[int-intro]সঙ্গীতের পেছনের তারকা তিনি। খ্যাতিমান বেহালা শিল্পী। সঙ্গীত পরিবারে জন্ম নেয়া এই গুণী শিল্পী নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সর্বত্র। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও তুলে ধরেছেন বাংলাদেশকে। কাজ করেছেন অনেক খ্যাতিমান শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালকের সাথে। তিনি নুরুজ্জামান বাদশা। মনের খবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, সঙ্গীতের কথা, কাজের কথা, সঙ্গীত নিয়ে ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকতে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]ভালো থাকতে বেহালা বাজাই।[/int-ans]
[int-quote]সঙ্গীত হলো সম্পূর্ণ গুরুমুখী বিদ্যা। সঙ্গীত চর্চা করতে গেলে তাকে একই সাথে যেমন শিক্ষাগুরুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখতে হবে তেমন ব্যক্তি জীবনেও তাকে বিনয়ী হতে হবে। এগুলো সঙ্গীত শেখার সম্পূর্ণ গোরার বিষয়। এর বাইরে গিয়ে আপনি যদি কিছু করতে চান বা খ্যাতি পরিচিতি অহংবোধ এসবের মধ্যে থাকেন তাহলে খুব দ্রুতই আপনি সঙ্গীত থেকে বিচ্যুত হবেন।[/int-quote]
[int-qs]বেহালার অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]বেহালার অনুপ্রেরণা এসেছে আমার বাবার থেকে। আমার বাবা ছিলেন উপমহাদেশের একজন নামকরা বাঁশী বাদক। বাবার মাধ্যমেই আমার বেহালার হাতে খড়ি।[/int-ans]
[int-qs]বাবার খ্যাতি বাঁশিতে থাকলেও আপনার খ্যাতি বেহালায়। কারণটা কি?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]আসলে আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম তবলা দিয়ে। সে সময় একজন ইংরেজ ভদ্রলোক আমার বাবার কাছে বাঁশী শিখতেন। উনার মাধ্যমেই কীভাবে কীভাবে যেন আমার কাছে বেহালা চলে আসে।[/int-ans]
[int-qs]বেহালাকে পেশা হিসেবে নেয়ার চিন্তা কখন করলেন?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]প্রথমে ঢাকা অর্কেস্ট্রাতে বাজাতাম তারপর স্বাধীনতার আগে ‘উজালা’ নামক একটি সিনেমাতে বাজাই। এরপর অবশ্য বিকম পাশ করে একটি প্রতিষ্ঠানে একাউন্টেন্টের কাজ নেই। সেই চাকুরীর সমটাতেই বাংলাদেশ বেতারে কাজ করি। দিনে অফিস পরে অফিস শেষে বেতারের কাজ। এভাবে চলতে চলতে এক সময় একাউন্টেন্টের চাকুরীটা ছেড়ে দেই এবং বেহালাকেই পেশা হিসেবে বেঁছে নেই।[/int-ans]
[int-qs]আপনি দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইতে বেহালার উপর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দক্ষিণ ভারতের সঙ্গীতের প্রভাব এদেশে কতটুকু?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]নাচে ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতের প্রভাব থাকলেও সঙ্গীতে এদেশে দক্ষিণ ভারতের প্রভাব খুব একটা নেই। বরং বলা চলে বাংলাদেশের সঙ্গীত উত্তর ভারতের দ্বারা বেশি প্রভাবিত।[/int-ans]
[int-qs]সাম্প্রতিক সময়ে করা কোন কাজের ব্যাপারে বলবেন কি?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে আসা উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ‘লীলাবতী আখ্যান’ নামে একটি নৃত্যনাট্যের কাজ করেছি। লীলাবতী হলো আমরা যাকে খনা নামে চিনি তাঁরই আরেক নাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হলেও কাজটি অনেক প্রশংসিত হয়।[/int-ans]
[int-qs]বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনি বেহালা বাজিয়েছেন। একজন বাংলাদেশের বেহালা শিল্পীর মূর্ছনা অন্যদের কতটুকু প্রভাবিত করেছে?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]বিদেশের মাটিতেও যথেষ্ট সম্মান পেয়েছি। মস্কোতে যখন বাজাতে যাই তখন সেখানকার সামরিক বাহিনীর একজন খুব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমার বেহাল শুনে আলাদা ভাবে আমার সাথে দেখা করতে চান এবং কথা বলেন। চীনে গিয়েছিলাম বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মাসব্যাপী এক সম্মেলনে। সেখানকার ডিনার পার্টিতে তাঁরা আমাকে বাজাতে অনুরোধ করেন। এমন অনেক অনেক ঘটনা রয়েছে।[/int-ans]
[int-qs]বেহালাকে বলা চলে অনেকটা নতুন বাদ্যযন্ত্র অর্থাৎ ষোড়শ শতকের দিকে এটা আসে। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা দুনিয়ার সঙ্গীতে সে নিজস্ব স্থান করে নেই। বেহালার কোন গুণের কারণে এমনটি সম্ভব হলো বলে মনে করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]বেহাল তার মূর্ছনা তোলার নিজস্ব যে গুণ সেটির কারণেই এটি হয়েছে বলে মনে করি। একই সাথে বিভিন্ন দেশের যারা যন্ত্রশিল্পী আছেন তাঁরা এটির সঠিক ব্যবহার করতে পেরেছেন। এভাবেই বেহালা এক সময় সারা পৃথিবীর সঙ্গীতে তার নিজের জায়গা তৈরি করেছে।[/int-ans]
[int-qs]দুঃখ বা আনন্দ দুটো তৈরির ক্ষমতাই বেহালার রয়েছে। একজন বেহালা শিল্পীর মনে এটি কি প্রভাব ফেলে?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]প্রভাবটা অনেকটা নির্ভর করে পরিবেশের উপর। এছাড়া শ্রোতাদের আগ্রহ নিজের মনের অবস্থা এর সব মিলিয়েই সুরের ভিন্নতা আসে। পরিবেশ বুঝেই ভিন্ন ভিন্ন রাগকে বাছাই করি।[/int-ans]
[int-qs]রাগ বাছাই করার কোন নিয়ম আছে কি?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পণ্ডিতগণ যে সময়ের জন্য যে রাগ তৈরি করে গেছেন সেগুলোকেই অনুসরণ করি। যেমন সকালের আবহ থাকলে রাগ ভৈরবী এমন আরকি।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ থাকলে একটি আনন্দের সুর বাজানো কি মনের উপর প্রভাব ফেলে?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]কাজের সময় তখন একটাই ভাবনা থাকে কাজটি আমাকে ভালমতো করতে হবে। যার কারণে মন খারাপ থাকলেও সেটি সেভাবে প্রভাবিত করে না। তবে হ্যাঁ, একেবারে প্রভাবিত করেনা সেটিও হয়তো বলা যাবে না। তবে সেটির তেমন কোন প্রভাব কাজের মধ্যে থাকে না।[/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/07/badsha-2.jpg[/int-img]
[int-qs]মিউজিকে এখন ইলেক্ট্রনিক্সের অনেক ব্যবহার দেখা যায়। মূল যন্ত্রের সুর আর ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের সুরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের ব্যবহার অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে। বিশেষ করে গানের ক্ষেত্রে কীবোর্ড বেজ ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সেগুলো হয়তো ক্ষণিকের কাজ চালানো যায় কিন্তু আসল যে সুর বা সুরের মূর্ছনা সেটির জন্য আপনাকে আসল যন্ত্রের কাছেই যেতে হবে। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র মূল যন্ত্রের বিকল্প হিসেবে কখনও ব্যবহৃত হবে না।[/int-ans]
[int-qs]কিন্তু আগে যেটা ছিলো একটা গানের রেকর্ডিং-এ অনেক যন্ত্রশিল্পী একসাথে বাজাতো। সেটি এখন আর দেখা যায় না। এটা কি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের বহুল প্রসারের একটি কারণ নয়?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]তার চাইতে বড় কারণ হলো আমাদের প্রযোজকদের আর্থিক স্বল্পতা বা কম বিনিয়োগ। আপনি যতোই ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করেন না কেন, সেটিকে আপনি কখনও মূল যন্ত্রের মানের বলতে পারবেন না বা বলা সম্ভব নয়।[/int-ans]
[int-qs]যন্ত্র সঙ্গীতে এদেশের ভবিষ্যৎ কি?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]অনেক ভালো। আগের চাইতে অনেক বেশি মানুষ এখন এসব শেখায় আগ্রহী হচ্ছে এবং শ্রোতা তৈরি হচ্ছে। একই সাথে এসব নিয়ে কাজ করার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে যা আগে সেভাবে ছিলো না।[/int-ans]
[int-qs]আগ্রহের একটা ওপিঠ আমরা দেখতে পাই। অনেকের মধ্যে গান বা সঙ্গীত জনপ্রিয়তা বা পরিচিত পাওয়ার একটা মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছে। যার কারণে দ্রুত খ্যাতি পাওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এটা কি সঙ্গীতের জন্য ক্ষতিকর নয়?[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]সঙ্গীত হলো সম্পূর্ণ গুরুমুখী বিদ্যা। সঙ্গীত চর্চা করতে গেলে তাকে একই সাথে যেমন শিক্ষাগুরুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখতে হবে তেমন ব্যক্তি জীবনেও তাকে বিনয়ী হতে হবে। এগুলো সঙ্গীত শেখার সম্পূর্ণ গোরার বিষয়। এর বাইরে গিয়ে আপনি যদি কিছু করতে চান বা খ্যাতি পরিচিতি অহংবোধ এসবের মধ্যে থাকেন তাহলে খুব দ্রুতই আপনি সঙ্গীত থেকে বিচ্যুত হবেন।[/int-ans]
[int-qs]অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মনের খবর পাঠকদের সাথে সঙ্গীতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরার জন্য।[/int-qs]
[int-ans name=”নুরুজ্জামান বাদশা”]ধন্যবাদ মনের খবরকেও।[/int-ans]