শিশু-কিশোরদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা : দ্রুত সনাক্ত করতে হবে

0
96

বড়দের মন এবং মানসিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা যাও-বা কিছু হয়, শিশুদের নিয়ে তার একভাগও বোধকরি হয় না। কারণ আমাদের বদ্ধমূল ধারণা শিশুদের মন নেই, তার মানসিক সমস্যা তো সুদূর পরাহত! কিন্তু মনে রাখতে হবে, শিশুদের শরীরের মতো মনও অনেক স্পর্শকাতর হয়। তাই অল্প একটু অসচেতনতা অনেক সময় বড়ো ভোগান্তির কারণ হয়ে যেতে পারে। সেইরকম একটি সমস্যা শিশুদের আত্মঘাতী আচরণ বা নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা। সাম্প্রতিক কালে বড়োদের মতো অনেক শিশুদের মধ্যেও এইরকম আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। আর বড়োদের ক্ষেত্রে কারণগুলো খবু সহজেই খুঁজে পাওয়া গেলেও শিশুদের কারণগুলো বের করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। তবে আজকাল অল্প হলেও মানুষ এইসব বিষয় নিয়ে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে। শুরুতেই আমরা জানব এই আত্মঘাতী প্রবণতার প্রধান কারণ।

  • পড়াশুনার অতিরিক্ত চাপ
  • স্কুল ও পরীক্ষাভীতি
  • অভিভাবকদের প্রত্যাশার চাপ
  • বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন
  • স্কুলে বন্ধুদের কটু কথা
  • প্রেমে ব্যর্থতা
  • পারিবারিক বিশৃঙ্খলতা
  • দারিদ্র্য
  • বাবা-মার কাছ থেকে প্রাপ্য মনোযোগের অভাব
  • ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি দায়িত্ব
  • একাকিত্ব ইত্যাদি।

এছাড়া কিছু মানসিক রোগের কারণেও শিশুরা এমন আচরণ করতে পারে যেমন-বিষণ্ণতা, বাই-পোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি।

শিশুরা খুব আবেগপ্রবণ হয়, বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে। এসময় বেশিরভাগ শিশু আবেগ দিয়েই চালিত হয় বেশি, ফলে তারা নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে কোনো চিন্তা-ভাবনা না করেই। অনেক সময় অবিভাবকদের কিছু আচরণও এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম বাবা-মায়ের প্রত্যাশার চাপ। সব বাবা-মা চান তার সন্তান জীবনে অনেক ভালো কিছু করে দেখাবে; এটা খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু এটাও সত্যি ক্লাসের সব ছেলে- মেয়েই তো প্রথম হতে পারবে না। বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে প্রতিটি ছেলে মেয়ের মেধা বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সমান না, কিন্তু সমাজ তাদের এক ধরনের প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মা দুজনেই কর্মজীবী, এ কারণে বাবা-মা বাচ্চাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছে না, এতে করে বাচ্চার সাথে একধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, তাই শিশুরা অনেক বিষয় শেয়ার করতে পারে না। সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ বা অবহেলা বা অতি শাসন সন্তানকে বিপথে যেতে সাহায্য করে।আবার বাবা-মার দ্বন্দ্বের কারণে সন্তান হতাশায় ভোগে। অতএব শিশুর আত্মঘাতী প্রবণতা প্রতিরোধে বাবা-মা কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদেরকে সচেতন হতে হবে যেন তাদের শাসন বা আদর যেন সীমার মধ্যে থাকে। তাই সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মা সম্পর্কে সন্তানদের মনে যেন কোনো ভীতি কাজ না করে। সন্তানের সাথে যদি খোলামেলা আলোচনা করা যায় তাহলে অনেক শিশুই তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। আর সন্তানের মধ্যে কোনো কারণে আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি; যেমনটি মা-বাবারা সন্তানের শারীরিক অসুস্থতার সময় করেন ঠিক তেমনই।
সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleএকই স্বপ্ন বারবার দেখেন!
Next articleনার্কোলেপ্সী: হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ার রোগ
ডা. হোসনে আরা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here