দম্পতি -১
এক দম্পতি চেম্বারে ঢুকলো। তারা সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর থেকে ছেলেটির যৌন সমস্যা দেখা দিয়েছে। জানা গেল এটি পুরুষটির দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর সাথে থাকার সময়ে তার কোন যৌন সমস্যা ছিলো না। দ্বিতীয় স্ত্রীর ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে। পুরুষটির বয়স তিরিশের কোটায়। শারীরিক কোন কারণও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না যা দিয়ে তার লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা ব্যাখ্যা করা যায়। তার হিস্ট্রি , ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ল্যাব ইনভেস্টিগেশনের রিপোর্ট বিশ্লেষন করলে যা দাড়ায় তা হল তার সাইকোজেনিক ইরেক্টাইল ডিজফাংশন সিচুয়েশনাল টাইপ। অর্থাৎ মানসিক কারণে লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা হচ্ছে যা অনেকটা পরিস্থিতি নির্ভর। আরো সহজ করে বললে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই তার লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা হচ্ছে মানসিক কারনে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে তাহলে কি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক খারাপ? না তা নয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ভালই আছে। তাহলে চিকিৎসা কি?
দম্পতি-২
গত পাঁচ বছর তাদের বিবাহিত জীবন। কিন্ত এই পাঁচ বছরের মধ্যে একবারও যৌন মিলন হয় নি। যৌন মিলনের বিকল্প তারা অনেক কিছু করেছেন ,যেমন ওরাল সেক্স , মিউচুয়াল মাস্টারবেশন, বিটুইন থাই (উরু তে যৌন সঙ্গম)। কিন্ত যৌন মিলন সম্ভব হয়নি। কারন মেয়েটির মাত্রতিরিক্ত ভয়। গাইনোকোলজিস্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্ত কাজ হয় নি। মেয়েটি তাকে যোনীতে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করতে দেয়নি। পুরুষটি এই পাঁচ বছরে হতাশার চরম সীমানায় পৌছে গেছে। যদিও সম্পর্ক ভাল তবুও ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যা তাদের দুজনের জন্যই বেদনাদায়ক। তাহলে উপায়?
দুই দম্পতির ক্ষেত্রেই ঔষধের কোন ভুমিকা নেই। ঔষধ তাদের কোন পরিবর্তন আনবে না। বিহেভিয়োরাল মেথড বা মনোচিকিৎসার অনেক পদ্ধতিই এখানে কাজ করবে। কগনেটিব বিহেভিয়র থেরাপি (সিবিটি ).সেক্স থেরাপি, মাইন্ডফুলনেস, মেডিটেশন, হিপনোসিস বা সম্মোহন এই সবগুলো থেরাপিই এখানে ব্যবহারযোগ্য। তবে রোগীরা এই রকম সমস্যায় পড়লে এমন ধরনের ঔষধ চায় যে তা যেন রাতারাতি ম্যাজিকের মতন কাজ করে। এক মাত্র মাইন্ডফুলনেস ছাড়া আর সবগুলো পদ্ধতিতেই সময় লাগে এবং অন্য একজনের সাহায্য প্রয়োজন হয়। যৌনতার বিষয়ে অনেকেই বার বার বিশেষজ্ঞের দারস্থ হতে পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে মাইন্ডফুলনেসই ভাল এবং নির্ভর যোগ্য পদ্ধতি যেখানে রোগী নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে পারেন। তবে কে শিখাচ্ছেন কিভাবে শিখাচ্ছেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। মাইন্ডফুলনেস শুনেই বুঝে ফেলার মতন একটি শব্দ। সহজ বাংলায় বলা যায় মনোযোগ। প্রশ্ন আসে সামান্য মনোযোগে এতবড় অসামান্য সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? যাবে। কারন আমাদের মনোযোগের সাথে অনেক কিছু জড়িত।
মনে প্রাণে আমরা যখন কোন কিছু করতে চাই তখন তা সম্ভব। মনের সাথে প্রাণের বন্ধন তৈরী করে দেওয়ার কাজটি করে মনোযোগ। মাইন্ডফুলনেস হলো কোন বিষয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে ক্রমাগত মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল। এই কৌশল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে আসছেন ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে। জন-কাবাট-জিন সেটা পাশ্চাত্যের কাছে তুলে ধরেন ১৯৭০ সালে। তার এই আবিস্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন আনে। দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথা, ক্যান্সারের ব্যথা এরকম অনেক সমস্যারই সমাধান খুজে পাওয়া যায় মাইন্ডফুলনেসে। মনোদৈহিক যৌন সমস্যারও ভাল সমাধান পাওয়া যায় মাইন্ডফুলনেসে। কিভাবে সম্ভব?
মনোদৈহিক যৌন সমস্যার পিছনে কারণ দেখা যায় পারফরম্যান্স এংজাইটি (কর্মদক্ষতা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা ), যৌন বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা, নেতিবাচক অনুভূতি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী। যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ বাড়িয়ে ঠিক করা যায় ম্যাজিকের মতন। যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর চর্চা আরেক টি মাইন্ডফুনেস পদ্ধতি যা ব্যবহার করা হয়েছিলো দ্বিতীয় দম্পতীর ক্ষেত্রে। দেখা গেলো মেয়েটির যৌন উত্তেজনা যৌন ভীতিকে অতিক্রম করে গেল। আর তখনই মেয়েটি মুক্তি পেয়ে গেলো দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভ্যাজিনিসমাস থেকে।
মজার বিষয় হচ্ছে মাইন্ডফুলনেস ম্যাজিকের মত কাজ করলেও এর বাস্তব ভিত্তি আছে। মাইন্ডফুলনেস আমাদের ব্রেইনে যে পরিবর্তন আনে তা ফাংশনাল এম আর আই এর মাধ্যমে দেখা যায়। তাই মেডিকেল সায়েন্সে এই পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডা. আতিকুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে