পুরনো স্মৃতি মনে রাখা অবশ্যই ভালো একটি বিষয়। কিন্তু অতিমাত্রায় স্মৃতিকাতরতা আমাদের চিন্তা ভাবনা, কাজকর্ম এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পুরনো আবেগঘন স্মৃতি বা মানসিক আঘাতের অভিজ্ঞতা, কোনটিই ভুলে যাওয়া সহজ বেপার নয়। জীবনের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন সময় আমাদের মনে সেই স্মৃতি উঁকি দেবে সেটিই স্বাভাবিক। অনেক সময় পুরনো স্মৃতি মনে পড়লে দুঃখের সময় আমাদের মনোবল বাড়ে আমরা বিপদ মোকাবেলার সাহস পাই, আমাদের মানসিক শক্তি বাড়ে।
আবার দুঃখ জনক বা ভয়ের স্মৃতি একইভাবে আমাদের মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। যদি সেটি আমাদের মনে সুখের অনুভূতি না জাগিয়ে বরং কষ্টকে বাড়িয়ে দেয়। কিংবা আমরা মানসিকভাবে আরও ভেঙ্গে পড়ি এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা চিন্তা ভাবনা এর দ্বারা প্রভাবিত হয় ও আমরা সুষ্ঠু জীবন যাপনে অসমর্থ হই।
অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তির শৈশবের কোন ভয়ের স্মৃতি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও তার মনে দাগ কেটে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সেটি মনে পড়ে গেলে ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং অযথা আরও বেশী ভয় পায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই স্মৃতিগুলো অভ্যাসের মতো থেকে যায়, যা তার বর্তমান এবং একই সাথে ভবিষ্যৎ জীবনকে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাই মনস্তত্ত্ববিদগণ বলেন, এমন অতি মাত্রার স্মৃতিকাতরতাকে মানসিক সমস্যা বা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হিসেবে বিবেচনা করে এটি থেকে মুক্তি পাবার প্রয়াস করতে হবে। একে স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে ফেলে রাখলে চলবে না। নিজে প্রয়াস করতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
একজন মানুষের জীবন ঠিক সেভাবেই পরিচালিত হয় যেভাবে তিনি ভাবেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই এমন কোন ভাবনাকে মনে ঠাঁই দেওয়া উচিৎ নয় যা আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আজ যদি আপনি ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ভুল উপায়ে জীবন পরিচালনা করেন, এতে শুধু আপনার বর্তমানই নয় বরং ভবিষ্যৎ জীবনও প্রভাবিত হবে।
তাই যে সব স্মৃতি আপনার মন, চিন্তা ভাবনা কিংবা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে সেসব স্মৃতিকে মন থেকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করা উচিৎ। ধরুন, পুরনো কোন ভয়ের স্মৃতি আপনাকে এখনো তাড়া করে ফিরছে। সেক্ষেত্রে ভয়কে জয় করার প্রয়াস করতে হবে।
আপনার মাঝে এই মানসিক দৃঢ়তা সৃষ্টি করতে হবে যেন পুরনোকে পুরনো হিসেবেই মেনে নিতে পারেন। বাস্তবে যে এর কোন অস্তিত্ব নেই সেটি যেন মেনে নিতে পারেন। তাছাড়া, পুরনো অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমান জীবনে কাজে লাগাতে পারেন। এতে নেতিবাচক কোন স্মৃতিও বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অর্থাৎ মূল কথা হল, আপনাকে আপনার আবেগের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে হবে যদি আপনার সেই আবেগ, যা স্মৃতিকাতরতার জন্য সৃষ্টি হয়েছে, অযৌক্তিক হয় এবং আপনাকে মানসিক পীড়া প্রদান করে। অতীতকে বেধে না রেখে বরং মুক্ত করে দিন এবং পুরনো ক্ষতকে সারিয়ে তুলুন। নাহলে সেটি আপনার অতীতের মতো করেই বর্তমানকেও খারাপ অভিজ্ঞতায় ভরিয়ে তুলবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/constructive-wallowing/202108/are-you-living-in-the-past
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে