আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার মতো চিন্তা ভাবনার সাথে লড়াই করছে তাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ সহযোগিতা এবং পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।

আমরা সত্যিই অসহায় বোধ করি যখন জানতে পারি আমাদের খুব কাছের কেউ আত্মহত্যার কথা ভাবছে। এ ধরণের অভিজ্ঞতা আমাদের মনে যেমন বিভিন্ন আশংকার জন্ম দেয় ঠিক তেমনি সংশয়েও ফেলে দেয় এটা ভেবে যে এখন আমাদের ঠিক কি করা উচিৎ।

আমাদের পরিচিত অপরিচিত এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যদি এ ধরণের প্রবণতাকে সঠিক সময়ে রোধ করা না যায় তাহলে এর ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। তাই আত্মহত্যার প্রবণতাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ঠাণ্ডা মাথায় এটি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মনস্তত্ত্ববিদগণ বলেন, কেউই হুট করে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আত্মহত্যা করার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে তাকে বেশ কিছু মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সবার কাছেই নিজের জীবন এবং সুখ স্বাচ্ছন্দ্য মূল্যবান হয়ে থাকে।

একজন মানুষ যখন সেই মূল্যবান সবকিছু ত্যাগ করতে চায় অবশ্যই এর পেছনে কোন বড় কারণ থাকে, যা তাকে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে এমন করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। অনেকেই জীবনের উত্থান পতনকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে শেষ করে দেবার মতো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।

আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই সময়কাল একদম সংক্ষিপ্তও হয়না। এই সময়ের মধ্যে যদি তার আশেপাশের মানুষ, তার বন্ধু বান্ধব ও পরিবার পরিজন তাকে মানসিক সাপোর্ট প্রদান করতে পারে এবং তার মন থেকে এই দুর্ভাবনা গুলো দূর করতে পারে তাহলে অবশ্যই এই চরম পরিনতি থেকে তাকে বিরত করা সম্ভব।

নিচে কিছু কার্যকরী কৌশল প্রদান করা হল, যা আত্মহত্যা প্রবণতা রুখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সতর্কীকরণ নির্দেশক গুলো চিহ্নিত করা

আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হল সেই সময়টা চিহ্নিত করা, যখন কারও মনে এ ধরণের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠতে থাকে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে তার আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা, দৈনন্দিন জীবন শৈলী এবং মানসিক অবস্থা থেকে আত্মহত্যার মতো নেতিবাচক কোন মানসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সেটি প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়।

প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ

কারও মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা চিহ্নিত হলে সেটি প্রতিরোধে বিভিন্ন গবেষণা ও মনস্তত্ত্ববিদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা নির্দেশিত উপায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। তাদের মন থেকে এ ধরণের চিন্তা ভাবনা দূর করতে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এবং ওষুধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাদের মনোযোগ এ ধরণের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা থেকে সরিয়ে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে স্থানান্তরের প্রয়াস করা যেতে পারে।

চারপাশের পরিবেশ নিরাপদ করা

আত্মহত্যা প্রবণ একজন ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে। তারা নিজেদের ক্ষতি সাধন করতে পারে এমন কোন কিছু তাদের নাগালের মধ্যে রাখা যাবে না। এতে করে চারপাশের পরিবেশ থেকেও তারা আত্মহত্যার মতো কোন কিছু করার মানসিক প্রণোদনা পাবেনা।

তার মন ভালো রাখা

একজন আত্মহত্যা প্রবন ব্যক্তির মানসিক অবস্থা কখনোই সুস্থ মানুষের মতো হবে না। তার মধ্যে হতাশা, বিষণ্ণতা, বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মতো অনুভূতি প্রতিনিয়ত কাজ করে।

তাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল তার মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধনের প্রয়াস করা। তার মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করা, যেন তার মন থেকে হতাশা, বিষণ্ণতার মতো নেতিবাচক অনুভূতি গুলো দূর হয়ে যায়।

প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার অধিকারী হয়। তাই কোন ব্যক্তির মধ্য থেকে আত্মহত্যা প্রবণতা দূর করতে আগে তার মানসিক অবস্থা বুঝতে হবে।

কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ বা বাধ্য করে নয় বরং সেই মানসিক অবস্থার পরিবর্তন থেকে ধীরে ধীরে তাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করতে হবে। আর তাহলেই আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতি রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।

লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/behavior-briefing/202109/how-develop-suicide-safety-plan

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous article১০টি স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য
Next articleকিশোর বয়সের প্রেম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here