আমার বাচ্চা প্রচুর মিথ্যে কথা বলে

সমস্যা:
আমার বাচ্চার বয়স ৭ বছর, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ওর সমস্যা হল ও প্রচুর মিথ্যা কথা বলে এবং এমন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বলে সেটা যে কেউই বিশ্বাস করবে। যার জন্য অন্যের সামনে প্রায়ই আমাকে অপ্রস্তুত হতে হয়। আবার ওর মধ্যে অভিনয় করার বিষয়টিও দেখা যায়, যেমন- যখন ওর বাবা বাসায় থাকে মনে হয় ওর মত ভাল ও ভদ্র ছেলে আর হয় না তখন ওর এক রকম রূপ, এক রকম আচার আচরণ আর ওর বাবা বাসায় না থাকলে আর এক রকম রুপ আর এক রকম আচার আচারণ। লেখাপড়ায় আগ্রহ একেবারেই নেই। পড়তে বসলে তাড়াহুড়ো করে কোনোরকম পড়াটা শেষ করে। সারাক্ষণ হয় কম্পিউটার না হয় মোবাইলে গেম খেলে আর কার্টুন দেখে। এগুলো কি পরিবর্তন করা সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তাহলে কিভাবে প্লিজ আমাকে জানাবেন।

 
পরামর্শ:
প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এখানে মায়ের সাথে বাচ্চার কেন সমস্যা হচ্ছে এই ব্যাপারটা একটু বোঝার দরকার আছে। যেহেতু বাবা সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে এবং বাবাই আসলে রোজগার করে তাই অনেক সময় বাচ্চারা বাবা নামক ফিগারটাকে ভয় পায় যে বাবাকে রাগানো যাবে না। এক্ষেত্রেও আপনার বাচ্চা হয়ত বাবাকে ভয় পায় যে উনি একজন পুরুষ মানুষ উনি ধরলে বেশি বকাঝকা বা মারধর করবেন অথবা তার সামনে ভাল না থাকলে সে যা ডিমান্ড করে বা চায় সেই জিনিষগুলো পাবে না সেজন্য সে বাবাকে খুব ভয় পায় বা তোয়াজ করে চলে যার জন্য বাবা যখন বাসায় আসে সে তখন ঠিকমত চলে। আপনার বাচ্চা কিন্তু আসলে বুঝতে পারে সে কি কি খারাপ আচরণ করে। এ আচরণগুলো তার ইচ্ছাকৃত আচরণ কারণ ও যদি না বুঝে আচরণগুলো করতো তাহলে সবসময় একই রকম আচরণ থাকত সেটা বাবা বাসায় থাকুক বা না থাকুক। যেহেতু আপনার বাচ্চা এটা বুঝে এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে করে তার মানে সে জানে কোন কোন  আচরণ একজন মুরুব্বীর জন্য আপত্তিজনক কোন কোন আচরণ ওর ঠিক না সে জন্য তার ঐসব আচরণগুলো কোনোভাবেই বাবার সামনে আসতে দেয় না এবং খুবই সুবোধ বালকের মত চলে। তার এক্টিং এর যে ব্যাপারটা মায়ের উচিৎ হবে তার বাবার সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। একই ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় সুবিধা নেওয়ার জন্য একেক রকম আচরণ করে। এই সুবিধাবাদী ক্যারেক্টার এবং মিথ্যা বলে মানুষজনের সামনে মাকে embarrass করার বিষয়গুলো বাবাকে বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে বাচ্চার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে তাকে সাহায্য করার জন্য। এবং মাকেও বুঝতে হবে যে কোন কোন জায়গায় বাচ্চা মিথ্যা কথা বলতে পারে। এভাবে চেষ্টা করে দেখুন আশা করি আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারপরেও যদি সমাধান না হয় তাহলে আমি বলব একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে। এই ধরনের আচরণগুলোকে আমরা odd অর্থাৎ oppositional defiant disorder বলি সেটা শুরু হচ্ছে কিনা অথবা coduct disorder আছে কিনা সেটা identify করার দরকার আছে এবং সেরকম ভাবে চিকিৎসারও প্রয়োজন আছে। সঠিক চিকিৎসা সঠিক সময়ে করলে বাচ্চার এই আচরণগুলো না বেড়ে ঐ জায়গা থেকে শোধরানো যেতে পারে। আপনার বাচ্চার চিকিৎসায় ঔষধের চেয়ে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপীর বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleসিলেটে যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার
Next articleসিলেটে যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here