বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যেখানে মানুষ কোন রকম স্বার্থ, নিয়ম বা চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে জীবনকে উপভোগ করতে পারে। বন্ধু এমন একজন মানুষ যাকে মনের সব কথা বলা যায়, ভরসা করা যায় এবং মানসিক সুস্থতায় যার অবদান অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশী।
অনেকের কাছেই যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার সব থেকে কাছের মানুষকে কে? তাহলে হয়তো উত্তর দেবেন বাবা, মা কিংবা স্বামী বা স্ত্রী। কিন্তু যদি এই প্রশ্ন করা হয় যে কাকে আপনি আপনার মনের সব কথা নির্দ্বিধায় খুলে বলতে পারেন তবে কি একই উত্তর ই দেবেন? হয়তো না। অধিকাংশ মানুষই যে উত্তর টি দেবেন সেটি হল সব থেকে কাছের কোন বন্ধু। বন্ধু এমন একটি মানুষ যে থাকে মনের সব থেকে কাছে এবং যার সাথে মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া থাকে দারুণ।
অনেক সময় পরিবারের সাথে, কাছের মানুষদের সাথে অনেকের মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ঠিক যেমনটি থাকা প্রয়োজন তেমনটি থাকেনা। অনেকেই মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে বেশ অবজ্ঞার শিকার হয় আবার অনেকের মাঝে সেই আত্মবিশ্বাস এবং সাহস থাকেনা যেটি তাদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে তাদের কাছের মানুষদের বা পরিবারের লোকদের নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারে। কিন্তু সবারই মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে এবং সুখী জীবন যাপন করতে ভালবাসা, সহানুভূতি এবং মানসিক সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। যেটি সবাই সহজে এবং নির্দ্বিধায় একজন ভালো বন্ধুর কাছ থেকে পায়। বন্ধুত্ব এমন একটি বন্ধন যা সারা জীবন অক্ষত থাকে এবং একইভাবে সারা জীবন মানসিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকে।
অনেকের জন্যই কাছের বন্ধুটি তার পরিবারের সদস্য যেমন, পিতা, মাতা, ভাই বা বোনের মতোই একটি স্থায়ী স্থান দখল করে নেয়। দীর্ঘ জীবন, মানসিক স্বাস্থ্য, এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের বিকাশে বন্ধুত্ব এবং বন্ধুদের অকৃত্রিম সামাজিক সাপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর করা হারভার্ড এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি এবং সন্তুষ্টি নির্দেশক ঐ ব্যক্তির ধন সম্পদ, সাফল্ল বা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নয় বরং তার সাথে তার কাছের মানুষদের সম্পর্কের মান হয়। একজন মানুষ যার মনের কথা বলার মত বন্ধু থাকে তিনি হন হাসি খুশি, শারীরিক ভাবে সুস্থ এবং মানসিক ভাবে দৃঢ়। তাকে সহজে কোন রোগ ব্যাধি আক্রান্ত করতে পারেনা এবং তিনি মন খুলে বাঁচার মত বাঁচতে পারেন।
একজন সঠিক বন্ধু যেমন সবার জীবনে আশীর্বাদ তেমনি একজন বন্ধু নির্বাচনে ভুল হলে সেটি হয় জীবনের জন্য অভিশাপ। জীবনে এই আশীর্বাদকে কাজে লাগাতে হলে তাই সঠিক বন্ধু নির্বাচন এবং বন্ধুত্বের মান রাখা খুব জরুরী। নিচে কিছু কৌশল দেওয়া হল যেগুলো অবলম্বন করে আমরা সঠিক বন্ধু নির্বাচন এবং বন্ধুত্বের মান রাখতে পারবো।
১) বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হনঃ বন্ধু নির্বাচনে সর্বদা সতর্ক থাকুন। অন্যরা আপনার মাঝে কেমন অনুভূতি সৃষ্টি করছে এবং কি ধরণের বুদ্ধি প্রদান করছে, কোন কাজে উৎসাহিত করছে এসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। কে দুঃখের সময় আপনাকে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে, কে আপনার আবেগ অনুভূতির খেয়াল রাখে এসব বিষয় খেয়াল করুন। এসব বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত পেলেই তাকে আপনার সময় এবং আবেগের সঙ্গী করুন।
২) বন্ধুর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করুনঃ একটি যথাযথ এবং সুন্দর বন্ধুত্ব রক্ষায় সব পক্ষেরই প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে। সম্পর্ককে অর্থপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী, এবং দৃঢ় করতে হলে সেই সম্পর্কে নিজের শ্রম, সময়, নিষ্ঠা, আবেগ, প্রতিশ্রুতি, এবং যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়। সম্পর্ককে যত্ন না করলে কখনোই সে সম্পর্ক টিকে থাকেনা। আপনি যেমন আপনার সুখে দুঃখে আপনার বন্ধুকে নিজের পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা করবেন, তেমনি নিজেকেও তার সব ধরণের প্রয়োজনে পাশে রাখার প্রচেষ্টা করুন।
৩) দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বে নিজেদের মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া খুবই প্রয়োজনঃ যে কোন সময়ে যে কারও বন্ধু হওয়া যায় কিন্তু একটি দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য দুজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ভালো হওয়া জরুরী। একে অপরের মনের কথা না বুঝলে এবং মন থেকে সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল না হলে বন্ধুত্ব কখনোই অর্থপূর্ণ হয়না।
কোন মানুষই আদর্শ রূপ হয়না। তাই বন্ধুত্বের মাঝেও একে অপরের প্রতি ক্ষমাশীল দৃষ্টিভঙ্গি, সহানুভূতিশীল এবং মানানসই মনোভাব থাকা প্রয়োজন। আর তখনই বন্ধুত্ব অর্থপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। আর বন্ধুত্ব মানব জীবনে এমন এক আশীর্বাদ যা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/rising-resilience/202012/friendship-maintenance-required
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে