কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা কিংবা নিজেকে উপযুক্ত প্রমানের প্রচেষ্টা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত মানসিক চাপ ব্যক্তির সফলতার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরণের মানসিক চাপ এড়াতে কিছু কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
কর্মক্ষেত্র নিয়ে সবার মাঝেই প্রথম দিকে কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা দুশ্চিন্তা কাজ করে যা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। অনেকের মাঝে কর্ম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। কর্ম ক্ষেত্রে অন্যান্যদের সাথে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক কিভাবে বজায় রাখবেন এবং সমস্যাগুলোকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটি নিয়ে মনের মাঝে থাকে নানা প্রশ্ন। আবার অনেকের মাঝে নিজেকে প্রমাণ করা নিয়ে থাকে অতিরিক্ত মানসিক চাপ। সুচারু কর্মী তারাই যারা নিজের কাজকে সব কিছুর উপরে স্থান দেয় এবং কাজের প্রয়োজনে সব কিছু করতেই প্রস্তুত থাকে। তারা তাদের নিজস্ব প্রয়োজন এমনকি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে শুধু মাত্র কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান এবং প্রয়োজনকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর নিজেকে প্রমাণের এই একান্ত প্রচেষ্টার মাঝে চরম মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়।
প্রকৃতপক্ষে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার বা প্রমাণের এ ধরণের চিন্তা ভাবনাই মানসিক অশান্তির মূল কারণ হয়ে ওঠে। সত্যিই কি কর্মক্ষেত্র নিয়ে এ ধরণের অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা কোন সুফল বয়ে আনে? বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরণের মানসিক চাপ বৃদ্ধিকারী চিন্তাভাবনা খুব একটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনেনা। বরং এভাবে দুশ্চিন্তা করে নয়, সঠিক কৌশল অবলম্বন করেই কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার সঠিক সুযোগ আসে।
১) কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তাকে চাপের কারণ নয় বরং ইতিবাচকভাবে নেওয়াঃ
কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তাকে ইতিবাচক ভাবে নিন এবং অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে বরং সহজভাবে যেটি প্রয়োজন সেটি করুন। যে পরিস্থিতির সম্মুখীন আপনি এখনো হননি বা ভবিষ্যতের প্রয়োজনে কি কি করবেন এগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করবেন না। সময়ের প্রয়োজনে, কর্মক্ষেত্রে যা যা করতে হবে, করুন। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নিয়ে সেটিকে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ করে তুলবেন না। এতে করে যেমন আপনার কাজগুলি সহজ হবে তেমনি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন।
২) নিজেকে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা করুন, কিন্তু স্বাভাবিক উপায়েঃ
কখনোই নিজেকে অন্যদের তুলনায় অধিক দক্ষ বা উপযুক্ত প্রমাণ করার অযৌক্তিক প্রচেষ্টায় নামবেন না। স্বাভাবিক নিয়মের মাঝে থেকে এবং নিজের সামর্থ্য অনুসারে আচরণ করুন। এতে আপনার মানসিক স্থিতি যেমন ভালো থাকবে তেমনি অন্যদের সাথে সম্পর্কও ভালো থাকবে। কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য হল সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যেটি আপনাকে নিজের দক্ষতা প্রমাণে সহায়তা করবে এবং কর্মক্ষেত্রে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেবার পথ সুগম করবে।
৩) নিজের মনের বিভিন্ন দ্বিধা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করাঃ
কর্মক্ষেত্রের এই চাপ আরও অধিক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে যখন আপনি আপনার মনের দুর্ভাবনা গুলি অন্য কারও সাথে শেয়ার না করে সেগুলিকে মনে পুষে রাখেন। প্রতিটি নতুন পরিবেশই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। এসব পরিবেশে টিকে থাকতে গেলে মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা অতিব জরুরী। আর মানসিক প্রস্তুতির এই সময় কালে যেসব মানসিক সমস্যা উৎপন্ন হয় সেগুলি সমাধানের লক্ষ্যে কাছের মানুষদের আন্তরিকতা এবং অনুপ্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই উদ্ভুত সমস্যাগুলি নিজের আপনজনদের সাথে আলোচনা করে করনীয় নির্ধারণ করলে সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়ে যায়।
মনে রাখবেন, কর্মক্ষেত্রেই নয় বরং সব যায়গাতেই মানসিক চাপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অতি মাত্রায় সচেতন মনোভাব কিংবা অতরিক্ত উৎসাহ, সব কিছুই আপনার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই মানসিক চাপ মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনার প্রচেষ্টাই আপনাকে সব ক্ষেত্রে উপযুক্ত এবং সফলকাম করে তুলবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে