বড়দের মত শিশুরাও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু সেটা যদি মাত্রারিক্ত হয় তখন তারা যেসব কাজ করে মজা পেত সেসব কাজ করা থামিয়ে দেয়।
কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে বাবা-মায়েরা যদি কিছু জিনিস তাদের বাচ্চাদের সাথে করেন তাহলে বাচ্চাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যে রিডিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যাথি ক্রিসওয়েল এই গবেষণাটা করেছেন।
১.কখনো বলবেন না: “চিন্তা করো না-এরকম আর হবে না”
চার থেকে আট বছরের শিশুরা ভুত,প্রেত বা বিভিন্ন প্রাণী দেখে উদ্বিগ্ন হতে পারে।
একটু বড় বয়সীরা শারীরিক আঘাতের ভয় পায়। কিন্তু বয়স যেটাই হোক না কেন, আপনার শিশুটির এই ভয়কে আপনি উড়িয়ে দেবেন না।
এসব ক্ষেত্রে তাদের যদি আপনি বলেন “এমনটা আর হবে না” তাহলে কিন্তু কাজ হবে না।
এর পরিবর্তে কীভাবে তাদের ভয় তাদের মনের ভিতর অনুভূত হচ্ছে সেটাতে স্বীকার করতে হবে।
২.শিশুরা যে বিষয়ে ভয় পায় সেটার পরিবেশ তৈরি না করা
ধরেন আপনার বাচ্চা, কুকুর দেখলে ভয় পায়। আপনি আপনার বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন সেই সময়ে একটা কুকুর সামনে চলে আসলো।
কিন্তু এখানে বার্তাটা হল, যদি আপনার বাচ্চা ভয় পায় সেটা ঠিক আছে।
এটার মানে কিন্তু এই না যে আপনি আপনার বাচ্চাকে জোর করবেন ঐ কুকুরের সামনাসামনি হতে।
বরং আস্তে আস্তে যাতে তারা পরস্পরের কাছাকাছি আসতে পারে এবং ভয় এক সময় আপনা থেকেই কেটে যায় সেটার জন্য সহায়তা করুন।
৩. দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌছাবেন না-মন দিয়ে শুনুন
বিষয়টা হল আপনাকে খুব ভালো করে বুঝতে হবে তারা ঠিক কখন এবং কি অনুভব করছে।
কিন্তু বার বার তাদের কাছে জানতে চাইবেন না কেমন অনুভব করছে। নিশ্চিত হন যে তাদের ভয়ের পিছনের কারণটা কী।
অনেক সময় আমরা চটজলদি একটা সিদ্ধান্তে পৌছে যাই।
বরং আপনার শিশুটি আপনার সাথে তার ভয়ের কারণ ব্যাখ্যা করবে তখন খুব মন দিয়ে শুনুন।
এমন হতে পারে যে , একটা ভুল বোঝাবুঝির উপর ভিত্তি করে এটা হয়েছে।
অধ্যাপক ক্যাথি বলছেন “যখন আমি ছোট ছিলাম তখন দ্রুতগতির ট্রেন দেখলে ভয় পেতাম। যখন খুব শব্দ করে সেগুলো চলে যেত আমি মনে করতাম ভিতরেও একই রকম অবস্থা”।
তাই আপনি তখনি আপনার বাচ্চাকে সাহায্য করতে পারবেন যখন আপনি সঠিকভাবে জানতে পারবেন , ঠিক কিসে আপনার বাচ্চাটি ভয় পাচ্ছে।
৪. প্রশ্ন করাটা বাস্তব সম্মত হবে না
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি আপনি জানতে চান পূর্বে কি ঘটেছিল, এটাতে তাদের মনে হতে পারে হয়ত আবারো সেটা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে।
ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন। আপনার শিশুকে মানসিক কৌশল শিখে নিতে উৎসাহিত করুন।
যাতে করে তারা নিজেদের ভয় নিজেরাই সামলাতে পারে।
যদি সে স্কুলের কোন নাটকে অভিনয় করতে ভয় পায় তাদের নিজেদেরকেই প্রশ্ন করতে সেখান “খারাপ কি হতে পারে, আমি কি অভিনয়ের সময় লাইনগুলো ভুলে যাব?”
কিন্তু এটাও তাদের চিন্তা করতে সাহায্য করুন “সবচেয়ে ভালো কি হতে পারে? অভিনয় এতটাই ভালো হল যে হলিউড থেকে অভিনয়ের অফার আসল!”
যাইহোক না কেন, ফলাফল হবে এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে থেকেই।
৫. ধীরে ধীরে তাদের ভয়কে পরীক্ষা করে দেখুন
আপনার শিশুকে তার ভয় কাটিয়ে উঠার পদক্ষেপ গুলো পার করার জন্য প্রশংসা করুন এবং পুরস্কৃত করুন।
এটা তাদের কাছে একটা স্বীকৃতি পাওয়ার মত হবে। এবং ভবিষ্যতে তারা নিজেরাই কৌশল বের করার চেষ্টা করবে।
৬. কিছু সময় উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক
কিন্তু যদি তাদের ভয় বা উদ্বিগ্নতা সব সময় হতে থাকে এবং এর ফলে তারা প্রতিদিনকার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখে তাহলে আপনার সাহায্য নিতে হবে।
আপনি বই পড়ে কৌশলগুলো জেনে নিতে পারেন বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হতে পারে।
মনে রাখবেন আপনি আপনার বাচ্চার জীবনের সব ভয় একেবারে মুছে ফেলার আশা করবেন না।
আপনার লক্ষ্য থাকবে আমাদের নিত্যদিনের আবেগ-অনুভূতি যে আমাদের বেড়ে উঠার একটা অংশ সেটাই তাদের সেখানো।
সূত্র: বিবিসি