সীমাহীন বেদনার মহাকাব্য: মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের মায়ের ডায়েরী

0
302
মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান

শীতের রাত। চারদিকে কন কনে ঠান্ডা। পথে ঘাটে একজন মানুষও নেই। অধিকাংশ মানুষই দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে। আর যারা বাইরে আছে তারাও ঘরে ফেরার উদগ্রীব।

আবার গ্রীষ্মের রাত। প্রচন্ড গরম। তীব্র-গরমের দাবদাহে মানুষ অতীষ্ঠ। কিছু মানুষ ঘরের বাইরে। কিন্তু এমনি এক ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ আমি শীত-গ্রীষ্ম, রোদ, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাটছি অবিরাম আমার ছাব্বিশ-বছর বয়সের প্রতিবন্ধী মেয়ের পিছন পিছন। তাকে জোর করে আটকাতে চাইলে কিল, ঘুষি, লাথি প্রতিনিয়তই আমাকে হজম করতে হয়। মেয়ের হাতের মার খেতে খেতে আমার গা সওয়া হয়ে গেছে। ছিলাম উদার হৃদয়ের সহজ সরল এক জীবন্ত নারী। এখন হয়ে গেলাম সংগ্রামী মাতা।

আমি এক স্কুল মাষ্টারের মেয়ে। স্কুল মাষ্টারদের জীবনতো সীমাবদ্ধ জীবন, তারা সহজে অন্যায় করে না। তাদের জীবনের ছন্দের গতি ধীর। আমরা নয়-বোন এক ভাই। আমি সবার বড়। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা। ইন্টার মিডিয়েট পড়ার সময় আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দায়সারা হয়েছেন। তারপরের অবস্থা আরও করুণ। দাম্পত্য জীবনের কথা আর নাই বা বললাম। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। আমার স্বামী বড় তাড়াতাড়ি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শাশুড়ী এখনও বেঁচে আছেন বহালতবিয়তে। আমার ছাব্বিশ বছরের একমাত্র মেয়ে ছোট সময় মাথায় আঘাত পায়। তারপর থেকে সে শারীরিক এবং মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের সুখ শান্তি বির্সজন দিয়ে ছায়া সঙ্গী হয়ে তার চারপাশে আছি। মাথায় কিযে যন্ত্রনা আমার মেয়েটার। তাকে সুস্থ করার জন্য সরকারী, বেসরকারী হাসপাতালের দরজায় গুরেছি দিনের পর দিন বছরের পর বছর। এতদিন ডাক্তারদের প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গেছে। দেশে চিকিৎসার এত সুযোগ, এত উন্নত ব্যবস্থা। কাজের কাজ হয়নি কোনটাই। ডাক্তারদের সব চেষ্টা বিফলে গেল। একবুক হত্যাশা নিয়ে ব্যর্থতা নিয়ে চলে আসি। ডাক্তার শেষে বলেই দিল এ মেয়ে কোন দিন স্বাভাবিক সুস্থ হবে না। তবে অতি উচ্চ মাত্রায় ঔষধ সেবন করতে হবে, হচ্ছে। মেয়েটা সর্বদা আত্মহত্যা প্রবণ। আমাদের বাড়ীর পাশে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম রেল লাইন। প্রতিনিয়তই ঐ রেল লাইনে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায়। তাই তাহাকে পাহাড়া দিতে হয়। মা হয়ে আমি কি পারি আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে ? তাকে খাইয়ে দিতে হয়, গোসল করাতে হয়। সে সুযোগ পেলেই দূরে চলে যায়। খুজে বের করতে হয়। আবার আমার একটু চোখের আড়াল হলেই দুষ্ট লোকেরা তাকে ছুয়ে তাদের বিকৃত মন মানসিকতা পূরণ করে। শত সতর্কতার মাঝেও দু’একটি বিছিন্ন ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়।

রাস্তায় দুজনকে দেখে রাস্তার জনতা কৌতুহলী হয়ে চেয়ে থাকে আমাদের পানে। কেউ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে, কেউ আড়চোখে, কেউ আবার উপেক্ষায়। কারণ তাদেরই বা এত সময় কোথায় সমাজের ছিটকে পড়া অসহায়দের জীবন সম্মন্ধে জানার। সর্বদাই আতংকে থাকি এই বুঝি দুর্ঘটনা ঘটবে, ঘটে যাবে।

সবার জীবনেইতো সার্থকতা, ব্যর্থতা আছে, থাকে। ঘাত প্রতিঘাতও থাকে, থাকে বেদনাও। এত বেদনার মাঝেও কারও কারও জীবনের অপ্রতিহত গতি রুদ্ধ হয় না। ক’জনই বা পারে জীবনের যন্ত্রনা, বেদনা, ব্যর্থতাকে রুপান্তর ঘটিয়ে বিশ্বয় কর প্রতিভা দিয়ে জীবনকে ঢেলে সাজাতে। আমিওতো পারিনি। সব সময় নিজেকে কেমন জানি অগোছালো মনে হয়।

সবাইতো স্বপ্ন দেখে। সবার সপ্নতো আর পুরণ হয় না। বিষাদ-বিষন্নতা, অন্ধকারকে সাথী করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেউ। কেউ আবার ডিঙ্গী নৌকায় চড়ে সাগর, পাড়ি দিতে চায়। তীরে উঠেইবা ক’জন। আমিওতো চেয়েছিলাম।

চুয়ান্ন বছরের বৃদ্ধা হয়েও যৌবনের মত তারুন্যের দৃপ্তিতে ভরপুর হয়ে মেয়ের পাশে আছি। আয়েশী জীবনকে না চায়? সবাই কি পায়? আমিওতো পাইনি।

রাতে মেয়েটা ঘর থেকে বের হয়ে চলে যেতে চায়। চলে যাওয়ার ভরে রাত জেগে থাকি। নির্ঘুম রাত কাটাতে কাটাতে এখন আর খারাপ লাগে না। চব্বিশ বছরের রাতগুলো এক লক্ষ একান্ন হাজার ঘন্টা। তার মধ্যে আমি দশ হাজার ঘন্টাও ঘুমিয়েছি কিনা সন্দেহ। ঘুমকেও আমি জয় করে ফেলেছি।

মানসিক যন্ত্রনায় অন্তর ক্ষত, বিক্ষত হয়, হতাশাও যোগ হয় তার সাথে। রাত জেগে লেখালেখি করি। কত পান্ডুলিপি জমা আছে আমার ঘরে। কত পান্ডুলিপির লেখা পুরোনো হয়ে অস্পষ্ট হয়ে মুছে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। ট্রেন বাড়ীর পাশ দিয়ে চলে সব সময়। দিন, রাত, ভোর ট্রেনের ঝমঝম শব্দ। গভীর রাতে শব্দ করে দুর পাল্লার যাত্রীবাহী ট্রেন চলে যায়। অন্ধকারের বুকে ট্রেনের কামড়ার সারি সারি আলো চলমান হাতছানি দিয়ে আমাকে পিছনে ফেলে চলে যায়। আমি জেগে থাকি।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোন না কোন প্রিয় মুহুর্ত থাকে। সেই প্রিয় মুহুর্ত্ত গুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সংসারে অনেক ঝামেলা ও অশান্তি ভুলে যেতে চেষ্টা করে ক্ষনিকের জন্য। আমিও চেষ্টা করি সেই কাঙ্খিত মুহুর্তটির জন্য। এমনি সোনালি মুহুর্তে মেয়েটা বেরিয়ে যায়। তখন মেয়েকে খুজে পাওয়ার তীব্র প্রয়াস আমার বুকে আতংক জুড়ে দেয়। মনের লালিত স্বপ্নটাকে আচমকা ধাককা দিয়ে ফেলে দিয়ে মেয়েকে খুজতে থাকি। বেড়িয়ে পড়ি খুজতে। খুজে খুজে পেয়েও যাই তবে অনেক দেরীতে। তখন ভীষণ রাগ হয়। ইচ্ছে করে তাকে মেরে ফেলি।

সত্যি কথা বলতে কি এ মেয়ে জন্ম হওয়ার আগে আমি ভাবতাম আমি নিজে একজন গণ্য লোক। এই কল্পনা আমার মিথ্যে। প্রবাহিত জীবন নাটকের বিভিন্ন অংকের বিভিন্ন দৃশ্যে ক্ষুদ্র হলেও আমার একটা বিশেষ চরিত্র আছে। তা নিজের জন্য নয় অন্যের জন্য।

একজন মানুষের জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি সত্ত্বেও কেবলমাত্র নিজের জন্যই তাহার বাঁচার আনন্দের জন্য বেঁচে থাকা উচিৎ। কিন্তু পৃথিবীকে একমাত্র আমিই অন্যের জন্য বেঁচে আছি।

সবার জীবনের নিয়ন্ত্রা সে নিজেই। প্রত্যেকেরই অধিকার আছে তার নিজের জীবনে নিজের ইচ্ছে ও পছন্দ মত বাঁচবার। দুপুরে বুক-ফাটা মাঠে গনগনে বাতাস উঠে। শুকনো ধুলা-বালি দলা পাকিয়ে শুণ্যে উঠে আছড়ে পরে মাটিতে। তখন গাছের পাতারাও যেন আমার বেদনায় ব্যথিত হয়ে দীর্ষশ্বাস ছাড়ে।

মেয়েকে পাহারা দিতে দিতে তো নিজের জীবনের সোনালী অধ্যায়টা পার করে দিলাম। এই অভিশপ্ত জীবনে আর বাকীটাই আছে কি ? সুখ আরাম আয়েশের উপকরণতো জীবনে কখনও পাইনি। কোনটা সুখ, কোনটা দুঃখ তা নিয়েও আমার অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক প্রশ্ন, কারণ সুখতো কখনও পাইনি।

শেষ জীবনেও যদি একটু স্বশিÍ, বা শান্তি না পাই তবে কবে পাব ? ছেলে ছেলের বউ কি আমায় মাথায় তুলে রাখবে ? তাদের কাছে তো মা বোন বোঝা। আজকালকার ছেলে – ছেলে বউদের উপর ভরসা করা যায় না। ওরা নিজেদের সুখ সম্মন্ধে যথেষ্ট সচেতন।

প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকগণ নিতান্ত সুখে নেই এটা সবারই কম বেশ জানা। মাঝে মাঝে যদি ক্ষেপে যায় ঘরের জিনিসপত্র সামনে যা পায় ভেঙ্গে ফেলে। মারধর করে। চিৎকার করে। শান্ত করতে অনেক বেগ পেতে হয়। খাবার সামনে দিলে উল্টে ফেলে দেয়। জীবন যে কি মূলবান জিনিস এটা তাদের জানা নেই।

বইয়ের পাতায় লেখা থাকে সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেসব কথা লেখা সহজ। পালন করতে পারলে আরও সহজ। কিন্তু না পারলে কি হয় তাতো লেখা নেই। লেখা থাকে না। বিয়ের পর কত গর্ব ছিল বন্ধু-বান্ধব আত্বীয়-স্বজনের কাছে আমি রানী সেজে থাকব। নিজেকে সেদিন গরবিনি রানীই ভেবেছিলাম। আমার হাস্যেজ্জল মুখ দেখে সবাই ভেবেছিল সবাইকে হারিয়ে আমি জিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিয়তি আড়ালে থেকে নিশ্চয়ই বলেছিল তোর কপালে সুখ নেই রে! কত স্বপ্নইতো দেখেছিলাম। রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। ভেবেছিলাম হবে অনেক কিছুই। ভেবেছিলাম সুখ নামে সোনার হরিণের কথা। তাতো ছিল কাচের মত ভঙুর। মানুষ যা ভাবে তাই যদি ঘটত তবে গোটা পৃথিবীর ইতিহাসটা অন্যভাবে লেখা হত।

সবার জীবনের চলার পথটাতো মসৃন নয়। জীবনে একটি মাত্র আঘাত, একটি মাত্র বেদনা জীবন চলার পথটাকে বদলে দিয়ে গতি বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়। অনিচ্ছা থাকা সত্তে¡ও জীবন ¯্রােতের ব্যাখ্যা ঠিক রাখতে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করতে হয়। এটাও সত্যি এ সংসারের কাছে আমাদের মত মানুষদের পাওয়ার কিছুই থাকেনা। জীবন রক্ষার প্রাপ্তিহীন যুদ্ধে নিজেকে শুধু অসহায় ও কাতরই মনে হয়।

আমার মেয়ের জীবনের এই বিপর্যয়ের জন্য সবাই আমার ভাগ্যকেই দায়ী করছে। প্রথম প্রথম মেয়ের অস্বাভাবিকতা ছিল বিস্ময়ের। মাঝে মাঝে অধৈর্য্য হয়ে পরেছিলাম। অতিরিক্ত স্লিপিং পিল খাইয়ে মেয়েকে ঘুমের শীতল সমুদ্রে পৌঁছে দিতাম। একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য। দুতিন দিন ঘুমের ঘোরে পড়ে থাকত বিছানায় মৃতপ্রায়। এখন আর স্লিপিং পিলে কাজ করে না। কাজটা খুব কঠিন ছিল হাত কাপত, তবুও করতাম। অন্য কোন পথ ছিলনা। কিন্তু বাঁচার লড়াই বড় লড়াই। আমাকে বর্তমানে এবার ফিরতে হবে। এবার সে বাচুক, আমি বাচি। আশা মরেনা এক জায়গায় শুকিয়ে গেলে অন্য জায়গায় জেগে উঠে। হতাশাও হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপহার হল কর্ম।

কাজে ডুবে থাকলে দুঃখ কষ্ট কাছে ঘেষতে পারে না। যদিও আমার দুঃখটা ব্যতিক্রম। আমার দেহ মনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। মেয়েকে সামলে কর্ম ক্ষেত্রে থাকতে হবে।

এহেন পরিস্থিতি দেখে পুরোন বন্ধু-বান্ধব বলে ফেলে রেনু তোর একটা সুন্দর বিবাহিত জীবন ছিল। তোকে দেখলে দুঃখ হয়। তোর বড় কষ্ট তাই না রে?

আমি তখন নিজের দুঃখটাকে চেপে রেখে তাদের বলি দুঃখ চিরদিন থাকে না। কিছু কিছু ভাল আচমকা খারাপ হয়ে যায়্ কখনও কখনও খুব খারাপ। আমরা যা চাই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তা পাইনা। জীবনে অঘটনতো ঘটবেই ঘটতে থাকবেই। আমার বেলায়ও তাই ঘটেছে। আমি কারও সহানুভূতির কাঙ্গাল নই। আমি পারি কষ্টকে পুষতে পুষতে সেই কষ্ট আমার মনে এতই পোষ মেনে গেছে যে তাকে আর তাড়ানো যাচ্ছে না।

পৃথিবীর যে কোন জায়গায়ই যাইনা কেন দুঃখ আমার সঙ্গে সঙ্গে যাবেই। আমার মত এমন কত ফ্যমিলী আছে, কি যে কষ্ট তাদের তোমরা না দেখলে বুঝতেই পারবে না। ওদের তুলনায় আমি রানীর হালে আছি। আমার কোন সমস্যা নেই। ধন্যবাদ।

এই বলে বুকের চাপা কান্নাটাকে নিষ্ঠুর ভাবে দমন করে মেয়েকে জোরে টানতে টানতে ফিরে যাই আপন ভূবণে। তাদের কথায় মনের ভেতরে যে দহন সৃষ্টি করে তার রেশ কাটাতেও নিজেকে আরও দহিত হতে হয়।
নিজের কষ্ট থেকে উদ্বার পেতে চাইলে নিজের উপরই সম্পূর্ন ভাবে নির্ভর করতে হবে। প্রত্যেকের বেলায়ই কথাটা সমান সত্যি।

অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এক ধরনের ক্রোধ পাক খেয়ে উঠে। তখন এক ধরনের অমানবিক ইচ্ছা আমাকে অস্থির করে তোলে। বিড় বিড় করে বলি সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরও ধৈর্য দাও। জীবন যুদ্ধে যেন আমি টিকে থাকতে পারি।

এই একটা মেয়ে, একটা মেয়েই আমার জীবনটাকে সর্বতোভাবে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার জীবনটাতো এখন মরুভূমি হয়ে গেছে, চারদিকে শুধুই তাপ, খরা। সেখানে ছায়া নেই, শান্তি নেই আছে শুধু জ্বালা আর জ্বালা।

আমার চারপাশে অগনিত বৃত্তবান নিকটান্ত্রীয় স্বজন আছে তারা তাদের নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমার অভাব আছে কি নেই, কি আমার ইচ্ছা, অনিচ্ছা তা নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। কেউ সহমর্মিতার হাতও বাড়ায় না। দুঃখের ভাগ কেউ নেই না বা নিতেও চায়না, আর কেনইবা নেবে ?

কিছু মানুষ আছে তারা শত প্রতিকুলতার মাঝেও কারো কাছে হাত পাতে না নিজের ভাগ্যকে বদলানোর জন্য। তারা নিজের সম্মান নিয়ে দুরে দাড়িয়ে থাকে। যে আমার কষ্ট আমারই থাক। সব যন্ত্রনা একাই সহ্য করব। এর মধ্যে অন্য কাউকে জড়াব না। নিজের সম্মান কি যেচে নিজে নষ্ট করা যায় ? সম্মান ছাড়া কি কেউ বাঁেচ ?

যুদ্ধের ময়দানে আমি আহত ও পরাজিত সৈনিক। চুয়ান্ন বছর বয়সে মাত্র দু’হাজার টাকা মাইনের চাকুরী নিয়েছি ছোট বাচ্চাদের পড়াতে। স্বাবলম্বনের জন্যই হয়তো সবাই চাকুরী করে। আর আমি এই বয়সে চাকুরী নিয়েছি প্রয়োজন বলে। একটু হলেও তো স্বচ্ছলতা পাব। চাকুরী না করলে যখন চলে না তখন সেই চাকুরী আনন্দদায়ক নয়। নিষ্ঠুর হলেও সত্যি আমার মেয়েকে তিন ঘন্টা ঘরে আটকে রেখে পড়াতে হয়। মেয়েটা এই তিন ঘন্টা দরজায় মাথা টুকে বের হবার জন্য। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। তবে মাঝে মাঝে যদি মেয়েটার একটু সন্বিত ফিরে আসে তবে ছবি আকঁতে চায়। আকেও। ছবি আকার সময় সে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবকিছু ভূলে শুধু ছবিই আঁকে।

জীবনেতো ধমকা হাত্তয়া আসবেই। শুকনো পাতা, খড়কুটো, ঝরা ফুল তারা যেমন বাতাসের ঘুর্নয়নের মধ্যে পরে উড়ে অন্য কোন জায়গায় স্থান করে স্থীর হয়ে পড়ে। আমিও তেমনি ও পধহ ফড়। পারতেই হবে।

প্রতিদিন ঔষধ সেবন করতে হয়। ঔষধ কেনার পর হাতে সামান্যই টাকা উদ্বৃত্ত থাকে তা দিয়ে দু’এতিম ও বিধবা মা, মেয়ের সংসারের ব্যয়ভার বহন করা ক্রমশই কষ্টকর। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। জীবনতো আর থেমে থাকে না। শত অভাব অনটনের মাঝেও দীর্ঘদিন যাবৎ আমি দৈনিক প্রথম আলো নিয়মিত কিনি এবং পড়ি। প্রথম আলো না পড়লে আমার জীবনের গতি একেবারেই স্থীর হয়ে থেমে যায়। আমি তো জড় বস্তু নই, অমরও নই। জীবনে মৃতু্যৃ অনিবার্য। কেউ মরনকে ঠেকাতে পারে না একদিন সব শেষ হয়ে যাবে আমি যখন থাকব না। তখন কে দেখবে আমার মেয়েকে ?

রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে, কে দেবে তার মুখে অন্ন তুলে। কে দেবে তাকে বস্ত্র। কে দেবে আশ্রয়। কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা ছিলনা। কি বিচিত্র মানুষের জীবন। তবুও বেঁচে থাকতে হয়, বেঁচে আছি।

লিখেছেন: দেলোয়ারা বেগম রেনু (নরসিংদী জেলার এই সংগ্রামী নারী তুলে ধরেছেন তার বাস্তব জীবনের চিত্র।)

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

 

Previous articleআপনি কি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান করতে চান?
Next articleকরোনায় স্বজনহারাদের জন্য কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন আজ রাতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here