সমস্যাঃ আজ থেকে ৮-৯ বছর আগে কেউ আমাকে বলেছিল যে আমার ঠোঁট কমলার মতো। সেই থেকে আমি ভাবতে শুরু করলাম আমার ঠোঁটে কোনো সমস্যা আছে। তখন থেকে আমি ঠোঁটে ব্যথা অনুভব করতে থাকি। এরপর থেকে নানা রকম অবাস্তব চিন্তা আমার মাথায় আসতে শুরু করে। বিশেষ করে আমি ইংরেজি বর্ণমালায় যা দেখছি সেটাই উল্টা পাল্টা করে বানান করলে কী মানে, কী উচ্চারণ হয় পরীক্ষা করে দেখতাম। তাছাড়া কোনো গান শুনলে সেটা সারাদিন আমার মাথায় থাকে। কেউ অল্প কিছু বললেই আমার ভীষণ কষ্ট হয়, কান্না পায়। আমার আরো মনে হয় আমার গলার রগ ছোটো হয়ে যাচ্ছে। আমি এতে সমস্যা অনুভব করি। এর আগে কয়েকবার ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু চিকিৎসা সম্পূর্ণ করিনি এবং তেমন কোনো উপকারও পাইনি। তখন সমস্যা কিছু কমলেও ঠোঁট ব্যথার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখন আমি কী করতে পারি বলবেন প্লিজ।
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শঃ ধন্যবাদ তোমার প্রশ্নের জন্য। অনেক ছেলেমেয়েরা আছে তারা খুব সেনসেটিভ হয়। কেউ কোনো কথা বললে সেই কথাটা তাদের মনের মধ্যে গেঁথে যায়। আমাদেরকে অনেকেই অনেক কথা বলে কিন্তু আমরা সেটা মনে রাখি না। কিন্তু যেসব ছেলেমেয়েরা সেনসেটিভ পারসোনালিটির হয় বা পারসোনালিটির প্রবলেম থাকলে তারা অনেক সময় অন্যের কথা বিশ্বাস করে ফেলে এবং পরবর্তীতে সেটা নিয়েই ভাবতে থাকে। এজন্য তারা চলাফেরা, কাজকর্ম যাই করুক না কেন তাদের মনে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা আসতে থাকে, চাইলেই তারা চিন্তাগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। এটাকে আমরা অবসেশনও বলে থাকি, যাকে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার বলা হয়। এই রোগের রোগীদের শুধু অবসেশন থাকতে পারে, শুধু কম্পালসান থাকতে পারে, আবার দুটি একসঙ্গে থাকতে পারে। অবসেশন হলো কোনো একটি চিন্তা, ছবি বা তাড়না মনের মধ্যে আসে যেটা রোগীরা ফালতু বলে মনে করেন, মন থেকে বার করার চেষ্টা করেন এবং এই চিন্তাটাই রোগীকে কষ্ট দেয়। তোমার মধ্যে অবসেশনেরও একটা দিক থাকতে পারে। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার অনেক সময় অনেক বিচিত্র উপসর্গ নিয়ে দেখা দিতে পারে। অনেকের অন্য রোগের অংশ হিসেবে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। অনেকের ব্যক্তিত্বের অংশ বা রোগ হিসেবে থাকতে পারে। আর তোমার বাকি যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেটা এর রিয়াকশন বা প্রতিক্রিয়া হিসেবে হচ্ছে। শুধু ওষুধে এই সমস্যাগুলো যাবে না। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে একটু ভালো হলেই আবার চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। তাই আমি বলব তুমি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা গ্রহণ কর এবং সাইকোথেরাপি নাও। তাহলে তুমি নিশ্চই সুস্থ হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে