অনেক বাচ্চা আছে ভীষণ দুরন্ত, একদমই লেখাপড়া করতে চায় না৷ কেউ কেউ আবার খুব চুপচাপ৷ কারোর সঙ্গে মিশতে চায় না৷ কিছু বাচ্চা আবার রেগে গেলে নিজেদের উপরই আঘাত করে৷ ছোট্ট সন্তানের এই ধরনের সমস্যা উদ্বেগ বাড়ায় বাবা-মায়ের৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা চঞ্চল হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব সময় দুরন্তপনা, কোনও কথা শুনতে না চাওয়া, কিংবা অনর্গল কথা বলার মতো প্রবণতা দীর্ঘ দিন ধরে চললে শিশুটি অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি)-এর শিকার হতে পারে। ৩-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এডিএইচডি-র প্রবণতা বেশি। বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন।
কোন লক্ষনগুলো অস্বাভাবিক
মাত্রাতিরিক্ত দুরন্ত, মনসংযোগের অভাব, গুছিয়ে কথা বলতে না পারা, কারোর কথায় সাড়া না দেওয়া, মারপিট করা, কারোর সঙ্গে না মিশে একলা থাকা, অতিরিক্ত ভিতি কিংবা রেগে গিয়ে নিজের উপর আঘাত করা-এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
শিশুর এ ধরনের সমস্যা কেন হয়
কিছু বাচ্চার কথা বলা, হাঁটাচলা, মস্তিষ্কের বিকাশ সময়ের চেয়ে দেরিতে হয়৷ একে গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট ডিলে বলে৷ সাধারণত গর্ভবস্থায় মায়ের কোনও শারীরিক ও মানসিক চাপজনিত সমস্যা হলে এই সমস্যা হয়৷
অপুষ্টিজনিত কারণে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে সন্তান ধারণ করার পর থেকে মায়ের খাদ্যাভ্যাস এবং আচরণ অনেকাংশে দায়ী।
বংশগত কারণে হতে পারে, অর্থাৎ পরিবারের কারো মধ্যে পূর্বে এমন স্বভাব থাকলে শিশুর মধ্যে হতে পারে।
মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টল অংশে নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিকের অস্বাভাবিকতার কারণে শিশু এমন আচরণ করতে পারে।
বাবা-মার কাছ থেকে পর্যাপ্ত আদর স্নেহ পাওয়ার বদলে অবজ্ঞা অবহেলা পেলে শিশু মনোযোগ পেতে চঞ্চল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এটা রোগ হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসার পদ্ধতি
শুধু ওষুধেই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় থেরাপি প্রয়োজন৷ বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়৷ সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি, অ্যাকটিভিটি অফ ডেইলি লিভিং ট্রেনিং, পড়াশোনার জন্য আধুনিক ট্রেনিং থেরাপি, ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি৷
জরুরি ডায়েট
সুষমও খাবার খাওয়ান৷ মিষ্টিজাতীয় খাবার দেওয়া যাবে না৷ ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার একদম বন্ধ৷ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার দিন৷ দুধ, মটন, চিকেন, ডিম, সমুদ্রের মাছ খাওয়ান৷
বাবা-মায়েদের পরামর্শ
১. প্রথমত হতাশ হবেন না৷ একটু ধৈর্য্য ধরুন৷ বাচ্চার ঠিকমতো ট্রিটমেন্ট হলে দেখবেন এই সমস্যাগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর উধাও হয়ে গেছে৷
২. এই ধরনের বাচ্চাকে একা রাখবেন না৷ বাড়ির কেউ একজন সব সময় ওকে সঙ্গ দিন৷ ওর সঙ্গে গল্প করুন৷ চোখে চোখ রেখে কথা বলান৷ সন্তানকে সামাজিক পরিধিতে বেশি করে মেলামেশা করতে শেখান। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে দিন৷ বাবা-মা, বন্ধুবন্ধাবের সাহচর্য ওদের খুব দরকার। প্রকৃতির মাঝে বেশ খানিকটা সময় কাটালে ভাল।
৩. ড্রইং বা হাতের কোনও কাজ করান৷ মজার বই পড়ান৷
৪. সন্তান ভাল কাজ করলে তাকে উৎসাহ দিন৷ অতিথি বা প্রতিবেশীদের সামনে বাচ্চার প্রশংসা করুন৷
৫. মোবাইল, টিভি, যে কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে বাচ্চাকে সর্বদা দূরে রাখুন৷
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এক-একটা বাচ্চার সমস্যা এক-এক রকম৷ কারোর চিকিৎসার জন্য দু-তিন মাস লাগে আবার কারোর এক- দেড় বছরও সময় লাগে৷
সূত্র: কলকাতা ২৪x৭