আপনি কি আপনার সম্পর্ক নিয়ে খুশি নন? এই অসন্তোষের কারণ হতে পারে সঙ্গীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা।
সম্পর্কে সঙ্গীর কাছে আমাদের চাহিদার শেষ নেই। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এটা স্বাভাবিক যে একজন মানুষ তার সঙ্গীর কাছে সততা, নির্ভরতা, সাহচর্য, সহানুভূতি, কর্তব্য পরায়ণতা ইত্যাদি প্রত্যাশা করবে। একজন মানুষ এটাও চাইবে যে সব সময় না হলেও মাঝে মধ্যে আপনার মতের এবং ইচ্ছার সাথে তার সঙ্গী সহমত হবে এবং তার ইচ্ছেকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবে। হোক এটি তার মানসিকতা বা পরিবার, সন্তান, আর্থিক অবস্থা বা নিজেদের মাঝে আন্তরিক সময় অতিবাহিত করার মতো বিষয় গুলি নিয়ে তার সামগ্রিক চিন্তা ভাবনার ফলাফল, তিনি বিশ্বাস করেন যে তার সঙ্গী তাকে সব বিষয়েই সমর্থন করবে, সাহায্য করবে। আর আপনার এসব চাহিদার সাথে যদি আপনার সঙ্গী সহমত না হন বা এগুলো অপূর্ণ থাকে তখনই তৈরি হয় মানসিক দূরত্ব এবং মনে হয় যে এমন সম্পর্ক একদমই অর্থহীন যে সম্পর্ক থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে চান।
সাধারণ ভাবে এমন অসন্তোষ উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো ছাড়াও আরও অনেক ভাবেই সৃষ্টি হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে মতভেদ যেমন, মাস্ক পরতে অস্বীকৃতি, অনলাইনে অনেক বেশী সময় অতিবাহিত করা বা এরকম বিভিন্ন কাজ যা প্রতিনিয়ত আপনার ইচ্ছেকে বা আপনার চিন্তা ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করছে। এভাবে প্রতিনিয়ত আপনার হয়তো মনে হতে পারে সম্পর্কের সব প্রতিশ্রুতি আপনার সঙ্গী পালন করছেনা যেটি আপনার মতে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানসিক অসন্তোষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ভাঙনের কারণ গুলোর মধ্যে সব থেকে পরিচিত এবং অন্যতম বড় কারণ। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে দুই ধরণের অসন্তোষ সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায়। যেমন, কখনো কখনো দেখা যায় একজন সঙ্গী কোন কাজের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট নয় যা তার বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আবার তার সঙ্গীর বিভিন্ন আচার আচরণ বা অভ্যাসের প্রতি অসন্তোষ যা তার বিভিন্ন কাজের প্রতি অসন্তোষের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। যখন আপনার সঙ্গী আপনাকে অসন্তুষ্ট করে বা আপনি অগ্রাহ্যতা অনুভব করেন তখন আপনি বিভিন্ন ভাবে এর প্রতিবাদ করেন এবং সম্পর্কের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন। আর এভাবেই সঙ্গীর সাথে ধীরে ধীরে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় এটি বিচ্ছেদের মতো ভাবনার উদ্রেক করে।
গবেষণায় দেখা গেছে একজন সঙ্গীর মনে এ ধরণের অভিযোগের নেপথ্যে যুক্তি বা তর্কের থেকে বেশী যে বিষয়টি কাজ করে সেটি হল নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা এবং অনুভূতি। আপনি হয়তো আপনার সঙ্গীর ছোট ছোট অস্বীকৃতি গুলিকে নিজের দৃষ্টি কোণ থেকে বিচার করে অনেক বেশী সংবেদনশীল করে তুলছেন যা আপনার মাঝে অনেক বেশী নেতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি করছে। এ ধরণের চিন্তা ভাবনা ধীরে ধীরে আপনার অনুভূতিকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে যা বিষণ্ণতা সহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সঙ্গী প্রতি অবিস্বাস, অনাস্থা, ঘৃণা, এবং বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করে। আর এই সমগ্র নেতিবাচক অবস্থা এক সময় সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
মনস্তত্ত্ব বিদগণের মতে এ ধরণের সমস্যা এড়াতে একমাত্র ইতিবাচক চিন্তাধারার বিকাশ এবং সহনশীলতাই সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এমন অনেক সময়ই হয় যখন আমাদের নিজেদের চিন্তা ভাবনা অনেক ছোট বিষয়কেও অনেক বড় করে উপস্থাপন করে এবং আমরা ধৈর্যহীন হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আর মানসিক অসন্তোষ সব ধরণের সম্পর্কেই বিদ্যমান। যেহেতু দুজন মানুষের চিন্তা ভাবনা এবং মানসিকতা ভিন্ন ভিন্ন হয় তাই সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকে থাকতে পারেনা। তাই সর্ব প্রথম আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা ভাবনায় বদল আনতে হবে। আমাদের সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সম্পর্ক ভাঙ্গার নয়, বরং টিকিয়ে রাখার প্রতি মনযোগী হতে হবে।
সম্পর্কের খারাপ অভিজ্ঞতা গুলি অনেক সময়ই আমাদেরকে হতাশাগ্রস্ত করে ফেলে। এই হতাশা এবং অসন্তোষকে আমরা যদি সম্পর্ক নির্বাহেরই একটা অংশ হিসেবে দেখতে পারি তাহলে আমরা আরও বেশী অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন আচরণ করতে পারবো এবং আমাদের মন থেকে এই বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা দূরীভূত হয়ে সম্পর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে