মানসিক স্বাস্থ্যকে শারীরিক স্বাস্থ্য থেকে কম গুরুত্ব দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। একজন ব্যক্তির পূর্ণরূপে সুস্থ থাকার জন্য জন্য শুধু শারীরিকভাবেই নয় বরং মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা আবশ্যক।
যখন কেউ শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দ্বিধাবোধ করেনা। যে কোন শারীরিক অসুস্থতাকেই মানুষ শরীরের স্বাভাবিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে। সবাইই চেষ্টা করে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের কথা উঠলেই মানুষের মাঝে এক অজানা ভয় বা দ্বিধা কাজ করে। সবার কাছে এটা যেন এমন এক জটিল বা অস্বাভাবিক বিষয় যেটি নিয়ে আলোচনা করতে অনেক কম মানুষই আগ্রহী হয়ে থাকে। তারা কেন এমন করে? কেন অধিকাংশ মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য ততোটা গুরুত্ব পায়না যতোটা শারীরিক স্বাস্থ্য পেয়ে থাকে?
অধিকাংশ মানুষই মনে করেনা সুস্থ থাকা বলতে শারীরিক এবং মানসিক উভয় ভাবেই সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা বোঝায়। তাদের কাছে শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যই গুরুত্ব পায়। কিন্তু সামান্য মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা থেকেই যে বড়সড় শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এটা অনেকেরই বোধগম্য নয়। অনেকেই জানেননা মানসিক অশান্তি অনেক বড় শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে এবং এই মানসিক উদ্বিগ্নতার কারনেই অনেক শারীরিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়না। তাছাড়া এগুলো মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের অভাব, একাকীত্ব, অনিদ্রা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন জটিল সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক সমস্যা্র সৃষ্টি করে। তাই এগুলোকে কখনোই হেলাফেলা করা যাবেনা। যেটা অধিকাংশ মানুষই করে থাকে।
হাত কিংবা পা ভাঙলে, বা মাথায় কিংবা শরীরের অন্য কোথাও ব্যাথা পাওয়া ইত্যাদি যেমন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তেমনি দুশিন্তা, উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যা। শারীরিক সমস্যা উপশমে যেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তেমনি মানসিক সমস্যা নিবারণেও চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। অনেকেই মনে করেন মানসিক সমস্যা মানেই পাগলামি যা প্রকাশ করলে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হবে বা মানসিক সমস্যার চিকিৎসা মানেই পাগলের চিকিৎসা। তাছাড়াও অনেকে মনে করেন মানসিক সমস্যা গুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন নেই, এগুলো সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকাই একজন মানুষকে পূর্ণরূপে সুস্থ রাখতে পারে। এসব বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত থাকায় মানুষের মাঝে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করার আগ্রহ যেমন কম, তেমনি অনে ক্ষেত্রেই সুযোগের ও অভাব থাকে।
শারীরিক সমস্যা গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ করা যায়, কিন্তু মানসিক সমস্যা চোখে দেখা যায়না। এটিও মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দেওয়ার একটি বড় কারণ। নিজের এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা মানুষকে মানসিক পীড়ার মাঝে রাখে। মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়। কিন্তু মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় অনাগ্রহের কারণে শারীরিকভাবেও তারা সুস্থ থাকতে পারেনা। তাই মানসিক ও শারীরিক উভয়ভাবে সুস্থ থাকতে সমাজের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে এবং ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন। মানুষকে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে