করোনায় আত্মহত্যাকারীদের ৭২ শতাংশই ছাত্রী

0
27

দেশে করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের ১২৭টি আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন বের করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায় আত্মহত্যাকারীদের ৭২ শতাংশই ছাত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বৈশ্বিক আত্মহত্যায় ছেলেদের হার মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশে করোনার পূর্বে ছাত্রদের আত্মহত্যার হার ছিল ৭১ শতাংশ।

গত ২৮ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের কিংস কলেজ অব লন্ডনের ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি’তে গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ‘মহামারিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যায় প্রবণতা ও লিঙ্গভিত্তিক সম্পর্ক’ শীর্ষক এই গবেষণাটি ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারাদেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে উঠে আসে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৪২ শতাংশ। যেখানে আত্মহত্যাকারীদের ৮০ শতাংশ গলায় ফাঁস দিয়ে এবং ১০ শতাংশ বিষ খেয়ে জীবন বিসর্জন দেয়।

আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৬ শতাংশ প্রেমঘটিত, ১৩ শতাংশ অতি আবেগপ্রবণতা, ১১ শতাংশ স্বপ্নপূরণে ব্যার্থতা, ৯ শতাংশ পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত শাসনের কারণে ৪ শতাংশ, শিক্ষাজীবনে অসফলতার কারণে ৯ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যজনিত ৯ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের কারণে ৬ শতাংশ। এছাড়াও আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৩ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকের ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে করোনার আগে করা এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ৫৬টি। এক্ষেত্রে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৭১ শতাংশ ছিল ছেলে ও ২৮ শতাংশ মেয়ে। কিন্তু মহামারিতে আত্মহত্যার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর কারণ মহামারিতে আত্মহত্যার ধরণে পরিবর্তন এসেছে।

গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালে সারা পৃথিবীতে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করে। বিশ্বের ৮০ শতাংশ আত্মহত্যা বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে থাকে।

এই গবেষণাটিতে প্রথম বারের মতো সারাদেশব্যাপী আত্মহত্যার ম্যাপিং করা হয়। এতে জানা যায়, ঢাকা জেলায় এবং দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলিতে আত্মহত্যার প্রবণতা কম। ঝিনাইদহ জেলায় বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজশাহী, গাজীপুর, দিনাজপুর, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ এবং ঢাকায় মেয়েদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। যেখানে ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও শরীয়তপুরে আত্মহত্যায় উচ্চ শিক্ষিতদের হার বেশি।

গবেষণাটি ‘চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। এই গবেষকদলে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মো. আল মামুন, একই বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফিরোজ আল মামুন, ইসমাইল হোসেন এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইসতিহাক রায়হান ও শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ।

গবেষক দল বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় দেশেই জাতীয়ভাবে আত্মহত্যার ডেটাবেজ আছে। এই ডেটাবেজ ব্যবহার করে গবেষকরা বিশ্লেষণ করে ও সরকার নীতি নির্ধারণী কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই যারা আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করে তাদের তথ্যের একমাত্র উৎস সংবাদ ও গণমাধ্যম।’

প্রত্যেকটা আত্মহত্যার পেছনে কোনো না কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। অভিভাবকের কিছু কিছু আচরণ ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে কিন্তু অনেকে তা খেয়াল করে না। এখানে অভিভাবকদের গাফিলতি আছে। তাই সমাজে আত্মহত্যা বিরোধী সচেতনতামূলক আন্দোলন প্রয়োজন।

আত্মহত্যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে সচেতনায় ঘাটতি থাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটছে। যদিও আত্মহত্যাকারীরা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। বিষয়টার সঙ্গে যেহেতু মানসিকতা জড়িত তাই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleঅশান্তি অস্থিরতা কাজ করে
Next articleমাদকাসক্তি ও প্যানিক ডিজঅর্ডার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here