ঠিক আবেগীয় সম্পর্ক নয়। ক্ষণিকের জন্য অন্য কারো সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াকে বলা হয় ম্যাইট পোচিং। অনেক সময় এ ধরনের আচরণ যৌন সম্পর্কের পর্যায়ে না গেলেও সম্পর্কের বাইরে অন্য কাউকে আকর্ষণের পর্যায়ে থেকে যায়। ম্যাইট পোচিং নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে দেখা যায়।
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার হলো ব্যক্তিত্বের সমস্যাজনিত মানসিক রোগ। নার্সিসিস্টিকের মতো আরো অনেক ধরনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার আছে। সেসব পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে যৌন আচরণে কী কী ভিন্নতা দেখা যায় সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়। তবে তার আগে প্রশ্ন আসে পার্সোনালিটি
ডিজঅর্ডার কী?
পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব হলো একজন মানুষের বৈশিষ্ট্য সমূহের সম্মিলিত রূপ যা নির্ধারণ করে তার আচরণ। প্রতিটা মানুষের আচরনের একটি নিজস্ব ধরন আছে। তাই বলে এমন নয় যে কোনো মানুষের সাথে কোনো মানুষের মিল নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রেই মিল আছে। আর সে কারণেই শত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সুস্থ ব্যক্তিত্বের আচরণ থেকে অসুস্থ ব্যক্তিত্বের আচরণকে আলাদা করা যায়। সে নিজেকে কীভাবে দেখে, অন্যকে কীভাবে নেয়, পরিবেশকে কীভাবে বিচার করে, তার আবেগীয় প্রতিক্রিয়ার ধরন-মাত্রা-যথার্থতা, পারস্পরিক আচরণ ও ঝোঁকের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দেখে বুঝে নেওয়া যায়, তিনি সুস্থ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, নাকি অসুস্থ ব্যক্তিত্বের। একজন মানুষের মানসিক রোগ হয়েছে আমরা তখনই বলি যখন একজন মানুষ তার নিজের সম্পর্কে সঠিক অনুধাবন করতে পারে না, প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলো ঠিকভাবে করতে পারে না এবং অন্যদেরকেও ব্যাহত করে। ব্যক্তিত্বের জন্য যখন এই অবস্থা তৈরি হয় তখন আমরা বলি পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। অর্থাৎ কেনো ব্যক্তি যদি নিজেকে ত্রুটিপূর্ণভাবে দেখে, অন্যের প্রতি যদি তার সহমর্মিতা না থাকে, প্রাত্যহিক কাজগুলো ঠিকভাবে করতে না পারে এবং ঝোঁকের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে তিনি পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে এ, বি ও সি এই তিনটি ক্লাস্টার বা উপদলে বিভক্ত করা হয়েছে। ক্লাস্টার এ তে রয়েছে প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, সিজোয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, সিজোটাইপাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। ক্লাস্টার বি তে আছে এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, হিস্টিরিওনিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। ক্লাস্টার সি তে রয়েছে এভোয়ডেন্ট পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, ডিপেনডেন্ট পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ও অবসেসিভ-কমপালসিভ পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার।
লেখার শুরুতেই ম্যাইট পোচিংয়ের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছিলাম যা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে দেখা যায়। যদিও তারা যৌন সম্পর্কে যায় কিন্তু সঙ্গীকে সঙ্গীর মর্যাদা দেয় না। বরং অনেকটা খেলার সামগ্রী হিসেবে দেখে। খেলুড়ে স্বভাব নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। খেলা শেষ হয়ে গেলে সম্পর্কও শেষ। হিস্টিরিওনিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারেও এই প্রবণতা দেখা যায়। তবে হিস্টিরিওনিক যারা তাদের মধ্যে আবেগ তাড়িত হওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু নার্সিসিস্টিকরা হয় ঠান্ডা মাথার এবং হিসেবি। বিবাহবর্হিভূত অপ্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্ক এই দুই দলই করে। তবে তা তাড়নারা ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে নয়। নারী হিসেবে বা পুরুষ হিসেবে বিপরীত লিঙ্গের কাছে সে কতটা আকর্ষণীয় সেটা জানতে যেয়েই সে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কে জড়ায়। যা তার আত্মবিশ্বাসে যোগান দেয়।
যৌনতার ওপর পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রভাব গবেষণায় সবচেয়ে বেশি যেটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে সেটি হলো, বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। তার কারণও আছে। যত ধরনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার আছে তাদের মধ্যে এরা বেশি ইম্পালসিব বা আবেগতাড়িত। কারো কাছে মনঃক্ষুণ্ণ হলে তাকে বাধ্য করতে এরা নিজের ক্ষতি করে যেমন হাত কাটা, আত্মহত্যার চেষ্টা করা ইত্যাদি। ওপর থেকে দেখলে অনেকটা এরকমই মনে হয় কিন্তু এদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, ঠিক অন্যকে বাধ্য করতে নয় বরং অন্যের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মানসিক কষ্টটা এদের এত বেশি যে শরীরকে আঘাত না করে তারা পারে না। সত্যি কথা বলতে কী, আবেগের প্রতি এদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ঠিক তাই যৌন আবেগেও তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বিবাহবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক তাই এদের মধ্যেও দেখা যায়। দাম্পত্য সম্পর্কে এরা যৌনতাকে ব্যবহার করেন সঙ্গীকে পুরস্কৃত করতে অথবা শাস্তি দিতে। রোমান্টিক সম্পর্ক চলাকালীন এদের দ্বারা ডেইট রেপ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। অ্যান্টিসোস্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার রয়েছে যাদের তারাও রেপ করে। তবে তাদের মধ্যে কোনো আবেগ কাজ করে না। তারাও বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কে জড়ায়। সেক্ষেত্রেও তারা আবেগহীন এবং হিসেবি। হৃদয়হীনভাবে তারা সম্পর্কের ইতি টানে।
ডিপেনডেন্ট পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যাদের তারা সব সময় বিচ্ছেদের ভয়ে ভীত থাকেন। বিচ্ছেদ এড়াতে তারা যৌনতাকে ব্যবহার করেন। সে কারণে তারা সেক্সুয়ালি সাবমিসিভ হন। অর্থাৎ শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার চেয়ে অপর পক্ষের ইচ্ছাকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাদের চেষ্টা থাকে অপর পক্ষকে নিজেদের প্রতি আসক্ত করে রাখতে। প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যাদের সব কিছুতেই তাদের একটা অবিশ্বাস কাজ করে। তার সেক্সুয়াল লাইফ ঠিক আছে কিনা সেটা জানার জন্য তারা মিলিত হন। সিজোটাইপাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যাদের তারা যেকোনো ধরনের ঘনিষ্ঠতায় অস্বস্তি বোধ করেন। তাই যৌন সম্পর্ক তারা এড়িয়ে চলেন। সিজোয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যাদের তারা হন অ্যাসেক্সুয়াল। তারা যৌন চাহিদা অনুভব করেন না। যৌন এ আচরণগুলো সব সময় যে বিশেষ কোনো পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে নির্দেশ করে এমন নয়। পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার নেই এমন লোকও এ ধরনের আচরণ করে ফেলতে পারেন। তবে বারবার করার প্রবণতা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারকে নির্দেশ করে।