সামাজিকভাবে ফেসশিল্ড ব্যবহার: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বৈজ্ঞানিক ও সহজ পদ্ধতি

সামাজিকভাবে ফেসশিল্ড ব্যবহার: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বৈজ্ঞানিক ও সহজ পদ্ধতি
সামাজিকভাবে ফেসশিল্ড ব্যবহার: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বৈজ্ঞানিক ও সহজ পদ্ধতি

চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সারা পৃথিবীতে মেডিক্যাল বা সারজিকেল মাস্ক এর বিপুল চাহিদা এবং প্রাপ্যতা সংকট দেখা দিয়েছে । প্রয়োজনীয় কাঁচা মাল এর অভাব, দক্ষ জনশক্তি, অপ্রতুল শিল্প কারখানা, বিপনন জটীলতা, গুণগত মান নির্ণয় সংক্রান্ত কারিগরী দক্ষতার অভাব ও অন্যান্য কারনে ফেস মাস্কের উৎপাদন কমে গিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য মেডিকেল মাস্কগুলির সংরক্ষণ প্রয়োজন। রোগ নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী সংক্রমন প্রতিরোধে জনসমাগমে প্রতিটি ব্যাক্তি যাতে অনন্ত কাপড়ের মাস্ক পরে। যদিও কাপড়ের তৈরী মাস্ক শ্বাসতন্ত্রজনিত সংক্রামক রোগের প্রতিরোধে মেডিকেল মাস্ক থেকে কম কার্যকর, তারপরও ইন ভিট্রো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে কাপড়ের মাস্ক ভাইরাসের কণার মত অ্যারোসলের কনা পরিহত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে ফেসশিল্ড আরও ভাল বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে।
ফেসশিল্ড নানা ধরনের হতে পারে, তবে সবগুলোতেই একটি প্লাস্টিকের আবরণী থাকে যা মুখকে ঢেকে রাখে। সবচেয়ে ভাল সুরক্ষার জন্য, ফেসশিল্ড সামনে চোয়ালের নিচ পর্যন্ত দুই পাশে কান পর্যন্ত এবং শিল্ডের মাথার অংশ এবং কপালের মধ্যে যেন কোন ফাঁকা না থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। ফেসশিল্ড বানাতে কোন বিশেষ কাপড়ের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন কোম্পানি যেমন এ্যাপল, নাইক, জিএম এবং জন ড্রি ইতোমধ্যেই ফেসশিল্ড বানানোর কাজ শুরু করেছে। এগুলা বানানো হবে বিভিন্ন কারুশিল্প এবং অফিসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস থেকে। এভাবেই ফেসশিল্ড ফেসমাস্কের থেকে অনেক বেশি সহজলভ্য হবে।
ফেসশিল্ড ব্যবহারের অনেকগুলা সুবিধা আছে।ফেসমাস্ক যেমন খুব বেশিদিন ব্যবহার করা যায় না ধুতে সমস্যা আবার বারবার ব্যবহারের সুযোগ নেই সেই দিক থেকে ফেসশিল্ড ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার করা সহজ। শুধু সাবান পানি বা জীবনুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিলেই হয় আর বার বার ব্যবহারও করা যায়। এগুলো পড়তেও সহজ আবার সংক্রমনের পথ গুলোকেও ঢেকে রাখে ফলে কোনকিছুকেই সরাসরি চেহারার সংস্পর্শে আসতে দেয় না। ফেসমাস্ক অন্য ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগের সময় অনেক ক্ষেত্রে খুলে ফেলতে হয়, কিন্তু ফেসশিল্ড এর ক্ষেত্রে এটার প্রয়োজন পরে না। ফেসশিল্ড এর ব্যবহার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা ও মনে করিয়ে দেয়। তবে সুবিধা হল এতে ভালভাবে চেহারার বাচনভংগি বোঝা যায় ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফেসশিল্ড, ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ অন্যান্য ভাইরাস যা রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ভিতরে নেওয়াকে প্রতিরোধ করে।

একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮ ইঞ্চি দুরত্বের একজনের কাশির মাধ্যামে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসকে ফেসশিল্ড ৯৬% পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে পারে। এমনকি ৩০ মিনিট পরেও  এর সুরক্ষা ৮০% পর্যন্ত বজায় থাকে এবং ফেসশিল্ড এ্যারোসল এর মত ছোট কনাকে ৬৮% পর্যন্ত আটকে দিতে পারে।
একই পরীক্ষা যখন বর্তমানের প্রস্তাবিত ৬ ফিট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করা হল, দেখা গেল ফেসশিল্ড ব্যবহার ভাইরাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ ৯২% পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে পারে, যা আবারও বুঝিয়ে দিল যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এই মুহূর্তে কতটা জরুরি।
যদি লক্ষনবিহীন কোন ব্যাক্তি বা লক্ষনযুক্ত ব্যাক্তি যদি ফেসশিল্ড এর মধ্যে হাচি কাশি দেন তাহলে কি হবে এই বিষয়ে এখনও কোন গবেষণা হয় নি। তারপরও শুধুমাত্র একটা ফেসশিল্ড ব্যবহার সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ৬৮% থেকে ৯৬% এ উন্নিত করতে পারে।
মোটকথা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধে ফেসশিল্ড এর কার্যকর ব্যবহার সংক্রমণের গানিতিক হার পাল্টিয়ে দিতে পারে। অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে যদি ফেসশিল্ড এর ব্যবহার যোগ করা যায় তবে সংক্রমন প্রতিরোধের হার r0 ১ এর নিচে নেমে আসতে পারে। যদিও কোন কিছুই ১০০% কার্যকর নয় তাই শুধু ফেসশিল্ড এর উপর ১০০% ভরসা করা যায় না, তবে এটা ঠিক যে সার্স-কোভি-২ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে ফেসশিল্ড ভূমিকা রাখতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারী অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে বিভিন্ন দেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ছড়িয়ে পরেছে। এমনকি অনেক দেশ যারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল তারাও দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মহামারীর সম্মুখীন হচ্ছে এবং এর কারনে তাদের কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই মহামারীর প্রভাব কমানোর জন্য দ্রুত একটি সংযমন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে যা দ্বারা সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফেস শিল্ড যা খুব সহজেই তৈরি ও বিতরণ করা যায়, সেটার যথাযত ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করা যায়। এখনি সময় এই ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রহ করার।
মূল: https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/276552 অনুবাদ: ডা. মোঃ রিজওয়ানুল করিম এবং ডা. নাওমি নুর
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন


Previous articleকরোনার ক্রান্তিকালে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
Next articleডেক্সামেথাসোন: কোভিড-১৯ এর জীবনরক্ষাকারী প্রথম ওষুধ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here