দাঁত দিয়ে সাধারণত নখ খোঁটার অভ্যাস একসময় ভয়ংকর মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে সাধারণ মিথ্যা বলার অভ্যাসও। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা দিব্যি বেঁচে আছেন নিজেদের মৃত ভেবে!
অভ্যাসের বশে, অতিরিক্ত টেনশন, সিদ্ধান্তহীনতা যেকোনো কারণেই অনেকে নখ খুঁটে থাকেন। নখ খোঁটা পর্যন্ত ঠিকঠাক; কিন্তু হুট করে একদিন নখ খুঁটতে খুঁটতে কেউ যদি কোনো কারণে রাগ সংবরণ করতে না পেরে নিজের আঙুলেই কামড় বসান! আঙুলে কামড় বসিয়ে সেখান থেকে চামড়া তুলে নেওয়া পর্যন্ত তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তারপর একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে করলেন, তার বাম হাতটার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই এই হাতটিকেই তিনি কামড়াতে শুরু করলেন। কামড়ে মাংস না ওঠা পর্যন্ত তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তারপর ধীরে ধীরে পা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে একদিন নিজেকেই খেয়ে ফেললেন!
কথাগুলো শুনে কোনো হরর সিনেমার গল্প মনে হলেও, এটি আসলে একটি মানসিক রোগ। এই রোগটির নাম ‘অটোফ্যাজিয়া’। মানব-মস্তিষ্কে সুপ্ত অবস্থায় লুকিয়ে থাকা অন্যতম ভয়ংকর একটি মানসিক সমস্যা এটি। অটোফ্যাজিয়া মূলত এমন একটি সমস্যা, যা মানুষের বোধশক্তির তারতম্যের ওপর নির্ভর করে জন্ম নেয়। একজন অটোফ্যাজিয়া রোগীর স্থায়ী অনুভবশক্তি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না। যতক্ষণ না ব্যক্তি নিজের মাংস খাওয়া শেষ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে না। এমনকি সে তার নিজের অঙ্গচ্ছেদ করে তা রান্না করে খেতেও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে থাকে। অটোফ্যাজিয়া যখন উচ্চতর লেভেলে পৌঁছায়, তখন মানুষ নিজেকে খেতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাদের কাছে ব্যাপারটা এমন, তারা মনে করে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই। মানসিক চাপ, নিজের প্রতি ঘৃণা, নিজের
কৃতকর্মের জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা কিংবা কোনো কারণে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া এর পেছনে দায়ী। যদিও আমেরিকার মানসিক সমস্যাবিষয়ক অধিদপ্তর সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ কেস না থাকায় অটোফ্যাজিয়াকে মানসিক রোগ বলে নথিভুক্ত করেনি। এটিকে তারা অন্যান্য মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবেই দেখিয়ে আসছে।
অটোফ্যাজিয়ার কেসগুলো প্রায় সময়ই ভয়ংকর এবং মানুষ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে থাকে। এটি বেশি দেখা যায় বৃদ্ধদের মধ্যে, যারা কি না অন্যান্য মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিচ্ছে। এনসিবিআই এ রকম একটি কেস নথিভুক্ত করেছিল যে, একজন ৬৬ বছরের বৃদ্ধ লোক প্রায় ছয় বছর ধরে তার আঙুল কামড়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসেন যে, তার দুই হাতের হাড়গুলো পর্যন্ত সেখানে না থাকার মতো অবস্থায় ছিল। অথচ সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তার ইনসমনিয়া ছাড়া আর কোনো মানসিক সমস্যাও ছিল না। যদিও স্বাভাবিকভাবে আঙুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া তেমন কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না, কিন্তু একটি টমোগ্রাফিক স্ক্যান দ্বারা
মস্তিষ্কের ক্ষয়িষ্ণুতা শনাক্ত করা হয়েছিল। ডাক্তাররা বলেছিলেন, আত্মক্লেশ, আবেগপ্রবণতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকেই এর শুরু হয়।
ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অটোফ্যাজিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর কেসটি নথিভুক্ত করেছে। একজন ৩৪ বছরের কয়েদি, যে কি-না তার ডান পা প্রায় খেয়ে শেষ করে ফেলেছে- এ রকম অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। এটিকে যদিও ইচ্ছাকৃত আত্মক্লেশ বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে লোকটির এভাবে নিজেকে মেরে ফেলার কোনো ইচ্ছা ছিল না। সে শুধু খাওয়ার জন্যই তার পা খাচ্ছিল। রোগীকে প্রশ্ন করার সময়ও সে বেশ শান্ত ছিল আর ঘটনাটি নিয়ে কথা বলার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ সে প্রকাশ করেনি। জেল কর্র্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনার বছরখানেক আগে সে তার নিজের হাতের মাংস কামড়ে তুলে ফেলে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার কেসটি বেশ জটিল আকৃতি ধারণ করে। এমনকি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের দায়িত্বে রাখার পরও তিনি এই রোগ নিয়ে বিস্তারিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
লিখেছেন: আসিফ রহমান।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে