করোনাভাইরাসের টিকা খুঁজে পাওয়া গেলে সেটি সবার জন্যই একটা বিরাট সুসংবাদ। কেবল ‘হর্সশু ক্র্যাব’ বা ‘নাল কাঁকড়া’ ছাড়া। কারণ, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করতে গেলে এই ধরনের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়ে যাবে বহুগুণ।
নাল কাঁকড়া হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে প্রাচীনতম একটি প্রাণী। ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু নাল কাঁকড়া এখনো টিকে আছে। ধারণা করা হয় এরা এই পৃথিবীতে বিচরণ করছে অন্তত গত ৪৫ কোটি বছর ধরে।
এজন্য নাল কাঁকড়াকে অনেক সময় জীবন্ত জীবাশ্ম বলেও বর্ণনা করা হয়। কোন টিকা নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষার জন্য এই নাল কাঁকড়ার রক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
এই মুহূর্তে পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছে বিজ্ঞানীদের দুশটিরও বেশি দল। কোন কোন টিকা এরইমধ্যে মানবদেহে প্রয়োগ করে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হচ্ছে।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা সামনের বছরের মাঝামাঝি নাগাদ একটা টিকা ব্যাপকহারে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
কাঁকড়ার নীল রক্ত কেন দরকার
বিজ্ঞানীরা নাল কাঁকড়ার নীল রক্ত সংগ্রহ করছেন সেই ১৯৭০ এর দশক থেকে। তারা এটি মূলত ব্যবহার করেন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ধমনীর ভেতর সরাসরি ঢুকিয়ে দিতে হয় এমন ঔষধ নির্বিষ বা জীবাণুমুক্ত কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য।
কোন চিকিৎসা সরঞ্জামে যদি ক্ষতিকর কোন জীবাণু থাকে সেটা প্রাণঘাতী হতে পারে। নাল কাঁকড়ার রক্ত এরকম ব্যাকটেরিয়াল টক্সিন বা জীবাণুর বিষের ক্ষেত্রে খুবই বেশি সংবেদনশীল।
মানুষের শরীরে টিকা বা অন্য কোন মেডিকেল সরঞ্জাম যখন ঢুকিয়ে দেয়া হয়, সেগুলো ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে নাল কাঁকড়ার রক্ত দরকার হয়।
নাল কাঁকড়ার রক্ত কেন নীল
নাল কাঁকড়ার রক্তে আছে তামা এবং এ কারণেই তাদের রক্তের রঙ হচ্ছে নীল। মানুষের রক্তে আয়রন বা লোহার উপস্থিতি যে ভূমিকা পালন করে, নাল কাঁকড়ার রক্তে কপার বা তামার কাজ একই।
মানুষের রক্ত লাল দেখায় আয়রন বা লোহার উপস্থিতির কারণে। অন্যদিকে নাল কাঁকড়ার রক্ত নীল কপার বা তামার কারণে। তবে বিজ্ঞানীরা নাল কাঁকড়ার রক্ত নিয়ে আগ্রহী এটি নীল বলে নয়।
নাল কাঁকড়ার রক্তে তামা ছাড়াও আছে একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যেটি আসলে ব্যাকটেরিয়াকে আটকে ফেলতে পারে তার চারপাশে রক্ত জমাট বাঁধানোর মাধ্যমে।
ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ যদি একেবারে কমও হয়, সেটিও এই নাল কাঁকড়ার রক্ত দিয়ে শনাক্ত করা যায়। একারণেই নাল কাঁকড়ার রক্ত দিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের প্রোটিন এজেন্ট বা জমাট বাঁধানোর রাসায়নিক।
রক্ত নেয়ার পর নাল কাঁকড়াগুলো দিয়ে কি করা হয়
নাল কাঁকড়ার উপরের খোলস তাদের হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি ছিদ্র করা হয় এবং সেখানে দিয়ে তার প্রায় ৩০% রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই নাল কাঁকড়াকে আবারো তার প্রাকৃতিক আবাসস্থলে ছেড়ে দেয়া হয়।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রক্রিয়ায় অন্তত দশ থেকে তিন শতাংশ নাল কাঁকড়া আসলে মারা যায়। যেসব নারী নাল কাঁকড়া বেঁচে থাকে, তারা আসলে নতুন কোন কাঁকড়ার জন্ম দিতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে।
কিন্তু বিকল্প কি?
বিশ্বে এখন চার প্রজাতির নাল কাঁকড়া টিকে আছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে যেভাবে নাল কাঁকড়া আহরণ করা হচ্ছে তাতে এই চারটি প্রজাতিই এখন হুমকির মুখে। যেভাবে সাগরে দূষণ ঘটছে এবং তাদের আবাসভূমি ধ্বংস হচ্ছে সেটাও তাদের বিপন্ন করছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে নানা রকম পরীক্ষার কাজে নাল কাঁকড়ার চাহিদা আরো বাড়বে। কারণ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং মানুষ আরো দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকছে।
সংরক্ষণবাদীরা নাল কাঁকড়া ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে সিনথেটিক পরীক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু ঔষধ কোম্পানিগুলো বলছে, নাল কাঁকড়ার রক্তের যে সিনথেটিক বা কৃত্রিম উপাদানের বিকল্প রয়েছে, সেগুলো এখনো নির্ভরযোগ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফিডিএ জুন মাসে জানায় যে আসলে লাল কাঁকড়ার রক্তের বিকল্প যে সিনথেটিক উপাদান, সেটি যে কার্যকরভাবে টক্সিন সনাক্ত করতে পারে তা প্রমাণ করা যায়নি।
ড. বারবারা ব্রামার নিউ জার্সির ‘দ্য নেচার কনজারভেন্সির’ একজন গবেষক। এই নিউ জার্সিতেই সবচেয়ে বেশি নাল কাঁকড়া ধরা হয়।তিনি বলেন, “এখন ৩০টিরও বেশি কোম্পানি টিকা নিয়ে কাজ করছে এবং এই প্রত্যেকটি কোম্পানিকে বহু ধরনের স্টেরাইলিটি টেস্ট চালাতে হয়।”
এর মানে হচ্ছে যেসব ঔষধ কোম্পানি ঔষধ তৈরি করে, টিকা তৈরি করে, তাদের আরও বেশি হারেই নাল কাঁকড়ার রক্ত ব্যবহার করে যেতে হবে তাদের পরীক্ষার কাজে।
সূত্র: বিবিসি
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন