ডা. ফাতেমা জোহরা
সহকারী অধ্যাপক,মানসিক রোগ বিভাগ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
একজন সাধারণ মানুষ যার কখনো কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা ছিল না, তাকেও প্রিয়জনের মৃত্যুর আঘাত মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত করতে পারে। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হঠাৎ প্রিয়জনের মৃত্যু এবং সাধারণ মানসিক রোগের সূত্রপাতের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে যেগুলো আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রিসহ অন্যান্য অনলাইন জার্নালে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়।
৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে, প্রিয়জনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু যেকোনো মানসিক রোগের ঝুঁকিকে প্রায় দ্বিগুণ করে। গবেষণার ফলগুলোতে, ৩০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল না। আপনজন হারানোর মানসিক চাপ, তুলনামূলকভাবে দূরের মানুষ হারানোর চাইতে অনেক বেশি বেদনাদায়ক।
হঠাৎ করে প্রিয়জনকে হারানোর ফলে বিষণ্নতা, অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য সেবন এবং উদ্বেগজনিত ব্যাধিগুলির ঝুঁকি বেড়ে যায়, যার মধ্যে প্যানিক ডিসঅর্ডার, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং নানা ধরনের ফোবিয়া রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের, যার ঝুঁকি অন্যান্য মানসিক রোগের চাইতে প্রায় ৩০ গুণ বেশি। এছাড়া অন্যান্য ব্যাধিগুলি বেশির ভাগ সময় বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণীয় হয়। যদিও বৃদ্ধ বয়সে নতুন করে মানসিক ব্যাধি হওয়ার নজির সচরাচর দেখা যায় না, তবুও প্রিয়জনের শোকে তা হতে পারে।
অনেক মানুষ প্রথম মৃত্যুর কথা জানার পর প্রাথমিক পর্যায়ে অসাড়তা অনুভব করতে পারে, কিন্তু এই শোক প্রকাশ ভিন্নভাবেও ঘটতে পারে। যেমন, প্রিয়জনের মৃত্যুকে অস্বীকার বা অবিশ্বাস করা, শোক, দুঃখ, রাগ, হতাশা, অপরাধবোধ, নিয়তিকে দোষারোপ করা এই অনুভূতিগুলো সাধারণ থেকে তীব্রমাত্রায় হতে পারে।
আবেগের তীব্রতা এবং সময়কাল, মানসিক অবস্থার যতটা দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে পারে তার জন্য ব্যক্তি প্রস্তুত নাও থাকতে পারে, এমনকি নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্দেহ শুরু করতে পারে। একটি বড় ক্ষতির প্রভাব সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে সময় লাগে। মানুষ কখনোই প্রিয়জনদের হারানোর দুঃখ সম্পুর্ণরূপে ভুলে যেতে পারে না। তবে, সময়ের সাথে সাথে দুঃখের তীব্রতা কমতে থাকে।
প্রিয়জনের মৃত্যু সামলে ওঠা সহজ নয়। এর প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে মাস বা বছর স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু এর কারণে ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ পেটে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস, পেটে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, অতিরিক্ত শারীরিক দূর্বলতা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার চিন্তা। একারণেই যত দ্রুত সম্ভব একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত।
প্রিয়জনের মৃত্যু শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কদেরই না শিশুদের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। পিতা-মাতার মৃত্যু ছোট বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে কষ্টাদায়ক হতে পারে, কারণ তা তাদের নিরাপত্তা বা বেঁচে থাকার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। প্রায়শই, তারা তাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়ে থাকে। অনুভূতি প্রকাশে অক্ষমতা খুব ছোট বাচ্চাদের একটি বিশেষ অসুবিধায় ফেলে। যেমনক বিছানা ভেজানো, মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যা সংবেদনশীল বলে মনে হয়।
একটি সন্তানের দুঃখের সাথে মোকাবিলা করা শোকার্ত পিতা-মাতার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই কারণে বাচ্চাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে হবে যাতে তারা সহজে বুঝতে পারে। মৃত্যু এবং যে ব্যক্তি মারা গেছে সে সম্পর্কে তাদের সাথে কথা বলার জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। তাদের অনুভূতি বুঝে সেই অনুযায়ী তাদের কাজে সাহায্য করতে হবে।
প্রিয়জন হারানোর দুঃখ নিয়ে বেচে থাকা একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রিয়জনের মৃত্যু হলে শোক অনুভব করা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হল, নিজেকে শোক প্রকাশ করতে দেওয়া। একে মোকাবেলা করার অনেক উপায় রয়েছে। যত্নশীল মানুষ খুঁজে বের করা, আত্মীয় এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো যারা ব্যক্তির অনুভূতি বুঝতে পারে। যারা ইতিমধ্যেই প্রিয়জন হারিয়েছে এমন কিছু মানুষের সাথে নিজের অনুভূতি শেয়ার করা। ব্যক্তির অনুভূতি প্রকাশ করা জরুরি। সে কেমন অনুভব করছে তা অন্যদের বলা তাকে শোক প্রকাশের মধ্য দিয়ে কাজ করতে সাহায্য করবে।
নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে সাথে পুষ্টিকর খাবার এবং প্রচুর বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। দুঃখের সাথে মোকাবিলা করার জন্য নিজে থেকে ওষুধ বা মাদকের উপর নির্ভরশীল হওয়া বিপদজনক হতে পারে। জীবনের এই পরিবর্তনকে মেনে নিজের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মনোবল রাখতে হবে।
যেকোনও বড় পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। যেমন, পুনরায় বিয়ে করা, চাকরি পরিবর্তন করা বা অন্য সন্তান ধারণ করা ইত্যাদি। ঘটে যাওয়া ক্ষতির সাথে মানিয়ে নিতে নিজেকে সময় দেওয়া এবং ধৈর্য ধরা উচিত। এটি ঠিক হতে মাস এমনকি বছরও লাগতে পারে। যদি মানসিক রোগের তীব্রতা বেশি হয় তাহলে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
দুঃখ ভাগ করে নিতে হবে। অন্যদের সাথে জীবনের বেদনাময় মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে হবে, এছাড়া তাদেরও মৃত ব্যক্তির স্মৃতি ও অনুভূতি শেয়ারে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ব্যবহারিক সাহায্য করা, রান্না করা এবং যাবতীয় কাজ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শোকের স্মৃতিকে ভুলে থাকা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, একটি বড় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগতে পারে। প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্যকে উৎসাহিত করুন।
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে, মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই উৎপাদনশীল এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে যদি সময়মত চিকিৎসা নেয়। কাজেই রোগ হলে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে।
- অহেতুক মৃত্যু ভয় ?
- এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
- চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০ - আরো পড়ুন- MK4C-তে কীভাবে টেলিসাইকিয়াট্রি চিকিৎসা নেবেন?