রোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন নিজেকে এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে। বিশেষত, জীবাণুমুক্ত রাখতে। হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, মাস্ক, পিপিই, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদিতে কমবেশি সবাই ব্যতিব্যস্ত।
এদের মধ্যে কিছু মানুষ করোনাভাইরাস নিয়ে একটু বেশিই আতঙ্কিত। বাড়তি এই আতঙ্ক শরীর ও মনের ওপর ধকল ফেলে, যার ফলাফল হিসেবে শরীরে তৈরি হয় ‘কর্টিসল’ হরমোন।এই হরমোনটাই আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল বানাতে পারে, বাড়াতে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত বিউমন্ট হাসপাতালের ‘অ্যালার্জি অ্যান্ড ইমিউনোলজি’ ও সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কার্ল বি লুথার বলেন, “যদিও আমরা বিশ্বাস করি জন্মের সময় কিংবা শিশুকাল থেকেই পরিবেশ এবং সংক্রমক রোগের সংস্পর্শে আসার ওপর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রভাব রাখে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও বৃদ্ধি পায় আর পরিবেশের প্রভাব কমতে থাকে।”
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখতে চাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন এবং প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টার নির্ভেজাল ঘুম। এই বিষয়গুলোর কোনো একটায় ঘাটতি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যহানী হবেই।
হাইজিন হাইপোথিসিস কী
একটি সাধারণ ধারণা হলো, যে শিশুরা শৈশবে বেশি জীবাণুতে আক্রান্ত হয় তাদের শরীরে আরও বেশি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়। কিছু পর্যবেক্ষণ অনুসারে, উন্নত দেশ বা বড় শহরগুলোতে বেড়ে ওঠা শিশুদের শৈশবে প্যাথোজেনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের তুলনায় দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। এধরনের ধারণা থেকে হাইজিন হাইপোথিসিসের জন্ম হয়।
তবে এর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে এবং তাই তত্ত্বটি পুরোপুরি সঠিক হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। বেশ কয়েকটি গবেষণা রয়েছে যা সমর্থন করে যে, নিজেকে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আপনার হাত এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখা একটি সেরা উপায়।
বিজ্ঞান কী বলে
এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যা প্রমাণ করে যে, খুব পরিচ্ছন্ন থাকা বা আপনার চারপাশ ঝকঝকে রাখা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এটি অবশ্য হাইজিন হাইপোথিসিসের ফলস্বরূপ।
সত্যিটা কী
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে, আমরা গত কয়েক মাস ধরে আমাদের চারপাশের জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছি। ঘরের অন্ধকার কোণ থেকে বিছানা, সোফার নিচের ফাঁকা জায়গা, যেখানে আমরা কালেভাদ্রে পরিষ্কার করতাম, সেগুলোও এখন নিয়মিত পরিষ্কার করছি। শুধু তাই নয়, আমরা দরজার হাতল স্পর্শ করার পরেও একাধিকবার হাত পরিষ্কার করছি এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঘষে জীবাণু এবং সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটি অনেকটা ‘নিউ নর্মাল’ হিসেবে আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। তবে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে, খুব পরিষ্কার হওয়া আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্টা করে দিতে পারে। যেহেতু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই সত্যিটা জানার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন