প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মানসিক অসন্তোষের কারণ হয়ে ওঠে এবং আত্মসচেতনতা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
প্রতিটি মানুষই চায় যে তার মনের সব ইচ্ছা এবং স্বপ্ন যেন পূরণ হয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এই ইচ্ছা অবচেতন ভাবেই অন্য কাউকে দেখে বা তার অনুকরণে সৃষ্টি হয়। কারও সফলতা এক্ষেত্রে তাকেও মানসিকভাবে তাড়িত করে যে, তাকেও সেই বিষয়ে সফলতা পেতেই হবে এবং সফলতা বা ইচ্ছা পূরণে ব্যর্থতা তার মানসিক অসন্তোষের কারণ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সে নিজেও এটি নিয়ে নিশ্চিত থাকেনা যে, সে আদৌ সেই কাজটি করতে চায় কিনা বা আদৌ এটিতে তার ইচ্ছা আছে কি না। মনস্তত্ত্ববিদগণ এক্ষেত্রে এই সমস্যাটিকে ‘সেলফ ইনফিল্ট্রেশন’ বা একজন ব্যক্তির মোহগ্রস্ত আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এখানে ব্যক্তি অন্য কারও ইচ্ছাকেই নিজের ইচ্ছা বা করণীয় হিসেবে ভেবে নেয় এবং যখন সেটি পূরণ হয়না তার মাঝে ক্রোধ, ক্ষোভ এবং মানসিক পীড়ার সৃষ্টি হয়।
কোন ব্যক্তি বিভিন্ন ভাবে ‘সেলফ ইনফিল্ট্রেশন’ বা অন্যের দ্বারা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। যেমন- পিতামাতার ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা হিসেবে বিবেচিত করে যে কোন পেশা বেছে নেওয়া এ ধরণের সমস্যার অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের সক্ষমতা বা নিজে কি চাইছে সেটি বিবেচনা না করে তার পিতামাতার ইচ্ছা বা স্বপ্নকেই নিজের বলে মেনে নিয়ে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করে। আর এই প্রয়াস অনেক ক্ষেত্রেই বিফলতায় পর্যবসিত হয় এবং ব্যক্তির জীবন কঠিন করে তোলে, মানসিক চাপ সহ অন্যান্য সমস্যা বাড়ায় এবং মানসিক প্রশান্তি কমায়। সে ব্যক্তি এটি কখনো অনুভবই করতে পারেনা যে সমস্যাটি প্রকৃতপক্ষে তার চাওয়া বা আশা পূর্ণ না হওয়া নিয়ে নয় বরং মূল সমস্যাটি হল তার নিজের সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
গবেষণায় দেখা গেছে এ ধরণের অসচেতনতা সাধারণত মানুষের আত্মপরিচালনায় ঘাটতি এবং অন্যদের আচার আচরণ বা ইচ্ছায় নিজে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে সৃষ্টি হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, যখন আমরা নিজেদের মনের ইচ্ছা বা অনুভূতিকে বুঝতে ব্যর্থ হই, তখন সব কিছুই আমাদের কাছে একই রকম মনে হয়, আমরা যা কিছু দেখি আমাদের ভালোলাগে এবং আমরা অন্যদের অনুকরণ বা অনুসরণ করি। এ ধরণের মনোভাব আমাদের অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত করে দেয় এবং আমরা নিজের ও অন্যদের স্বত্বাকে পৃথক করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। ফলশ্রুতিতে আমরা মনঃকষ্টে ভুগি, ব্যর্থতায় আমাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে ফেলি।
মনস্তত্ত্ববিদগণ এ ধরণের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দূর করতে বেশ কিছু কার্যকরী পরামর্শ প্রদান করেছেন। তাদের মতে, ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুদের স্বাধীন স্বত্বা নিয়ে বড় হবার সুযোগ প্রদান করা যায় তাহলে পরবর্তীতে তাদের মাঝে এ ধরণের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। আত্মনির্ভরশীলতা ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা প্রদান করে এবং নিজের ইচ্ছা কি সেটি বুঝতে সহায়তা করে। ফলে ব্যক্তি কখনোই অন্যদের অনুকরণ করেনা বা অন্য কারও ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের মিথ্যে প্রয়াস করার মানসিকতা ধারণ করা থেকে বিরত থাকে। আত্মসচেতনতা আরেকটি পন্থা যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজের স্বত্বাকে চিনতে পারে। সে নিজের ইচ্ছা, আগ্রহকে অন্যদের ইচ্ছা থেকে পৃথক করার সক্ষমতা অর্জন করে এবং তার মাঝে স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা কখনোই মোহ বা অনুকরণের ফলাফল হিসেবে ভ্রান্তি ও মনঃকষ্টের সৃষ্টি করেনা।
সচেতনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ ব্যক্তিকে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মনোবল প্রদান করে। আর একই সাথে ব্যক্তি তার নিজস্বতাও খুঁজে পেতে সমর্থ হয় এবং ইচ্ছা পূরণের ব্যর্থতায় মানসিক অসন্তোষের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে দূরে থাকে।
সাইকোলজিটুডে থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে