ডেঙ্গু জ্বর মহামারি আকার ধারণ করেছে দেশের সর্বত্র। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু সম্পর্কিত নানা রকম তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এতে ভ্রান্তি আর গুজবও তৈরি হচ্ছে কম না! ডেঙ্গু সম্পর্কে মানুষের ভুল-বোঝাবুঝি নিয়ে লিখেছেন ডা. কামরুল আহসান।
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। ইট’স নট আ প্লেটলেট ডিসঅর্ডার। ডেঙ্গুতে শুধু প্লেটলেট কমে যায় না, শ্বেত রক্ত কণিকাও কমে যায়। বাস্তবে শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়া দেখে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, প্লেটলেটও কমে যাবে। প্লেটলেট কমে যায় এমন অনেক রোগ আছে। দাঁত ভাঙা নামের কিছু রোগে প্লেটলেট কমে রক্তপাত হয়। ইডিওপ্যাথিক থ্রোম্বোসাইটোপেনিক পারপিউরা, লিউকেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া এসব রোগের উদাহরণ। এগুলো সব রক্তের রোগ, কোনোটাই সংক্রামক না। এসব রোগে প্লেটলেট স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। ডেঙ্গুতে শুধু প্লেটলেট কমে গিয়ে রক্তপাতের ঘটনা খুব একটা ঘটে না। এটার সাথে অন্য কারণ জড়িত। ক্লটিং ফ্যাক্টর এর মধ্যে অন্যতম। সুতরাং ডেংগু’কে ঘিরে প্লেটলেট নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা কিন্তু ডেঙ্গুতে ক্লটিং ফ্যাক্টর নিয়েও মাথা ঘামান না।
তাহলে কি নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত হন? যে ব্যাপারটা রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে, তা হচ্ছে শক। যাকে চিকিৎসকরা বলেন ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। শক আবার কী! ইলেক্ট্রিক শক খেয়েছেন, কোন দুঃসংবাদে শকড হয়েছেন। ডেঙ্গু আবার কীসের শক দেয়? শক কথাটাও নতুন, না? ডেঙ্গু ছাড়াও অনেক কারণে রোগী শকে চলে যায়। এই শকই ডেঙ্গু রোগীকে বিপদে ফেলতে পারে। শকের মেকানিজম খুব সহজ না। সাধারণভাবে বুঝতে গেলে শকে চলে গেলে রোগীর পালস পাওয়া যায় না, ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করা যায় না, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়, রোগী প্রচণ্ড দুর্বলতা বোধ করে, দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি থাকে না।
বোঝা গেল ব্যাপারটা? এই যে প্রতিদিন চিকিৎসকরা রক্তের CBC পরীক্ষা করতে দেন, কখনো কখনো দিনে দুইবারও করতে দেন; কেন করতে দেন? প্লেটলেট দেখতে? না, প্লেটলেট বা ডেঙ্গুর পয়েন্ট যা’ই বলেন না কেন তার জন্য না। CBC রিপোর্ট দেখে তারা হেমাটোক্রিট দেখেন। এবং একটা রিপোর্টের হেমাটোক্রিট দেখে কিছু বোঝা যায় না। একটার সাথে আরেকটা তুলনা করতে হয়। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখানে কিছু অঙ্ক করে তারপর সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এখনতো বলবেন, এমনিই প্লেটলেট নিয়ে বাঁচি না, আপনি আসছেন হেমাটোক্রিট নিয়ে। আপনার বুঝতে হবে না! বোঝাটা কঠিন হয়ে যাবে, যদি না আপনি চিকিৎসক হন। ডেঙ্গুতে রক্তনালী থেকে জলীয় অংশ বের হয়ে পেটে, ফুসফুসের আবরণীর মাঝে ঢুকে যায়। এতে রক্ত জলীয় অংশ হারিয়ে ঘন হয়ে যায় মানে, হেমাটোক্রিট বেড়ে যায়। জলীয় অংশ কমে গেলে ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং এক সময় রেকর্ড করা যায় না। প্রেসার কমে গেলে প্রথমে হার্ট রেট বা পালস বেড়ে যায় এবং এক সময় পালস দুর্বল হয়ে আর পাওয়া যায় না। এ অবস্থাকে আমরা শক বলি। এটা একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি। মানে রোগীর প্রাণহরণকারী অবস্থা।
এই শক ম্যানেজ করতে গিয়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। আর এবারের ডেঙ্গুতে রোগীরা শক সিন্ড্রোম নিয়ে বেশি আসছেন। আরেকটা ব্যাপার শক থেকে রোগী রিকভার করলে প্লেটলেট আস্তে আস্তে বেড়ে যায়। সব কিছু ঠিক থাকলে প্লেটলেট ৫০ হাজারের উপরে গেলে রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া যায়। মনে রাখবেন, প্লেটলটের স্বাভাবিক মাত্রা কিন্তু দেড় লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ। ল্যাব রিপোর্টের এই রেফারেন্স দেখে ডাক্তারকে দুষবেন না! রেফারেন্স ভ্যালুকে ব্যাখ্যা করার মত যথেষ্ট জ্ঞান হয়তো আপনার নেই।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।
মনের খবর ম্যাগাজিনের প্রিন্ট ভার্সন পড়তে ক্লিক করুন
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে