অনেক সময় নিজের কাছেই নিজের আবেগ অনুভূতিকে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মনের ভাবনা আমাদের মস্তিষ্ক থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিপরীত হয়। মন থেকে মস্তিষ্ককে আমরা বেশী গুরুত্ব দেই এবং এই কাজ আমাদের আরও বেশী মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং চাপের মাঝে ফেলে দেয়।
অনেক সময় নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তকে আমরা নিজেরাই মেনে নিতে পারিনা। হয়তো আমরা মন থেকে এক রকম ভাবছি কিন্তু আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আমাদের বিবেক, বুদ্ধি আমাদের সেই অনুভূতিকে মান্যতা দিতে পারছেনা। আমাদেরকে মনের বিপরীত কোন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আপনার সাথে কি এমনটা হয়েছে কখনো? যদি হয়ে থাকে তাহলে বলা যায়, আপনি একা নন। এমন বিড়ম্বনায় আমাদের সবাইকেই কখনো না কখনো কম বেশী পড়তে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষই নিজেরা নিজেদের আবেগের সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন। নিজের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে অনুভূতিকে স্বীকার করে নিতে পারছেনা। তারা নিজেদের আবেগকে চেপে রেখে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সঠিক বলে মনে করে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। এভাবে নিজের আবেগকে অগ্রাহ্য করলে চিত্ত চাঞ্চল্য কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। আমাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও এতে পরিস্থিতি আরও খারাপই হয়।
অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মনে হয় মন থেকে সিদ্ধান্ত নিলে বা আবেগের বশবর্তী হয়ে কিছু করলে সেটি হয়তো আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। আমরা ভাবি অনেকেই তো পারে, আমরা কেন পারবোনা। যুক্তি থেকে সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো আমরা বেশী লাভবান হবো এবং নিজেদের ইচ্ছেকে বা আবেগকে খুব সহজ ভাবেই দূরে সরিয়ে রাখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হয় ঠিক এর বিপরীত। মনের বিপরীতে বা আবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাজ বা বুদ্ধির চাপে অন্য কাজ করলে সেটি আমাদের মনস্তত্ত্বের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব অনেক চেষ্টা করেও এড়িয়ে যাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে যতই একজন মানুষ নিজের আবেগ বা অনুভূতিকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে, ফল হয় তার ঠিক উলটো। আর এগুলো কারণ হয়ে দাঁড়ায় মানসিক অশান্তির।
নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করে নিজের সাথেই লড়াই না করে বরং মনের ভাবকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং স্বীকার করে নিতে হবে। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা গুলো স্পষ্ট হলে এই পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম চরণ আমরা সম্পন্ন করতে পারি।
১) নিজের অনুভূতির জন্য বা ভাবনার জন্য নিজেকে অসম্মান বা সমালোচনা করলে সেটি নিজের তেমন কোন উপকারে আসেনা।
২) নিজের মনের অনুভূতিকে শারীরিক কোন ব্যাথা বেদনার সাথে তুলনা করুন তো। আপনি যদি পড়ে গিয়ে আঘাত পান, তবে কি বলবেন যে ব্যাথা পাওয়া আপনার উচিৎ নয়? এমনটা হতেই পারে যে আপনি ব্যাথা পেতে চাইছেন না, কিন্তু এজন্য নিজেকে দায়ী করা বা ব্যাথাকে অস্বীকার করা কি আদৌ সঠিক? এমন ভাবেই, শারীরিক অনুভূতির মতো করেই মানসিক অনুভূতিকে দেখার প্রয়াস করুন।
৩) যখন এমন মনে হবে যে আপনি আপনার আবেগ অনুভূতি নিয়ে সংশয়ে পড়ে গেছেন, তখন এটা ভাবার প্রয়াস করুন যে মানুষ মাত্রই আবেগ অনুভূতি থাকবে। সেটি আপনার কাছে ঐ সময়ে সঠিক মনে নাও হতে পারে। কিন্তু সেটিকে মুছে ফেলার সুযোগ নেই।
৪) মনে রাখবেন, আপনার ব্যবহার বা কর্মের সাথে সব সময় যে আপনার আবেগ অনুভূতির সংগতি থাকবে এমনটা নয়। সব ধরণের আবেগকেই স্বীকার করে নিতে হবে। সেটি আমরা কিভাবে প্রকাশ করছি- বিবেকবান হয়ে নাকি বিবেক বর্জিত হয়ে, সেটিই মূল বিষয়।
এসব কিছু অবশ্যই আপনাকে মেনে নিতে হবে, স্বীকার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, যদি আপনার মনে হয় আপনি আপনার আবেগ অনুভূতিকে প্রকাশ করবেন না, তাহলে অবশ্যই প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু এজন্য নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করবেন না। নিজের মনের উপর চাপ প্রয়োগ করবেন না।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে