অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে অতিচঞ্চলতা কিভাবে প্রভাব ফেলে

0
46

ADHD একটি ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাঃ

লক্ষ লক্ষ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক লোক এর শিকার। এর মূল উপসর্গগুলি রোগের নামের মধ্যে নিহীত। (৬-১২ বছরের মধ্যে শুরু হয়)

  • ক. Attention বা মনোযোগের অভাব
  • খ. অস্থিরতা
  • গ. অতিচঞ্চলতা
  • ঘ. আবেগ প্রবণতা ইত্যাদি।

পরিসংখ্যানঃ

  • ক. ১৮ বছরের নিচে ৬-৭ শতাংশ (DSM)
  • খ. ছেলেদের মধ্যে বালকদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশী (৩:১)
  • গ. যুক্তরাষ্ট্রে বেশী, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য এশিয়ায় তুলনামূলকভাবে কম। হয়তো Diagnostic পদ্ধতির কারণে হতে পারে।
  • ঘ. এক তৃতীয়াংশ থেকে দুই তৃতীয়াংশ শিশু পরবর্তীতে ADHD Synmptom ধারণ করে। ( 2-5% of Adult)।

ধরণগুলিঃ

  • ক. প্রধানত অমনোযোগী
  • খ. অথিরতা/অতিচঞ্চলতা
  • গ. মিশ্র

প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সমস্যাঃ

Hyperactive বা অস্থিরতা, শৈশবে শুরু হয়ে অনেক সময় সারা জীবন চলতে পারে। Adult ADHD তে

  • ক. Focusing বা মনঃসংযোগ এর সমস্যাটাই বেশী
  • খ. আবেগ অনিয়ন্ত্রিত
  • গ. মনের চঞ্চলতা
  • ঘ. বিশেষ করে দীর্ঘদিন একটা নিয়ম মেনে চলতে পারেনা
  • ঙ. সংবাদ বা তথ্য মনে করতে পারে না
  • চ. মনোযোগ দিতে অসুবিধা
  • ছ. কাজের বিষয়গুলি গুছাতে পারেনা
  • জ. নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারে না বা কাজের জায়গায় উপস্থিত হত্যে পারে না

এসব কারণে একজন Adult ADHD রোগীর জীবনের বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যেমনঃ

  • ক. আবেগ অনুভূতি
  • খ. সামাজিকতা
  • গ. প্রশিক্ষণগত
  • ঘ. বৈবাহিক
  • ঙ. আইনগত
  • চ. আর্থিক ও বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ে

নানা রকম সমস্যাগুলো চলতে থাকার ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে।

রোগ নিরুপণঃ

  • ক. পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের Observation
  • খ. স্কুলের Report
  • গ. অন্যান্য মাথী সমস্যা (Co-morbidity)

কারণঃ

Adult ADHD তে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলোকে নির্দিষ্ট করে ধরা না গেলেও মূলত

ক. বংশগত (Genetic)

খ. পরিবেশ (Environment) কারণে হতে পারে।

চিকিৎসাঃ

Adult ADHD টে দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ক. মনোচিকিৎসা  বা কাউন্সিলিং (বিহেভিয়ার থেরাপী)

খ. ওষুধ

ওষুধের মধ্যেঃ

মস্তিষ্কের উত্তেজনা বাড়ায় (Stimulant) তার মধ্যে আছে মিথাইল ফেনিডেট, ডেক্সট্রো এমফিটামিন। (Non-stimulant) এটোমক্সিটিন, ডিউপ্রোপিন ক্লোনিডিন ইত্যাদি। এছাড়াও Anti-depression জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে ADHD রোগীদের মধ্যে তীব্র মাত্রায় রাগ বা আগ্রাসন থাকলে anti-psychotic  ওষুধও কার্যকর হয়। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, মিথাইল ফেনিডেট বা এর মতো মস্তিষ্কের উত্তেজনা ওষুধগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৮০% কার্যকরীতা দেখা যায়। Ato-moxitin জাতীয় ওষুধ শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, কারণ এটি নেশা আসক্ত করে না।

মনোচিকিৎসা বা কাউন্সিলিং্যের ক্ষেত্রে প্রি-স্কুল এবং মৃদু সমস্যায় বিহেভিয়ার থেরাপী কাজ করে। উদাহরণঃ CBT (C ognitive Behaviour Therapy). Psychoeducational Input, Family Therapy, Interpersonal Therapy, School based Intervantion।

চিকিৎসাঃ

  • ক. Social skill training
  • খ. Behavior Peer Intervention
  • গ. Organization Training
  • ঘ. Parent Management Training

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরবর্তী জীবনে মানসিক সমস্যাগুলি বিশেষ করে Depression, অপরাধ প্রবণতা, School Failour, মাদকাসক্তির মতো মারাত্নক সমস্যাগুলো না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া।

২০১৮ সালের জরিপ বলছে, শিশুদের ক্ষেত্রে Short Term চিকিৎসায় মিথাইল ফেনিডেট এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এমফিটামিন ভাল কাজ করে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

  • ক. শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া
  • খ. ধৈর্য কমে যেতে পারে
  • গ. ক্ষুদা কমতে পারে
  • ঘ. প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হলেও নেশা ধরে যেতে পারে।

পরিণতিঃ

যারা ADHD আক্রান্ত তাদের এক তৃতীয়াংশ থেকে দুই তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

  • ক. বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানসিক দক্কতা বা Coping Capability বাড়ে। ফলে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  • খ. অনিচ্ছাকৃত আঘাতের ঝুঁকি বেশী থাকে।
  • গ. উপযুক্ত চিকিৎসা জীবনমান বাড়ায় ও কাজের উপযুক্ত করে তুলতে সাহায্য করে।
  • ঘ. এদের মধ্যে ধুমপানের প্রবণতাও দেখা যায়।

উপসংহারঃ

পরিশেষে বলা দরকার, সচরাচর শিশু-কিশোরদের ADHD বিষয়ে যতটা সচেতন বড়দের ক্ষেত্রে ঠিক ততটা সচেতনতা দেখা যায় না। বড়দের ক্ষেত্রে অনেকেই বিষয়টিকে ব্যক্তির স্বাভাবিক স্বভাবগত আচরণ বলেই মনে করে থাকে। কিন্তু সমস্যাটি ব্যক্তিকে বিশেষ করে যারা কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্য্যনরত আছেন। তাদের জন্য পীড়াদায়ক। অনেক সময় তাদের আচরণের ক্ষেত্রে অফিসে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, অফিসের বসের কাছে কটু কথা শুনতে হয়। যা ব্যক্তির মানসিক জীবনে সমস্যা হতে পারে, কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে, যোগাযোগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া কমে যেতে পারে।

সুতরাং পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতন ব্যক্তি প্রত্যেকের এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের স্মরনাপন্ন হতে পারেন।

অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী
সভাপতি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিষ্টস
সিনিয়র কনসালটেন্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous article১৩তম সার্ক ইন্টারন্যাশনাল সাইকিয়াট্রি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে
Next articleসঙ্গীকে জড়িয়ে ধরলে মানসিক চাপ কমে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here