আইসোলেশন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এক গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ব্যবস্থা। কিন্তু এই আইসোলেশনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ মানসিক সমস্যা। কোভিড-১৯ মোকাবেলা যেমন জরুরী, তেমনি এর সাথে উদ্ভূত মানসিক সমস্যাগুলো নিরাময়ও একই রকমভাবে জরুরী।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রেখে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে অবস্থান করছি। বন্ধু, প্রতিবেশী এবং পরিচিত লোকজনদের সাথে একটা দীর্ঘ অন্তরাল এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যহত হওয়ায় স্বভাবতই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সাথে সাথে তাই বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যাও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। অতি ধীর গতিতে আমাদের সবার মাঝে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব আমাদের সামাজিক জীবন বাঁধাগ্রস্ত করছে। অর্থনৈতিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন কাজকর্ম, ঘোরাফেরা, চিকিৎসা, শিক্ষা সব কিছু কঠোরভাবে প্রতিবন্ধিত হওয়ায় মানসিক অস্থিরতা, উদ্বিগ্নতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
মানুষের মাঝে দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতার প্রধান কারণ হল কোভিড-১৯ এর প্রতি ভয়। সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগ হওয়ায় এর সম্পর্কে আমরা খুব বেশী কিছু জানিনা এবং এখন পর্যন্ত এর কোন কার্যকরী ওষুধ ও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এক অজানা আশঙ্কায় সর্বদাই আমরা সবাই বিচলিত রয়েছি। স্বাভাবিক জীবন ধারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। কোভিড-১৯ নিয়ে এই মানসিক উদ্বিগ্নতা এক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তাই মানসিক সমস্যা নিরসনে আমাদের সবারই মনযোগী হওয়া অতি আবশ্যক।
কোভিড-১৯ মোকাবেলার নানা চ্যালেঞ্জের সাথে সাথে নতুন করে সামনে আসছে একাকীত্ব, অবসাদ, বিষণ্ণতা, নির্যাতন, ধর্ষণ সহ নানাবিধ সমস্যা যা এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য অতি মাত্রায় সৃষ্টি পেয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এখন হতাশা, ভয় এবং আশঙ্কা স্থান করে নিয়েছে। অনেকের মাঝে বিষণ্ণতার মাত্রা এতোটাই বেশী যে তারা আত্মঘাতী হয়ে উঠছেন। সারাক্ষণ ঘরে আবদ্ধ থাকায় মানুষ সামাজিক মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছেনা। তাই অধিকাংশ মানুষই মানসিক সমস্যা নিবারণের জন্য কাছের বা পাশের কারও সাথে আলোচনার সুযোগও পাচ্ছেনা। এতে করে এক চরম পরিণতির দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
কোভিড-১৯ মোকাবেলার দিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে তেমনি একই সাথে উদ্ভূত এসব মানসিক সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের মানসিক সমস্যা নিরসনে নিম্নের ব্যবস্থা সমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।
১) নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারঃ যে কোন ধরণের চিকিৎসা প্রদান এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে অনেকটাই সহজ। চিকিৎসা গ্রহণের বা প্রদানের ক্ষেত্রে এখন আর সরাসরি একে অপরের কাছে না গেলেও চলে। এক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মাধ্যমের সহায়তায় মানুষ তাদের মানসিক সমস্যার কথা নির্দিষ্ট স্থানে জানাতে পারে। এতে করে আইসোলেশনে থাকাকালীন তাদের যে সব মানসিক সমস্যা হচ্ছে এগুলো নিয়ে তারা নির্ধারিত ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ পাবে এবং মানসিক ভাবে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবে।
২) প্রয়োজনে ওষুধ পৌঁছে দেওয়াঃ অনেকক্ষেত্রেই হাতের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় অনেকেই চিন্তায় থাকেন। আবার সব ওষুধ সব স্থানে প্রতুল ও নয়। তাই ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের হোম ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে ঘরে ঘরে মানসিক সেবা সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
৩) প্রয়োজনে জরীপের ব্যবস্থা করাঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা গ্রহণ করতে অনুৎসাহিত থাকেন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জরীপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরাসরি বাড়িতে না গিয়ে ফোনের মাধ্যমে প্রত্যেক পরিবারে তাদের সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জরীপ করলে সহজেই তাদের সমস্যা গুলি বের হয়ে আসবে এবং সেবা নিশ্চিত করে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এভাবে কোভিড -১৯ মোকাবেলার পাশাপাশি এর থেকে উদ্ভূত মানসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করাও সম্ভব হবে।
জরুরী কোভিড-১৯ সেবা প্রদানের সাথে সাথে আগেভাগেই জরুরী মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান শুরু করা প্রয়োজন। আগেভাগে ব্যবস্থা নিতে পারলে সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ইত্যাদির ফলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মানসিক সমস্যার যে চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে সেটা রোধ করা সম্ভব হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন