প্যানিক অ্যাটাক বলতে হঠাৎ করে আতঙ্ক, আশঙ্কা, ভয় বা অস্বস্তি শুরু হওয়া বুঝায়। প্যানিক অ্যাটাকের কতগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ করে শুরু হয়। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অ্যাটাক শুরু হওয়ার পরে ১ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে এটি তীব্র আকার ধারণ করে। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিটি অ্যাটাক সাধারণত ২০ থেকে ৬০ মিনিটের বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এখন পর্যন্ত প্যানিক অ্যাটাকের কারণ সম্পর্কে একেবারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে অনেকগুলি সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন কতগুলি গবেষণায় দেখা গেছে যাদের প্যানিক অ্যাটাক হয় তাদের প্রতি ১০০ জনের ৪০ জনের কারো না কারো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই সমস্যার উপস্থিতি রয়েছে। এটি থেকে বোঝা যায় বংশগতি বা জিনের ভূমিকা রয়েছে এই সমস্যার পিছনে। অ্যাড্রেনালিন বলে আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলিতে একটি রাসায়নিক যৌগ রয়েছে। প্যানিক অ্যাটাকে এই অ্যাড্রেনালিন ধারণকারী স্নায়ুগুলি অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে সিগন্যাল দেয়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় অথবা একবার প্রতিক্রিয়া দেখালে শান্ত হতে চায় না। অ্যাড্রেনালিন মানুষের ক্ষেত্রে ভয় পেলে, রেগে গেলে বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে নিঃসরিত হয়।
কিন্তু প্যানিক অ্যাটাকে এটি অল্প ভয়, রাগ বা চাপে অধিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর ফলে বুক ধড়ফড় করা, হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া, শরীর বা হাত ঘেমে যাওয়া এমন সব লক্ষণ দেখা যায়।
মস্তিষ্কের আরও দুইটা নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিন এবং গাবা, এই দুইটিকেও প্যানিক অ্যাটাকে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। দেখা গেছে এই সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের মস্তিষ্কে গাবার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চেয়ে কম থাকে। সাধারণ অবস্থায় গাবা আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখে, শান্ত রাখে, ঘুম করে। আমরা যে ঘুমের ওষুধগুলি খাই, এটি মস্তিষ্কে গাবার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এইজন্যে অনেক সময় ডাক্তাররা প্যানিক অ্যাটাকের রোগীদের অল্প মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে থাকেন। মানুষের আবেগীয় মস্তিষ্কের কেন্দ্র বলা হয় অ্যামিগডালাকে। দেখা গেছে এই অ্যামিগডালা প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে অল্প উদ্দীপনায় অধিক উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং দুশ্চিন্তার জন্ম দেয়। প্যানিক অ্যাটাকের সময় ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে মস্তিষ্কে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। এর ফলে মাথা ঝিমিঝিম করা, মাথা হালকা অনুভূত হওয়া, হাত পা শিরশির করা, কানে ভোঁ ভোঁ করার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলির দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকেন। যেমন তারা স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের শব্দকে ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে বা বড়ো অসুখের লক্ষণ মনে করে আরও বেশি ভয় পেয়ে যান। পাকস্থলীর স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় শব্দকে অস্বাভাবিক কিছু মনে করে থাকতে পারেন। অর্থাৎ যে জিনিসগুলিকে একজন মানষ খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না, তারা তাকে অধিক মনোযোগের সাথে লক্ষ করে এবং তা বড়ো অসুখের লক্ষণ মনে করে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এই চিন্তা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন প্যানিক অ্যাটাক দেখা দেয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ছোটোবেলায় তীব্র মানসিক আঘাতজনিত কারণে মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক অল্পে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুশ্চিন্তাকে আমরা চিন্তার একটি রূপ বলতে পারি যা ভয় বা চাপের মধ্যে পড়লে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। যাদের ছোটোবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়া, ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের মধ্যে এই দুশ্চিন্তা প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এই দুশ্চিন্তাপ্রবণতা যা মূলত ছোটোবেলায় অসহায়ত্ব থেকে তৈরি হয়।
ডা. টুম্পা ইন্দ্রাণী ঘোষ
রেজিস্ট্রার, চাইল্ড এডোলেসেন্ট এন্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে