষণ দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে দু’ধরনের টিআইসিএস বা মুদ্রাদোষ থাকে। যেমন- হাঁটাচলার ক্ষেত্রে মুদ্রাদোষ এবং মৌখিক বা কথা বলার ক্ষেত্রে মুদ্রাদোষ।

হাঁটাচলাগত টিআইসিএস

কথাবার্তাগত টিআইসিএস

চোখ পিটপিট করা

হেঁচকি তোলা

মাথা ঝাঁকানো

গলা ফাটিয়ে চেঁচানো

কাঁধ ঝাঁকানো

গলা হাঁকিয়ে পরিষ্কার করা

হঠাৎ করে চোখ বড় করে সামনের দিকে ঠেলে বের করা

কুকুর বা শেয়ালের ডাকের মতো মুখ দিয়ে আওয়াজ করা

আঙুল মটকানো বা বাঁকানো

গলার স্বর পালটে কথা বলা

জিভ বের করা

নিজের বলা একটা শব্দ বা কথা বারবার আওড়ানো

নাকে হাত দেওয়া

অন্যদের বলা শব্দ বা একটা কথা বারবার বলা

গন্ধ শোঁকা

নোংরা বা কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করা

অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা

হাত ঝাপটা দেওয়া

লাফিয়ে বা লেংচে হাঁটাচলা করা

 

টরেট সিনড্রোমের লক্ষণগুলি কি কি

মানুষের হাঁটাচলা এবং কথা বলার ক্ষেত্রে যে সব মুদ্রাদোষ একনাগাড়ে চোখে পড়ে সেগুলোর কারণে বড়সড় বিপর্যয় ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে  এধরনের বিপর্যয় বা দুর্বলতা নাও থাকতে পারে। কিন্তু আবার অন্যান্য বাচ্চাদের মধ্যে দুর্বলতা কম বা গুরুতর দুই-ই হতে পারে। যাদের বয়স খুবই অল্প তারা সাধারণত নিজেদের মুদ্রাদোষগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকে না। তাই তাদের জীবনে তেমন দুর্দশা বা দুর্বলতা দেখা যায় না। এই সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হল মনে বদ্ধমূল ধারণা গড়ে ওঠা এবং বাধ্য বাধকতা। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে মানসিক উত্তেজনা বা অতিসক্রিয়তা, মনোযোগ নষ্ট হওয়া এবং হঠকারিতা। মাঝে মাঝে সামাজিকতার ক্ষেত্রে অস্বস্তি বোধ করা, লজ্জা, আত্মসচেতনতার অভাব এবং নৈতিক অবক্ষয় এবং বিষণ্ণতা দেখা যায়।

টরেট সিনড্রোমের কারণগুলো কী কী?

এই সমস্যার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। যদিও বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যার সম্ভাব্য কতগুলো কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন-

বংশগত সমস্যা:জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণে টওরেট সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। যদিও এই বিষয়টি এখনও গবেষণার স্তরেই রয়েছে।

মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা:মস্তিষ্কে প্রবাহিত কিছু রাসায়নিক বস্তুর তারতম্য। এর মধ্যে রয়েছে ডোপামিন এবং সেরোটনিনের প্রভাবও।

টরেট সমস্যার লক্ষণগুলোকে কীভাবে ধরা যাবে বা চিহ্নিত করা যাবে?

টরেট সমস্যার লক্ষণগুলোকে ধরা যায় মূলত একটা বাচ্চার জন্মের আগের অবস্থা, বাচ্চার প্রাথমিক বিকাশ, তার চিকিৎসার ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাসের উপর নির্ভর করে। এই রোগ ধরার ক্ষেত্রে চিকিৎসার ইতিহাস ও নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতন্ত্রের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাহায্য করে থাকে।

দ্য ইয়েল গ্লোবাল টিআইসি বা টিক সিভিয়ারিটি স্কেল সাধারণত মুদ্রাদোষজনিত সমস্যার গভীরতা মাপতে সাহায্য করে। সমস্যার গভীরতা বিচার করে একটা বাচ্চার চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়।

টরেট সিনড্রোমের চিকিৎসা

যদিও এই সমস্যা পুরোপুরি সারে না, তবু চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। মুদ্রাদোষ কমাতে ওষুধই প্রধান মাধ্যম। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সমস্যা যদি খুব গুরুতর না হয় তাহলে সবসময়ে চিকিৎসার দরকার হয় না।

এই সমস্যার সমাধান করতে কয়েকটি থেরাপি ব্যবহার করা হয়:

বিহেভায়রল থেরাপি:এই থেরাপিকে হ্যাবিট রিভার্সাল থেরাপি (এইচআরটি) বলা হয়, যা বাচ্চাদের টওরেট সিনড্রোম সারাতে খুবই উপযোগী। এই ব্যবস্থায় আচরণের অস্বস্তিকর বা অস্বাভাবিক অবস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলোর সমাধানের জন্য চেষ্টা কর হয়। এই থেরাপির মধ্যে আত্মসচেতনতা এবং আত্মনিরীক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া এর মধ্য দিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার কৌশলও আয়ত্ত করা যায়।

যে সব রোগীর মধ্যে এডিএইচডি এবং ওসিডির লক্ষণ থাকে তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ ও থেরাপি দুটোই ব্যবহার করা হয়।

টরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত রুগির যত্ন

অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে, বাচ্চাদের মুদ্রাদোষের সমস্যা আসলে তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই বাচ্চাদের অসুখ সম্পর্কে পড়াশোনা করা পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে জরুরি এবং সমস্যার সমাধানে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পরিবারের সদস্যদের উচিত বাড়ির পরিবেশকে সুস্থ সুন্দর করে গড়ে তোলা। যদি বাড়ির পরিবেশ বাচ্চাদের মনে উদ্বিগ্নতা বাড়াতে সহায়ক হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের সেই পরিবেশ থেকে দূরে রাখার কৌশল নিতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকরোনা কালে ঘরে না থাকার মানসিকতা এবং নেপথ্যের যত কারণ
Next articleক্লসট্রফোবিয়া বা আবদ্ধতাজনিত ভয়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here