একজন বাবার আর্তি এবং বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবতা

0
76

গত একদিন ধরে ফেসবুকে জনাব আহমেদ রশীদ জয় সাহেবে এর একটি মর্মস্পর্শী লেখা সবাইকে বেদনার্ত করে তুলছে। জনাব জয় তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ঐশীকে হারিয়েছেন। ঐশী স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিল (কীভাবে আত্মহত্যা করল তা উল্লেখ নেই- তবে মাঝখানে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আরেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা হয়েছিল)
একজন মা হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে, একজন চিকিৎসক হিসেবে, সর্বোপরি একজন সাইকয়াট্রিস্ট হিসেবে ঐশীর অকাল মৃত্যুতে আমি ভীষণভাবে ব্যথিত। ঐশীর জন্য প্রার্থনা, সে যেন ওপারে ভালো থাকে। ঐশীর বাবা-মায়ের মর্মবেদনা উপলব্ধি করবার ক্ষমতা বা তাদের সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমাদের কারোরই নেই।
কিন্তু ঐশীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভুল চিকিৎসা এবং সর্বোপরি একটি ঔষধ কে দায়ী করা হয়েছে (Prozac/ Fluoxetine). এই বিষয়ে কিছু বিজ্ঞানসম্মত তথ্য সবাইকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। ঐশীর বাবার লেখার জবাব হিসেবে বা উল্লেখিত সাইকিয়াট্রিস্টকে ডিফেন্ড করতে এই লেখা নয়। কয়েকটি পয়েন্ট ধরে ধরে বলতে চাই-
১. জনাব জয় সাহেবের হারেস মামা বলেছেন “এন্টি ডিপ্রেশন মেডিসিন তো সুইসাইডাল টেনডেন্সি বাড়ায়, বিশেষ করে Prozac ।“ কথাটি একেবারে মিথ্যা নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে প্রোজ্যাক বা ফ্লুক্সেটিন সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি বাড়ালেও কমপ্লিট সুইসাইড এর ঘটনাকে বাড়ায় না।
‘Fluoxetine and suicide: a meta-analysis of controlled trials of treatment for depression’ শীর্ষক ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে একটি মেটাএনালাইসিস এ স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে “Suicidal acts did not differ significantly in comparisons of fluoxetine with placebo and with tricyclic antidepressant. The pooled incidence of suicidal acts was 0.3% for fluoxetine, 0.2% for placebo, and 0.4% for tricyclic antidepressants, and fluoxetine did not differ significantly from either placebo or tricyclic antidepressants. Data from these trials do not show that fluoxetine is associated with an increased risk of suicidal acts or emergence of substantial suicidal thoughts among depressed patients. (BMJ. 1991 Sep 21;303(6804):685-92., https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/1833012)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কার উল্লেখ করেছে “There have been rare reports of fluoxetine and, more recently, paroxetine and sertraline being associated with aggressive or suicidal thoughts and behavior. Soon after its introduction internationally, fluoxetine was claimed to cause suicidal thinking and behaviour . This allegation was investigated by a number of regulatory agencies, including the Food and Drug Administration in the United States in 1991, and was not substantiated. More recently, there have been several further case reports, some given media prominence, and some leading to legal proceedings, not only in relation to fluoxetine , but also to paroxetine and sertraline . Systematic reviews continue to support the view that selective serotonin re-uptake inhibitors (SSRIs) are effective and are not associated with increased suicidality or increased violence.( WHO Drug Information Vol. 16, No. 4, 2002, http://apps.who.int/medicinedocs/en/d/Js4952e/3.5.html )
এবং ফ্লুক্সেটিন কেন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়, তার ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ যখন severe depression থাকে তখন আত্নহত্যা করার এনার্জি ও ড্রাইভ থাকেনা। ঔষধ শুরু করার পর ধীরে ধীরে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে যখন একটু একটু শক্তি ফিরে আসতে থাকে, তখন অনেক সময় রোগী সুইসাইড করার চেষ্টা করে। তবে এই ঘটনাটা সাধারণত ঘটে ঔষধ শুরু করার ১ মাসের ভেতর। ঐশী ৩ মাস ধরে ঔষধ খাবার পর ফ্লুক্সেটিনের প্রতিক্রিয়ার কারণে আত্মহত্যা করে মারা যাবে, বৈজ্ঞানিকভাবে এটার সম্ভাবনা খুব কম।
তবে ফ্লুক্সেটিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে পারে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে, এই তথ্যটি জানা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের জন্য অপরিহার্য্য এবং শিশু-কিশরদের বাবা-মা কেও সাবধান করে দেয়া টা খুবই প্রয়োজনীয়।
২. আগস্ট মাসের ২০ তারিখের দিকে ঐশী ওর মাকে বলছিল, মা আমি পড়তে চাচ্ছি কিন্তু কিছুতেই মন লাগাতে পারছি না। যা পড়ি ভুলে যাচ্ছি। ঐশী কেঁদেছিল সেদিন।– এর সবগুলোই কিন্তু বিষন্নতার লক্ষণ । ডিএসএম ৫ ক্রাইটেরিয়া যা বিশ্বজুড়ে সাইকিয়াট্রিস্টএর জন্য বাইবেল বলে সমাদৃত সেখানে ডিপ্রেশনের গুরুত্বপূর্ণ নির্নয়কারী লক্ষণের মধ্যে বলা আছে ….Markedly diminished interest or pleasure in all, or almost all, activities most of the day, nearly every day, Diminished ability to think or concentrate, or indecisiveness, nearly every day, Recurrent thoughts of death, recurrent suicidal ideation without a specific plan, or a suicide attempt or a specific plan for committing suicide. তাই সিনিয়র সাইকিয়াট্রিস্ট যে বলেছিলেন “এটেনশন কম, ফোকাস কম, এগুলাই ডিপ্রেশনের লক্ষন।“ তা ভুল নয়।
কিন্তু শিশু-কিশোরদের বিষণ্ণতা তীব্র/ severe না হলে শুধুমাত্র কাউন্সেলিং/সাইকোথেরাপি দিয়েই চিকিৎসা করা সম্ভব। ঐশীর ডিপ্রেশন এর মাত্রা তীব্র ছিল কিনা, সেটার উত্তর একমাত্র সেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিতে পারেন (যার নাম উল্লেখ করা হয়নি).
৩. যদিও ঐশীকে বা তার কোন প্রেসক্রিপশন আমি দেখিনি, তবে ট্রিটমেন্ট প্যাটার্ন দেখে মনে হচ্ছে ঐশী কে রিফ্র্যাকটরি ডিপ্রেশন এর চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। রিফ্র্যাকটরি ডিপ্রেশন বলে একধরণের ডিপ্রেশন আছে যেখানে একটি ওষুধে বিষন্নতা নিরসন না হলে আরেকটি ওষুধ যুক্ত করা যায়। ঐশীর ক্ষেত্রে মিরটাজাপিন যুক্ত করা হয়েছিল যেটাকে ভুলক্রমে জনাব জয় সাহেব ঘুমের ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মূলত: এটি বিষন্নতা বিরোধী ওষুধ। রিটালিনকে জয় সাহেব মুড এনহেন্সার হিসেবে লিখেছেন। মূলত: এটি সাইকোস্টিমুলেন্ট- মনোযোগ বাড়ায়। পরবর্তীতে তাকে Luraprex (Lurasidone)ও দেয়া হয়েছে augmentation therapy হিসেবে।
কিন্তু এতগুলো ওষুধ, এত হাই ডোজে এত ছোট মেয়েটির দরকার ছিল কিনা, ঔষধের পাশাপাশি কার্যকরী সাইকোথেরাপী সে পেয়েছে কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন যার উত্তর ও একমাত্র সেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিতে পারেন (যার নাম উল্লেখ করা হয়নি).
৪. ঐশীর বাবার আবেগের জায়গায় পৌছুনোর ক্ষমতা আমার নেই! তাঁর দু:খবোধকে ছোয়ার সাধ্য কারোরই নেই। ঐশী কখনোই ফিরে আসবে না। কিন্তু জনাব জয় সাহেবের লেখা থেকে কয়েকটি ভুল মেসেজ সাধারণের কাছে চলে যেতে পারে।
ক) ‘ওষুধের প্যাকেটের লিফটেট খুব গুরুত্বপূর্ণ’- আসলে মোটেও তা নয়। এটি একটি সাধারণ গাইডলাইন। কোন রেফারেন্স নয়। ওষুধের প্যাকেটের লিফটেট পড়ে চিকিৎসাশাস্ত্রজ্ঞ হওয়া ভয়ংকর। জানতে হবে অথেন্টিক রেফারেন্স থেকে। এফডিএ (FDA), বিপি (British Pharmacopoeia) কী বলে সেটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স ।
জনাব জয় সাহেব ওষুধের প্যাকেটের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন ‘ফ্লুক্সেটিন ১৮ বছরের নিচে দেয়া যাবেনা !” এটি একেবারেই ভুল তথ্য। প্রকৃতপক্ষে, এফডিএ আর বিপি বলে শিশু কিশোরদের জন্য প্রথম সারির এন্টিডিপ্রেসেন্ট হচ্ছে ফ্লুক্সেটিন।৮ বছরের উপরের শিশুদের প্রোজ্যাক দেয়া যাবে।
এফডিএ (ফেডারেল ড্রাগ অথরিটি) এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে “ FDA: Don’t Leave Childhood Depression Untreated” . FDA has approved two drugs—fluoxetine (Prozac) and escitalopram (Lexapro)—to treat depression in children. Prozac is approved for ages 8 and older; Lexapro for kids 12 and older. Depression can lead to suicide. Children who take antidepressants might have more suicidal thoughts, which is why the labeling includes a boxed warning on all antidepressants. But the boxed warning does not say not to treat children, just to be aware of, and to monitor them for, signs of suicidality. (https://www.fda.gov/…/fda-dont-leave-childhood-depression-u… )
UK থেকে প্রকাশিত Maudsley prescribing guideline বইটির “Depression in children and adolescents’ অধ্যায় থেকে হুবহু উদ্বৃত করছি ‘Fluoxetine is the first line pharmacological treatment. In the UK, it is licensed for use for children and young people from 8-18 to treat moderate-severe major depression which is unresponsive to psychological therapy after 4-6 sessions. It is recommended that pharmacotherapy should be administered in combination with a concurrent psychological therapy’
ল্যানসেট এর মত জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে Fluoxetine is probably the best option to consider when a pharmacological treatment is indicated. (https://www.thelancet.com/…/PIIS0140-6736%2816%293…/fulltext )
সারমর্ম হল এই যে, ফ্লুক্সেটিন ৮-১৮ বছরের শিশু-কিশোরদের মাঝারি-তীব্র বিষন্নতার চিকিতসার জন্য ব্যবহার করা যাবে। এবং সারা পৃথিবীর মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ব্যবহার করে আসছেন, আমরাও ব্যবহার করি।
কিন্তু, ঐশীকে কি ঔষধ ছাড়া শুধু কাউন্সেলিং দিয়ে ভাল করা যেত? ফ্লুক্সেটিনের এত হাই ডোজ কি দরকার ছিল?? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
খ) ঐশীর বাবার লেখায় উল্লেখ আছে – কোরিয়ান এক ডাক্তার আমার বন্ধুকে বলেছে, একটা ছোট বাচ্চাকে এক বয়স্ক বদ্ধ পাগলের ঔষধ দিয়েছে!! আসলে বদ্ধ পাগল বলে কোনো রোগ নেই। কোরিয়াতে আছে কিনা জানা নেই। বদ্ধ পাগল শব্দটিই মানসিক রোগাক্রান্তদের জন্য অপমানসূচক। ঐশীর ঔষধ গুলির ভেতর শুধুমাত্র Luraprex ঔষধটি গুরুতর মানসিক রোগ / psychotic illness এর চিকিতসার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ ধরনের anti-psychotic drug তীব্র বিষন্নতায়, augmentation হিসেবে ব্যবহার করা হয় (লেখায় আগেও উল্লেখ করেছি) যেটাকে ‘বদ্ধ পাগলের ঔষধ’ হিসেবে তকমা লাগানো হচ্ছে
৫. এবার আসা যাক সিনিয়র সাইকিয়াট্রিস্ট এর ভূমিকা কি ছিল ? এক কথায় উত্তর হবে হয়তো সঠিক ডায়াগনোসিস আর সঠিক ওষুধ দেবার পরও কেবল এপ্রোচের কারণে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। প্রথম কথা বলবো তিনি যদি বলেন যে “ আমি ব্ল্যাক বক্স ওয়ার্নিং জানিনা” তবে বলতে হবে তার জ্ঞান আপডেট নয়। আর এই জ্ঞান আপডেটের জন্য মোটেই ওষুধের বাক্সের লিফটেট পড়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি লেটেস্ট জার্নাল পড়বেন, কন্টিনিউইং মেডিকেল এডুকেশনে অংশ নেবেন আর টেক্সট পড়বেন। তিনি অবশ্যই ওষুধের সাইড এফেক্ট সম্পর্কে রোগী ও তার স্বজনদের নিজে অবহিত করবেন (সহকারীর মাধ্যমে নয়) । কেন ওষুধ বাড়াচ্ছেন তা ব্যাখা করবেন। ‘মুখ দেখেই বুঝতে পারি’ মার্কা ম্যাজিশিয়ান না হয়ে মুখ আর দেহভংগির কোনে কোন অংশ ডিপ্রেশনকে ব্যাখা করে তা জানাবেন। পলিফার্মেসী কেন করলেন তার যুক্তি দেবেন। কোনো কোনো কারণে পলিফার্মেসীর প্রয়োজন হতে পারে। কোরিয়া আর লন্ডনের ডাক্তারগণ সম্পূর্ণ কনটেক্সট জেনে মন্তব্য করলে সঠিক হতো। কেবল প্রেসক্রিপশন থেকে রোগীর বিশেষ করে মানসিক রোগীর কনটেক্সট বোঝা অসম্ভব । সিনিয়র জুনিয়র সকল সাইকিয়াট্রিস্ট এর উচিৎ রোগী আর রোগীর স্বজনদের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া। ওষুধের প্রতিক্রিয়া আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানানো।
৬. এবার আত্মহত্যা নিয়ে দুএকটি সাধারণ কথা। যা সকলের জানা উচিৎ বলে মনে করি। এই কথাগুলোর সাথে জনাব জয় সাহেবের লেখার সরাসরি সম্পর্ক নেই। কেবল সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিজ্ঞানসম্মত কয়েকটি কথা বলতে চাই।
টিনএজার বা শিশুকিশোরেরা কেন আত্মহত্যা করে এ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী বিস্তর গবেষণা হয়েছে। যতগুলো কারণ উঠে এসেছে তার এক থেকে বিশ নম্বর কারণের মধ্যে কোথাও এন্টিডিপ্রেসেন্ট কারণে সুইসাইড করে তা একবারের জন্যও বলা হয়নি। যদি তাই হতো তবে বিগদ ৪৭ বছর ধরে এই ওষুধটি বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক প্রেসক্রাইবড এন্টিডিপ্রেসেন্ট হতোনা। ব্ল্যাক বক্স ওয়ার্নিং থাকার অর্থ এই নয় যে এই ওষুধ দেয়াই যাবেনা।
সার্বিকভাবে সবধরণের টিন এজ সুইসাইডের মূল কারণ খুজতে হবে চার জায়গায় –
এক : একজন টিন এজারের নিজের ভেতর- অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্বটি কেমন। তার নিজস্ব রেজিলেন্সি কতটুকু। কোনো জেনেটিক সম্পর্ক আছে কিনা- যেমন নিকট আত্মীয়দের ভেতর বিষণ্ণতা/মানসিক রোগ। তার নিজের কোনো ধরণের মানসিক রোগ আছে কিনা- বিশেস করে ডিপ্রেশন, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার , সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার। সে নিজে মাদকাসক্ত কিনা
দুই : তার পরিবারে – পরিবারে সবার ভেতর সম্পর্ক কেমন ? বাবা-মায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন? কোনো বিচ্ছেদ, কলহ বা দ্বন্দ্ব চলছে কিনা? পারিবারিক কাঠামো কতটুকু সুসংহত? এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি সাপোর্ট আছে কিনা ? পরিবারে কোনো মাদকাসক্তির ইতিহাস আছে কিনা ? আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তার পরিবারে সে কোনো ধরণের আত্মহত্যার চেষ্টা দেখেছে কিনা। পরিবারে কোনো রিজেকশন আছে কিনা।
তিন: তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশঃ তার বন্ধু কেমন ? স্কুল কেমন ? স্কুল থেকে কোন ধরণের মূল্যবোধ সে শিখছে? স্কুলে কোনো বুলিং হচ্ছে কিনা। স্কুলের পড়া, কালচারের সাথে টিনএজারের পারিবারিক আর সামাজিক কাঠামোর কোনো বিরোধ আছে কিনা। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে দ্বন্দ্ব বা জটিলতা আছে কিনা। কোনো ধরণের শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা আছেকিনা। তার কোনো ধরণের ব্যর্থতা আছে কিনা।
মনে রাখতে হবে যে আত্মহত্যা মাল্টিফ্যাকটোরিয়াল। একটি কারণে কেউ আত্মহত্যা করেনা। একক কোনো কারণকে দায়ী না করে সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আস্থায় আমলে আনতে হবে। নিজেদের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েই টিন এজ সুইসাইড কমানো যাবে।
শেষ কথা:
ঐশীর বাবার কথাটি আবার উল্লেখ করতে চাই ““আমি চাই না আর কোন বাবা মা’র কপালে সারা জীবনের দুর্বিসহ কষ্ট আসুক। আর কেউ যেন ভুল না করেন।“ আমরাও চাইনা এমন ঘটনার একটি ও ঘটুক। চাইনা বলেই আমার এই ব্যাখ্যা আর কয়েকটি অনুরোধ। উনার লেখাকে নানাভাবে ব্যাখ্যায়িত করে অসংখ গ্রুপে শেয়ার হচ্ছে তাতে মানুষ বিষন্নতার চিকিৎসা বিমুখ হয়ে পড়বে। অথচ বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ১ নম্বর কারণ বিষন্নতা। তাই চিকিৎসা বিমুখ হয়ে গেলে বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যা বেড়ে যেতে পারে।
• বিষন্নতার বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। পরিবারের কারো বিষন্নতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
• এটি আপনার অধিকার, যে ওষুধটি আপনি খাচ্ছেন বা পরিবারের সদস্যদের খাওয়াচ্ছেন সেটা সম্পর্কে জানা, তবে এই জানার উৎস যেন ওষুধের লিফটেট না হয়। অথেন্টিক বই বা ওয়েব পেজ থেকে জানুন। আর চিকিৎসককে বাধ্য করুন- সময় দিয়ে ব্যাখা দিতে। নইলে কম সময় দেয়া তারকা চিকিৎসককে বর্জন করতে শিখুন।
• অযথা আবেগের বশবর্তী হয়ে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আর ওষুধ নিয়ে অহেতুক আতংকিত হবেন না।
• সবশেষে বলবো আর একটি কথা, এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের মূল শ্লোগান ছিলো, ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’। সুতরাং কোনো বিষয় সম্পর্কে কিছু বলার বা লেখার আগে বিজ্ঞানসম্মত সত্য-মিথ্যা যাচাই করে মন্তব্য করুন।

Previous articleজাদুঘর কিংবা আর্ট গ্যালারিতে বেড়ালে ভালো থাকে মানসিক স্বাস্থ্য
Next articleবারবার নিজের ওজন মাপলে বিষণ্ণতা বাড়ে:গবেষণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here