করোনাভাইরাসের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে গন্ধ না পাওয়া। ইউরোপীয়ন গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গন্ধ হারানোর অনুভূতি সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার কারণে গন্ধ হারানোর অনুভূতি হঠাৎ করেই শুরু হয়। সেটা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নাক বন্ধ, সর্দি থাকে না। করোনা আক্রান্ত হলেও বেশিরভাগ মানুষ ভালোভাবে নিঃ শ্বাস নিতে পারেন।
এছাড়া আরেকটি ব্যাপারও ঘটে করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে। তা হলো স্বাদের অনুভূতি হ্রাস পাওয়া।
রাইনোলজি জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তরা স্বাদ পান না কারণ তাদের গন্ধের অনুভূতিও কার্যকর থাকে না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা স্বাদ পান না তারা তিতা বা মিষ্টির মধ্যেও পার্থক্য করতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করছেন, মহামারি করোনাভাইরাস সরাসরি স্নায়ু কোষকে প্রভাবিত করায় গন্ধ এবং স্বাদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
করোনাভাইরাসের প্রধান লক্ষণগুলি হলো-
১. তীব্র জ্বর
২. কাশি বা একটানা কাশি
৩. স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি হারানো
চিকিৎসকরা বলছেন, যাদেরই এমন সমস্যা দেখা দেবে তাদের আইসোলেশনে থাকবে হবে। সেই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
ইংল্যান্ডের পূর্ব আঞ্জলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক অধ্যাপক কার্ল ফিলপট ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর স্বাদ ও গন্ধের পরীক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে ১০ জন করোনা আক্রান্ত, ১০ জন সাধারণ ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত এবং ১০ জন সুস্থ ব্যক্তি ছিলেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম ছিল। এমনকী তারা তেতো বা মিষ্টি স্বাদও শনাক্ত করতে পারছিলেন না।
গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতি হারানো ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা ফিফটি সেন্স দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ফিলপট বলেন, শ্বাসযন্ত্রে আঘাত করা অন্যান্য ভাইরাস থেকে করোনাভাইরাস বৈশিষ্ট্য একদমই আলাদা।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাদ-গন্ধ হারানোর অনুভূতি সাধারণ সর্দি বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করছে।
তিনি বলেন, কফি, রসুন, কমলা বা লেবু এবং চিনি জাতীয় উপাদান ব্যবহার করে লোকজন বাড়িতে বসেই নিজের গন্ধ-স্বাদ পাওয়ার অনুভূতি পরীক্ষা করতে পারেন।
তিনি এটাও বলেছেন, কেউ যদি মনে করেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাহলে তিনি ল্যাবে গিয়ে নমুনা পরীক্ষাও দিতে পারেন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসে।
আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক এবং সাইনাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যান্ড্রু লেন ও তার দল নাকের পেছন থেকে টিস্যুর নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা দেখেছেন করোনাভাইরাস কীভাবে গন্ধের অনুভূতি নষ্ট করে। ইউরোপীয়ান শ্বাসযন্ত্র জার্নালে গবেষণার সেই ফলও তারা প্রকাশ করেছেন।
সেই গবেষণায় তারা অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার একটি এনজাইম শনাক্ত করেন যেটি শুধুমাত্র গন্ধের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষকরা এসিই (অ্যাঞ্জিওটেনসিন রূপান্তরকারী এনজাইম ২) নামের পরিচিত ওই এনজাইমটিকে ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’ বলে মনে করছেন। তাদের ধারণা, ওখান দিয়েই করোনভাইরাস দেহের কোষে প্রবেশ করে এবং দেহকে সংক্রমিত করে।
অধ্যাপক লেন বলেছেন, ভাইরাসগুলো কোন স্থান দিয়ে দেহে প্রবেশ করছে তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।যদিও জানা সম্ভব হয় নাকের মাধ্যমেই ভাইরাসটি শরীরকে সংক্রমিত করছে তাহলে অ্যান্টি ভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সূত্র: বিবিসি