কোভিড-১৯ সব বয়সী মানুষের জীবনই দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯এর কারণে কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন জটিল মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে যা নিবারণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কোভিড-১৯ সমস্ত পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সব বয়সের, বর্ণের এবং পেশার মানুষ এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এতো দিন পার হবার পরেও এখনো প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং বহু মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। কিন্তু এটি প্রতিরোধে কার্যকরী প্রতিষেধক এখনো মানুষের মাঝে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। করোনা আমাদের জীবনের গল্প নতুন করে যেন লিখছে। শিশু কিশোরেরা স্কুলে যেতে পারছেনা। বাইরে খেলাধুলা করতে যেতে পারছেনা। বয়স্করা সারাক্ষণ ঘরে থেকে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় ভুগছেন এবং কর্ম ব্যস্ত লোকজন যাদের উপর পুরো সংসারের ভার রয়েছে তাদের কাজ করা এবং অর্থ উপার্জন এখন এক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
করোনা সব বয়স এবং পেশার মানুষের জন্যই অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। তবে মনস্তত্ত্ববিদ এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ করে কম বয়সী যারা, যেমন, কিশোর এবং নতুন যুবাদের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক চ্যালেঞ্জিং। করোনা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের পথে চরম বাধা সৃষ্টি করেছে। যেমন, বড় হয়ে ওঠার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে এই বয়সীদের অন্যান্য বয়সের মানুষদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক এক বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ঠিক এই সময়ে তাদের অত্যধিক মনোযোগ, সহমর্মী আচরণ এবং কাছের মানুষের সান্নিধ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু করোনার এই দুঃসময়ে এর কোনটাই সম্ভব হচ্ছেনা। তারা ঘরের আঝে আবদ্ধ হয়ে এক অস্বাভাবিক সময় পার করছে। বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারছেনা। তারা স্বাধীনতাহীনতায় ভুগছে এবং ঠিক যেভাবে তাদের মানসিক বিকাশ হওয়া প্রয়োজন ছিল সেটি হচ্ছেনা।
সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কিশোর বয়সীরা এই মহামারী কালীন সময়ে সব থেকে বেশী যে সমস্যায় ভুগছে সেটি হল একাকীত্ব এবং মানসিক অবসাদ। তারা নিজেদের সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন মনে করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বিরত থেকে তারা ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তারা তাদেরকে মানসিকভাবে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবছে। যা তাদের মনে আরও বেশী ভয় এবং কষ্টের সৃষ্টি করছে। তারা কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারছেনা এবং অভিভাবকেরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
তাছাড়া অন্যান্যদের মত কিশোর বয়সীদের মনেও করোনা নিয়ে প্রচণ্ড ভীতি কাজ করছে। তারা নিজের সুরক্ষার সাথে সাথে তাদের পরিবারের বৃদ্ধ সদস্য এবং কাছের মানুষদের করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ভয়ে অত্যন্ত ভীত হয়ে আছে। সংবাদ পত্র এবং টেলিভিশনে প্রতিনিয়ত করোনা নিয়ে চলতে থাকা একের পর এক দুঃসংবাদ তাদের মানসিকভাবে অত্যন্ত হতাশার মাঝে ঠেলে দিয়েছে। প্রতি দিনই পরিচিত কেউ না কেউ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে বা মৃত্যু বরণ করছে। এসব তাদের মাঝে এক ধরণের ট্রমার সৃষ্টি করেছে। তারা কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারছেনা। ক্ষুধা মন্দা দেখা দিচ্ছে এবং তাদের মাঝে মানসিক সমস্যার সাথে সাথে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
এসব সমস্যার সাথে সাথে আবার অনেকে চেষ্টা করছে করোনা থেকে ইতিবাচক কিছু গ্রহণ করার যা তাদের মনকে ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারবে। অনেকে তাদের পরিবারের সাথে অধিক সময় কাটানোর সুযোগকে বেশ ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছে। অনেকের মতে এটি তাদের মানসিক অবসাদ এবং হতাশা দূর করতে সহায়তা করছে। ধীরে ধীরে তারা এই নিউ নরমাল জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছে।
যদি আপনি একজন শিক্ষক, অভিভাবক বা সমাজকর্মী হয়ে থাকেন যিনি কিশোর বয়সীদের সাথে এই সময়ে ভাব বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই এই বিষয় গুলো আপনার চোখে পড়বে। করোনা আমাদের সাথে সারা জীবন থাকবেনা। কিন্তু আমাদের এই প্রজন্ম যদি এমন মানসিক অবসাদ এবং সঠিক বিকাশের অভাবে বেড়ে ওঠে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ঝুঁকির মাঝে পড়বে। তাই আমাদের সাথে এবং আশেপাশে থাকা শিশু কিশোরদের সঠিক মানসিক বিকাশ নিয়ে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে