যদি আপনি এটা বিশ্বাস করেন যে, নিজেকে যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনি ভালো রাখার প্রয়াস করতে পারবেন, তাহলে একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার এই আত্মবিশ্বাসই হবে আপনার ভালো থাকার মূল উপকরণ। বিভিন্ন গবেষণাও এটাই বলছে।
ভালো থাকার সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। তবে সবার সব রকম ভালো থাকার মূল বিষয় হল মানসিক প্রশান্তি। অবস্থা যেমন ই হোক, একমাত্র মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকলেই একজন মানুষ নিজেকে ভালো আছেন বলে ভাবতে পারেন। পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষই নিজেদের ভালো রাখার বা ভালো থাকার এই ছোট্ট হিসেবটি বুঝতে পারেনা। ভালো থাকা কোন পরিস্থিতি বা সময়ের উপর নির্ভর করেনা। বরং এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বহিঃপ্রকাশ যা নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণের ক্ষমতা তার নিজের মাঝেই থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা মনে করেন ভালো থাকা বা না থাকা নিজের আয়ত্ত্বের মধ্যেই রয়েছে এমন মানুষ অন্যদের , যারা ভাবে তাদের পরিস্থিতি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থাই তাদের ভালো থাকা না থাকা নির্ধারণ করে তাদের, তুলনায় অধিক সুখ এবং সন্তুষ্টিতে থাকে। আবার, মানুষের মানসিক স্থিতি বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হতে পারে। আর এ কারণেই ভালো থাকা নিয়ে মানুষের ধারনাও বিভিন্ন সময়ে বদলে যায়। যে বয়সে মানুষ যত বেশী আত্ম নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রাখে এবং নিজেদের ভালো থাকা-মন্দ থাকাকে নিজের মানসিক অবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে বয়সে মানুষ ততো বেশী সুখ ও স্বস্তিতে থাকার অনুভূতি লাভ করে।
তাই বলা যায়, সুখী হওয়া বা ভালো থাকা প্রকৃতপক্ষে ধারণা প্রসূত বা মানসিক অবস্থা প্রসূত একটি ফল যা আমাদের সুখ বা দুঃখের অনুভূতি প্রদান করে। অনেক সময় অনেকেই কম অর্থ, কম প্রতিপত্তি , তুলনামূলক কম ক্ষমতা সম্পন্ন হয়েও অধিক অর্থ বা ক্ষমতাবান মানুষের তুলনায় অধিক সুখী বা বেশী ভালো থাকেন। এর কারণ তাদের মানসিক অবস্থা। যিনি কম পেয়েও নিজেকে সুখী মনে করছেন তিনি ভালো আছেন। আবার কেউ বেশী পেয়েও নিজেকে সুখী ভাবতে পারছেন না, তিনি ভালো নেই। এভাবেই আমাদের ভালো থাকাকে আমাদের মন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আমাদের মন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটাই তো হওয়া উচিৎ ছিল!
সাধারণত মানুষ যখন একটি অনুকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সময়ের মধ্য দিয়ে যায় তখন তার মাঝে সাধারণভাবেই মানসিক স্থিরতা কাজ করে এবং নিজেকে সুরক্ষিত ও সুখী মনে হয়। আবার পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিকূল হলে, যেমন বন্যা, মহামারী বা অন্য কোন দুর্যোগে মানসিক অস্থিরতায় ভোগে এবং নিজেকে নিয়ে, নিজের অবস্থা নিয়ে মানুষ মানসিক ভাবে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন শুরু করে। তখন তার মাঝে সৃষ্টি হয় মানসিক অসন্তোষ এবং সে নিজেকে অসুখী ভাবতে শুরু করে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে সে ভাবেনা যে তার আত্মবিশ্বাস, তার মানসিক অবস্থা তার নিয়ন্ত্রণে নেই, যেটি থাকা উচিৎ ছিল।
এভাবেই অনুভূতি গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেলে আমাদের মানসিক সন্তুলান হারাবে এবং আমরা কখনোই সেভাবে থাকতে পারবোনা যেভাবে আমরা চাই। তাই আমাদেরকে এসব অনুভূতি এবং মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার মত আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি যেমন ই হোক, আমাদের সমস্যা গুলো কাটিয়ে ওঠার মত মানসিক শক্তি আমাদের মাঝে থাকবে, আমরা ভেঙ্গে পড়বো না এবং পরিস্থিতি যেমন ই হোক আমরা ভালো থাকতে পারবো।
আমাদের চিন্তাভাবনা, আমাদের মানসিকতা কেমন সেটির উপরই আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। আঘাত পেয়ে আপনি যত কাতরাবেন, আপনার মধ্যে ব্যাথার অনুভূতি ততোই প্রবল হবে। কিন্তু আপনি যদি ধৈর্য সহকারে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এটা ভাবতে পারেন যে ব্যাথা যেমন ই হোক সেটি সহ্য করবার ক্ষমতা আপনার আছে, তখন সেটি অনেক পীড়াদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করবে। তাই বলা যায়, খারাপ বা ভালো থাকা সম্পূর্ণই নির্ভর করে আমরা মনে মনে কোন পরিবেশ বা অবস্থাকে কিভাবে দেখছি তার উপর অর্থাৎ আমাদের প্রতিক্রিয়ার উপর। দৃষ্টি ভঙ্গী বদলালে পরিস্থিতি এবং পরিবেশ ও বদলে যাবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে