এক এক জন মানুষের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন এক এক রকম। এক এক জন মানুষের সন্তানদের ঘিরে তাদের গল্প এক এক রকম। সফলতার ব্যাপারেও নানা মুনির নানা মত। আজ আমি লিখতে বসেছি আমার সন্তানকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমার সূদুরপ্রসারী স্বপ্নের গল্প।
২৮ মে, ২০১৭। সকাল ১০টার দিকে আমার শ্বশুরমশাইকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো হার্ট অ্যাটাকের কারণে। ২৯ মে, ২০১৭, সূর্যোদয়ের অনেকটা আগে, আমার ১ বছর ৩ মাস বয়সী ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হলো, ১০৪ ডিগ্রী জ্বর। ঘুমের মধ্যে বমি করে চোখ উল্টিয়ে ফেললো। সাথে সাথে ঐ একই হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ওকেও নিয়ে গেলাম। তখন চিকনগুনিয়ার কারণে হাসপাতালে বেড পাওয়া যাচ্ছিলো না। হাসপাতালে যাওয়ার সময় বাসায় সবাইকে বলে গিয়েছিলাম, “দোয়া করবেন ছেলেটাকে যেন ফিরিয়ে আনতে পারি”। ২৯ মে, ২০১৭ সকাল ৮ টার দিকে ছেলেকে বাসায় ফিরিয়ে আনলাম বেশ অনিশ্চয়তার সাথে। সকাল ১০ টার দিকে আমার শ্বশুরমশাই পরলোক গমন করলেন। মনে হলো যেন তিনি আজরাইলকে বলেছিলেন আমার ছেলের বদলে তাঁর জান কবজ করতে!
আমি একজন ডাক্তার। ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল অন্যরকম কিছু হব। যেমন, বাড়ির ডিজাইনার (আর্কিটেক্ট) বা চিত্রশিল্পী কিম্বা গায়িকা, নৃত্যশিল্পী। ইচ্ছা ছিল অনেক দেশ ঘুরবো নিজের পছন্দমত। ইচ্ছা ছিল যেমন টাকা ইনকাম করবো তেমন সেই টাকা মানুষের সেবায় ব্যয় করবো। কিন্তু সব ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করে কবে অন্যের ইচ্ছা নিজের ইচ্ছা হয়ে গেল বুঝলাম না। বাসা থেকে নির্দেশ, ফাইনাল প্রফের পর বিয়ে করতে হবে, করলাম। ইন্টার্নীর পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের প্রিপারেশন নিতে চাইলাম, বলা হলো বাসার পাশে জবে ঢুকতে, ঢুকলাম। প্রেগনেন্ট হলাম, চাকুরীস্থলে প্রেগনেন্ট ডাক্তারদের তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই, চাকরি ছাড়তে বলা হলো, ছাড়লাম। ছেলের ১ বছর ৫ মাস বয়সে দেখলাম সে অনেক কিছু পারে, আধো আধো নামও বলে। বাচ্চা নিয়ে বাসায় বসে থাকার চেয়ে কিছু পড়াশুনা শুরু করা দরকার। বলা হলো “বিসিএস দাও”, দিলাম।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হওয়ার পর খেয়াল করলাম ছেলের কথা বলার ইচ্ছাই কমে গিয়েছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাইনা, চোখের দিকে তাকায় না, অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশে না, বাসায় মেহমান আসলে ঘড়ের দরজা বন্ধ করে দেয়, মানুষের ভিড় পছন্দ করেনা, মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। সবাই বললো, “এটা কিছু না, কিছু বাচ্চা কম কথা বলে, ঠিক হয়ে যাবে, তুমি ভাইবার প্রিপারেশন নাও আর পাশাপাশি আপাতত প্রাইভেট জব করো”। ভাইবা দিলাম, প্রাইভেট জবে ঢুকলাম। কিছুদিন পর দেখলাম ছেলে কথাই বলেনা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমার সদা হাস্যজ্জল ছেলেটা শুধু কাঁদছে। অটিজমের সব লক্ষণ লক্ষ্য করলাম তার মধ্যে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো, তার চাইতেও বেশি অসহায় মনে হলো আমার ছেলেকে। একবার চিন্তা করে দেখুন তো, আপনার সন্তান আপনাকে বলতে পারছে না যে সে কি খেতে পছন্দ করে, সে কোথায় কীভাবে ব্যথা পেয়েছে, তার কখন কি করতে ইচ্ছে করে! চিন্তা করে দেখুন তো যে আপনার সন্তান হঠাৎ আপনাকে ”মা” বা ”বাবা” বলে ডাকা বন্ধ করে দিয়েছে! আপনার অনুভূতি কেমন হতে পারে তখন?
ছেলেকে পরিবারের মানুষদের কাছে রেখে চাকুরীস্থলে যেতাম। কেন জানি ছেলের নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা গড়ে উঠলো। তখনো সবার এক কথা, ওর এসব থেরাপির দরকার নেই, ওর ডিসিপ্লিন দরকার। সোজা বাংলায় যাকে বলে ”মাইরের উপরে ঔষধ নাই”। প্রফেশনাল মতামত নিলাম। সেখানে বলা হলো মায়ের সাথে বিচ্ছেদজনিত কারণে অস্থিরতা। এসব অস্থিরতার একমাত্র উপায় নাকি ছেলে যখন নিজেকে আঘাত করবে সেই সময় তাকে এড়িয়ে চলা। অর্থাৎ “দেখেও না দেখার ভান করা”। আরো বলা হলো প্রি-স্কুল বা ডে-কেয়ারে অন্যান্য শিশুদের সান্নিধ্যে রাখার কথা। ছেলের স্কুলে পড়ার বয়স তখনো হয়নি, তাই আমি প্রফেশনালদের মতামতের কাগজ সহ আলোচনা করেই ডে-কেয়ারে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে কিছুদিনপর বলা হলো, আমার ছেলে নিজেকে ও টিচারদেরকে আঘাত করছে। তাই ওকে সবার সাথে না রেখে আলাদা রাখা হচ্ছে ওর নিজের পছন্দের খেলনা দিয়ে। লক্ষ্য করলাম, ওকে সবার সাথে মিশানোর কোনো চেষ্টাও করা হচ্ছে না। টিচাররাও পারোতো পক্ষে ওকে এড়িয়ে চলছে। যেন ও কোনো ভয়ঙ্কর প্রাণী! সেই সাথে তার ঘরে, বাইরে যেখানে সেখানে নিজেকে আঘাত করার প্রবণতাও বেড়েই চলেছে।
৪ এপ্রিল, ২০১৮। ছেলে ডে-কেয়ার থেকে তার বাবার সাথে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছে। সেদিন রোগীর চাপ বেশি থাকায় আমি বাসায় ফিরতে পারিনি তখনো। সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট, মাত্র অফিস থেকে বের হয়ে বাস ধরার জন্য রাস্তা পাড় হচ্ছি। আমার শ্বাশুড়ি মা ফোন দিলেন। তার কথা শুনে আমার চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। ট্রাফিক জ্যামের গাড়ির এতো কোলাহলের কিছুই কানে ঢুকছিলো না। শোকেস থেকে হয়তো পছন্দের কিছু বের করতে গিয়েছিলো নিজে নিজে আর তখন মনের ভাব প্রকাশে অপারগ আমার ছেলের হাতের উপরের অংশে (বাহুতে) শোকেসের দরজার গ্লাস ভেঙ্গে পড়ে মাংসপেশী থেতলে গেছে। ফোন পাওয়ার সাথে সাথে দিশেহারা হয়ে গেলাম। কারণ রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। জ্যামে বসে অপেক্ষা করার ধৈর্য্য কি সেদিন সইবে? দৌড়াতে থাকলাম যেই হাসপাতালে তাকে নেয়া হলো সেই হাসপাতালের দিকে। মনে হচ্ছিলো অদম্য শক্তি শরীরে জেঁকে বসেছে। গুলশান-২ থেকে মহাখালী ১০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস দৌড়। হাসপালাতে যেয়ে দেখি সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। তখন সিএনজি অটোরিকশা নিলাম। ট্রাফিক পুলিশকে হাতজোড় করে অনুরোধ করে বন্ধ রাস্তা খুলে নিয়ে শর্টকাট রাস্তায় ঢুকালাম। পথিমধ্যে এমন এক জায়গায় পরলাম যেখান থেকে সম্পূর্ণ রাস্তা উন্নয়নকার্যে খনন করা হয়েছে। সেখান থেকে আবার পান্থপথ পর্যন্ত দৌড়। যেই ক্ষত বিক্ষত রাস্তায় একটা মানুষেরও আনা গোনা নেই সেখান দিয়ে দৌড়ে পান্থপথের সেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম কিভাবে, তা আজও আমি মনে করতে পারি না, তা আজও আমার কাছে রহস্য! হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে দেখি বাবার কোলে ছেলে কাঁদতে কাঁদতে দম নিতে পারছে না। আমাকে দেখে লাফিয়ে কোলে এসে এমনভাবে হাসি দিলো যেন তার কোনো কিছুই হয়নি। সেখান থেকে আবারো ধানমন্ডিতে অন্য আরেকটি হাসপাতালে রেফার করা হলো। সেদিন তার হাতে ১৪ টা সেলাই পড়েছিলো।
এই ঘটনায় নতুন কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, আমার ছেলের ব্যথার কোনো অনুভূতি নেই। ওর শরীর থেকে বের হওয়া রক্তকে ও ময়লা মনে করেছিলো। ও কারো জোড় করে জড়িয়ে ধরা পছন্দ করতো না, তাই ওর বাবা ওকে ধরেছিলো দেখে ও ভীষণ রাগে কান্না শুরু করেছিলো। অপরিচিত মানুষ রক্ত বন্ধ করার জন্য জোড় করে ব্যান্ডেজ পড়িয়ে দিয়েছিলো। তাই রাগ, ভয় আর ঘৃণা সব একসাথে পেয়ে বসেছিলো ওকে। পরবর্তীতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা নিয়ে পড়াশুনা করে বুঝলাম যে আমার ছেলে ব্যথার কোনো অনুভূতি পাচ্ছেনা। আর তাই সে নিজেকে আঘাত করার সময় এতো জোড়ে আঘাতের পরও কান্না করছে না, বরং হাসছে। বুঝলাম যে তার শরীরে বিভিন্নরকমের সেন্সরী-মোটর বা উত্তেজনা জনিত কারণে সমস্যা হচ্ছে, যা তার আচরণকে প্রভাবিত করছে।
জেদের বশে কাউকে তোয়াক্কা না করে ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার এবং থেরাপিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী চলা শুরু করলাম। বিশেষ স্কুলেও ভর্তি করিয়ে দিলাম, কারণ ওর বিশেষ আচরণগুলোর জন্য দরকার বিশেষ ব্যবস্থাপনা। যা তাকে চলমান ধারার স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে দেয়া সম্ভব না। এর মধ্যে ছেলের বাবা প্রবাসী হলেন উচ্চশিক্ষায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে। তার স্বপ্ন প্রবাসেই স্ত্রী-সন্তানকে ভালো একটা ভবিষ্যৎ উপহার দেয়া। ২০১৯ এর শেষের দিকে নিশ্চিত ডায়াগনোসিস হলো যে আমার ছেলের মডারেট অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজওর্ডার আছে। যিনি ডায়াগনোসিসের দায়িত্বে ছিলেন নিঃসন্দেহে তিনি সঠিক পদ্ধতিতে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে কাজটি করেছেন। তিনি খুব সহজ ভাবে এটাও বলে দিলেন যে এধরণের শিশুদের ব্যবস্থাপনায় টাকা ব্যয় করে তেমন কোনো লাভ হয় না। যখন একজন মা আশার আলো খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ঠিক ঐ মূহুর্তে এই ধরণের বাক্য কি ধরণের অনুভূতি সেই মায়ের মনে জাগাতে পারে বলে মনে হয় আপনাদের?
বিশেষ স্কুলে ভর্তি করার প্রথম মাসে কিছু অসংলগ্ন ঘটনা লক্ষ্য করলাম। কমপ্লেইন করার পর দ্বিতীয় মাসে যে টিচার দেয়া হয়েছিলো তাঁর আবির্ভাব হয়েছিলো অনেকটা ফেরেশতার মতন। সে আমার ছেলের দ্বিতীয় মা হয়ে উঠলো। যখন আমার ছেলে নিজেকে ও অন্যকে আঘাত করার প্রবণতা ছেড়ে দিলো তখন আমি তাকে বিশেষ স্কুলের পাশাপাশি একটি চলমান ধারার স্কুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অনেক স্কুল ঘুড়লাম। কিছু স্কুল থেকে সরাসরি না করে দিলো কোনো অ্যাসেস্মেন্ট ছাড়াই, কারণ তাদের বিশেষ শিশুর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কিছু স্কুলে অতিরিক্ত মাসিক বেতন দিয়ে রাখতে হবে বলেছিলো। একটি স্কুলের জনৈক পোস্টধারী বললেন, ”ওতো পাগলের মতো করছে” (কারণ আমার ছেলে তার অফিসের এক কোণায় চকলেট দেখে দৌড়ে গিয়েছিলো)। বিভিন্ন ধরনের অসম আচরণের মুখোমুখি হলাম। দাঁতে দাঁত চেপে এসব আচরণ মেনে নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম বাসার কাছে কোনো স্কুলে যেখানে খুব পড়াশুনার চাপ নেই, শুধু খেলার মাধ্যমে প্রি-স্কুল কার্যক্রম চলে এমন কোথাও একটু বেশি টাকা দিয়ে ভর্তি করে দিবো। এমন একটা স্কুলে ভর্তি করানোর কিছুদিন পর আবারো তার নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা ফিরে এলো। এখানে আবারো সেই একই চিত্র দেখলাম। ওকে ক্লাসের অন্য বাচ্চাদের সাথে কাজে উৎসাহি করে তুলতে কোনো সাহায্য করা হচ্ছে না। সবার সাথে না রেখে স্কুলের পরিচ্ছন্নকারীর কাছে রাখা হয়েছে ওর পছন্দের খেলনা দিয়ে, যেন সে ক্লাসে কোনো ব্যাঘাত না ঘটায়। সেখানেও মনে হলো যেন আমার ছেলে কোনো অচ্ছ্যুত প্রাণী।
ছেলে আমার গত ২ বছর ধরে ইন্টারভেন্সনের মধ্যে আছে। বিশেষ স্কুলটি লকডাউনের কারণে যদিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে থেরাপিউটিক ইন্টারভেন্সনগুলো নিয়ে চলেছি। আমার ছেলের বিশেষ শিক্ষককে হোম টিউটর হিসেবে রেখেছি। আমার আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি, বিসিএস এর দিকেও আর আগাইনি। অনলাইনে এবং বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কশপ এ্যাটেন্ড করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে ছেলেকে সাহায্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে কোনো অনভিজ্ঞ মানুষের বা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী চেতনার মানুষের কোনো আজগুবী উপদেশ কানে তুলি না। আপন মানুষের কাছে শুনেছি আমি নাকি কখনো আমার ছেলেকে ভালো করতে পারবো না কারণ নিজের মতো চলি। সবার কটুক্তি উপেক্ষা করে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে চলছে আমার সন্তান আলহামদুলিল্লাহ্। নিজের মতো করে তার নিজের প্রতিভা বিকাশের স্বাধীনতা আমি তাকে দিয়েছি।
“নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজওর্ডার” এবং ”একীভূত সমাজ ব্যবস্থা”-কে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছে পরিচিত করাতে চাই। নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজওর্ডারের মানুষদের একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অবদান রাখার অসীম সম্ভাবনার জায়গা আছে। এ ব্যপারে সমাজের নীতিনির্ধারকদের সাথে গঠনমূলক কাজ করতে চাই। তাই এই বিষয়ে নিজেকে একটু একটু করে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। “নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজওর্ডার” এবং ”একীভূত সমাজ ব্যবস্থা” -এর উপর পেশাজীবি প্রশিক্ষণ নিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে প্রশিক্ষণরত আছি ইন্স্টিটিউট অব পেডিয়েট্রিক নিউরোডিজওর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা সকল সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বাঁধন ভেঙ্গে আমার সন্তানের ন্যায্য অধিকার আদায়ের চাবিকাঠি। সব বিশেষ বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হবে, শিক্ষিত হতে হবে নিজের ও সন্তানদের মানসিক ও সামাজিক মুক্তির উদ্দেশ্যে। এগিয়ে চলতে হবে নতুন এক পৃথিবীর নতুন এক ভোরের পথে। স্বপ্ন সার্থক হবে কবে কেউ জানিনা, কিন্তু সমাজ বদলের এই শুরুটা করতে হবে এখন থেকেই।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আমার সন্তান আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে আমার জন্য একটি আশীর্বাদ। যাকে রক্ষা করে সঠিক পথে দু’জন মিলে চলা এবং পৃথিবীকে সুন্দর কিছু দেয়া আমার দায়িত্ব। আমি নিজেকে আরো ধৈর্য্যশীল করে তুলছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাবো কিভাবে, তা শিখেছি। পরিকল্পনা দাঁড় করাতে শিখেছি। একজন মানুষের অক্ষমতাকে সম্মান দেখিয়ে সক্ষমতাকে নিয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে কিভাবে আগাতে হবে, সেটা জেনেছি। আমার ছেলে ইয়েসাদের পারদর্শীতা আর তা নিয়ে তার আত্মবিশ্বাসের খোরাক দেখে নিজেকে নিজে প্রতিদিন বলি, ”আমি আত্মবিশ্বাসী আমি পারবো, আমাকে পারতে হবে।” ইয়েসাদকে পেয়ে আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি। অন্যরকম কিছু করার উদ্দেশ্য।
লিখেছেন:
ডা. আইরিন বিনতে আজাদ
জেনেরেল ফিজিশিয়ান (এমবিবিএস)
প্যারেন্ট এডুকেটর, কিডিরকস স্পেশাল স্কুল
সার্টিফাইড প্যারেন্টিং কোচ (ডেভেলপমেন্টাল, ইফেক্টিভ এ্যান্ড এনকারেজিং প্যারেন্টিং, ভারত)
ট্রেইন্ড ইন ডিজ্যাবিলিটি, অটিজম এ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন (আই ই আর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজওর্ডার কোর্সে প্রশিক্ষণরত (ইপনা, বি এস এম এম ইউ)
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে