মানসিক চাপে অবশ্যই সমানুভূতি প্রকাশ করতে হবে

0
48

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থার একটি সমন্বয়। একজন মানুষের স্বাস্থ্য হচ্ছে নীরোগ শরীর; সেই সঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি এবং সমাজের নানাবিধ চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে সক্ষম মন।

স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান মনের সুস্থতা। বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতা মোকাবিলায় নানা ধরনের বাধা রয়েছে। একই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা। এ কারণেই আমাদের অজান্তে  মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপের বিষয়ে আমরা খুবই অসংবেদনশীল। যা হাসি–ঠাট্টা ও সামাজিক আলোচনায় প্রতিফলিত হয়। এসব কারণেই মানসিক চাপ অস্বীকারের প্রবণতা দেখা দেয়। 

মানসিক চাপ অস্বীকারের প্রবণতা সমাজে অনেকখানি বিস্তৃত। ২৪ বছর বয়সী কর্মহীন থাকা আরিফুর রহামান জানান, ‘ব্যাক্তি জীবনের বিভিন্ন ঝামেলার কারণে মানসিক চাপ নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখি। আর বেশিরভাগ সময়েই এ সমস্যাগুলো প্রকাশ করি না। কারণ অনেকেই এসব সমস্যা শোনার পর হাসি–ঠাট্টা করে। এর ফলে মানসিক চাপ আরো বেড়ে যায়। তবে কখনও কখনও কাছের মানুষের সঙ্গে মানসিক চাপরে কথা প্রকাশ করলেও সঠিক সমাধান পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে সান্ত্বনা, এতে ক্ষনিক প্রশান্তি পাওয়া গেলেও দীর্ঘস্থীয় কোন সমাধান মিলে না।’ মানসিক চাপে থাকার পর কখনো চিকিৎসকের নিকট থেকে পরামর্শ নিয়েছেন কি এ প্রশ্নরে জবাবে  জানান, “সকলেরই মানসিক চাপ থাকে। বেশির ভাগ সময়  এ সমস্যা নিজে নিজে সমাধান করার চেষ্টা করে। আসলে শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়, মানসিক চাপ’র জন্যও চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় এ বিষয়ে তেমন ধারণা না থাকায় যাওয়া হয় নি।”

ব্যক্তিগত দুর্বলতা মনে করে বেশিরভাগ সময় আমরা মানসিক চাপ নিজেদের ভিতরে লুকিয়ে রাখি। দীর্ঘদিন ধরে মনের যন্ত্রণাগুলো রাখলে আমাদের কতটা ক্ষতি হতে পারে; সে বিষয়টি বলেছেন ডা. সাদিয়া আফরিন, রেসিডেন্ট এমডি (চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডালসেন্ট সাইকিয়াট্রি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি জানান, ‘মানসিক চাপ নিয়ে আমরা সাধারণত কথা বলতে চাই না। আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতির কারণে এমন করি। মনে করা হয়, মানসিক চাপের কথা বললে অন্যরা সেই ব্যক্তিকে দুর্বল ভাববে বা হাসি, মশকরার পাত্র হবে। এ কারণে নিজেদের মধ্যে আমরা দীর্ঘদিন চেপে রাখি এমনসব মানসিক চাপ, যেগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে জন্য হানিকর। ফলে, বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা, নিদ্রাহীনতা, হিস্টেরিয়া, আচরণজনিত সমস্যা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, আত্নহত্যার প্রবণতা, মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার মতো নানারকম মানসিক সমস্যা হয়। যা থেকে অন্যান্য সমস্যার উদ্ভব হতে পারে “ তিনি আরো জানান, ‘সহমর্মি এবং সমমর্মি দুটি শব্দ আছে, অন্যের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে কারো মানসিক সমস্যা বা চাপের কথা শুনে হাসি, ঠাট্টা করা মানে, তার প্রতি অবহেলা বা অবজ্ঞা প্রকাশ করা, যাকোনোভাবেই কাম্য নয়। এ কারণেই সেই ব্যক্তি পরবর্তীতে নিজের সমস্যার কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না । এর মানে, তার প্রতি আমরা সহমর্মিতা ও সমানুভূতিও প্রকাশ করা হল না। সেক্ষেত্রে তারা কারো কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকতে পারে, নিজের মাঝে চেপে রেখে উপরোক্ত নানারকম মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে।’

অন্যের মানসিক চাপের কথা শোনার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আগে তার প্রতি সমানুভূতি প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়ে ডা. সাদিয়া বলেন, ‘মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তাকে কোন তীর্যক মন্তব্য করা উচিত হবে না এবং তার সমস্যা শুনে ভাল বা মন্দ বিচার না করে তাকে মানসিক চাপজনিত সমস্যার সমাধানে উৎসাহিত করতে হবে। যোতে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তিনি সাহায্য করতে পারেন।’

ডা. সাদিয়া আফরিন আবার বলেন, ‘আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য তাকে মানসিক সহায়তা প্রদান করা যায়। সমস্যা গুরুতর হলে যেমন নিজেকে আঘাত করা, আত্নহত্যার প্রবণতা, মাদকাসক্ত ইত্যাদি সমস্যা থাকলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সাহায্য নিতে যেতে হবে। এতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের মধ্যে যে স্টিগমা বা ভুল ধারণা  তা থেকে বের হতেও সাহায্য করা হবে।’

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleশিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কনফারেন্স
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় গোড়ায় গলদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here