বলা হয় শিশুরা স্বর্গের প্রতিনিধি। তাদের ঘুম হয় নিবিড়, সুন্দর। তবুও কিছু কিছু শিশুর ঘুমে হানা দেয় দুঃস্বপ্নেরা। তারা চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। তাদের বুক ধড়ফড় করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই দুঃস্বপ্নের কারনে শিশু আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটায়। দুঃস্বপ্নের কারনে একটি শিশুকে যেতে হয় নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে। চলুন দেখে আসি দুঃস্বপ্ন শিশুর জীবনে কি কি সমস্যা নিয়ে আসতে পারে এবং এর সমাধানের উপায়।
ঘুমের সমস্যা
দুঃস্বপ্নের কারনে রাতে শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এতে করে শিশুর নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু ঘুমালেই শিশু দুঃস্বপ্ন দেখে, সেহেতু ঘুমের প্রতি শিশুর ভয় কাজ করে। তাই স্বাভাবিক নিয়মে শিশু ঘুমাতে চায় না।
মানসিক সমস্যা
এসব শিশুর মধ্যে বড় হয়ে জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে থাকে এমনটিই দাবি গবেষকদের। প্রত্যেক শিশুরই কিছু সাধারণ দুঃস্বপ্ন থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়। ঘুম ভাঙার পর তা মনেও রাখতে পারে না শিশুরা। তবে এটি ক্রমাগত হতে থাকলে তা গুরুতর কিছুর লক্ষণ হতে পারে।
গবেষকের মতামত
একদল ব্রিটিশ গবেষক প্রায় ছয় হাজার ৮০০ বাচ্চার ওপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। শৈশবে দীর্ঘমেয়াদী দুঃস্বপ্ন ও ভয় পাওয়ার সাথে পরবর্তীতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে ৪৭ জনের কিছু মানসিক সমস্যার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্ধকার চরিত্র, ভয়ংকর দৈত্যরা শিশুদের কাছে বাস্তব হয়ে ওঠে৷ ফলে দিনের পর দিন ধরে মনের মধ্যে তাদের প্রভাব থেকে যায়৷ শিশুদের মনে স্বপ্নের আবেগ-অনুভূতি বিশেষ ভাবে দাগ কাটে৷ দিনে মনের মধ্যে যে চাপ তৈরি হয়, যে সব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়, দুঃস্বপ্ন সে সবেরই প্রতিফলন৷ যে কোনো শিশুর বিবর্তনের ক্ষেত্রেই রাতে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেই ভয় দূর না হলে বুঝতে হবে যে মনের মধ্যে কোনো সংঘাত চলছে৷ তখন তার চিকিৎসা দরকার৷
সমাধানের উপায়
চিকিৎসা ছাড়াও কিছু চর্চা শিশুদেরকে দুঃস্বপ্ন মোকাবিলা করাতে অভ্যস্ত করে তুলতে পারে-
১। দুঃস্বপ্নের ছবি আঁকা
জার্মান মনোবিজ্ঞানী রাবেয়া ম্যুলার একটি বিশেষ কর্মশালা চালাচ্ছেন এ ব্যাপারে। তিনি শিশুদেরকে দুঃস্বপ্নের ছবি আঁকতে বলেন। তারপর দুঃস্বপ্নে দেখা ঘটনাগুলোকে ছবির সাথে পরিবর্তিত করতে শেখান। যেমন ধরা যাক একটি শিশু স্বপ্ন দেখে যে সে বিছানা বালিশ সহ উড়ে যাচ্ছে। এই ছবিটি আকার পর তাকে বলা হয় নেমে আসার ছবি আঁকতে। এরকম কিছু ছবি আঁকার পর তার ধারণা হয় যে সে স্বপ্ন পরিবর্তন করতে পারে। সে বিশ্বাস ফিরে পায়। বের হবার এমন সব পথ খুঁজে পেলে দুঃস্বপ্নের ভয়ংকর শক্তি কমে আসে৷ শিশুরা আর তখন নিজেদের অসহায় বোধ করে না, দুঃস্বপ্নের মধ্যে নিজেরাই পরিস্থিতির রাশ ধরে৷
২। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন
তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এসব ব্যাপারে তাকে সাহসী হতে বলুন। আপনার শিশুকে বলুন দুঃস্বপ্নের ওইসব দৈত্য-দানবদের থেকে সে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৩। তাকে আশ্বাস যোগান
তাকে আশ্বাস যোগান। আপনি তার একমাত্র নির্ভরতা, এই বিশ্বাসটি গেঁথে দিন। আপনার শিশুকে বলুন আপনি থাকতে তার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।
৪। তাকে বোঝান, দুঃস্বপ্ন একটা সমস্যা
তাকে বোঝান, দুঃস্বপ্ন একটা সমস্যা, কিন্তু এটা নিয়েও বেঁচে থাকা যায়। আপনার নিজের ভীতি এবং তা কাটিয়ে ওঠার নিয়মগুলো জানান। বিখ্যাত ব্যক্তিদের উদাহরণ দিন, যারা এ ধরণের সমস্যাকে জয় করে এগিয়ে গেছেন।
৫। অন্ধকার ভীতি দূর করুন
অন্ধকার ভীতি দূর করুন। তার সাথে অন্ধকারের মধ্যে নানারকম খেলা খেলুন। যেমন, লুকোচুরি, ফ্ল্যাশলাইটের খেলা, লেজার লাইট ইত্যাদি। অন্ধকারের মধ্যেও মজা করতে পারলে তার ভয় অনেকটাই কমে আসবে। ঘুমানোর সময় তার কাছে তার প্রিয় কিছু যেমন পুতুল, বা লেগো সেট অথবা রঙ-তুলি রাখতে দিন।
৬। টিভি ও সিনেমা দেখায় সতর্ক হোন
টিভি শো গুলোতে কার্টুন বা ছোটদের সিনেমাতেও ইদানিং বেশ ভয়াল ইমেজ থাকে। আপনার শিশুটি যদি বেশি সংবেদনশীল হয়, তাহলে তাকে এসব দেখা থেকে বিরত রাখুন।
৭। মেডিটেশন বা পিএমআর শেখান
তাকে বিভিন্ন রিলাক্সেশন টেকনিক যেমন মেডিটেশন বা পিএমআর শেখান। নেট ঘাঁটলেই এ ব্যাপারে অসংখ্য টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।